ইফতারে কি কি খেতে হয়: একজন মানুষের দৈনন্দিন প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ কিলো ক্যালরি সমান পরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু রমজান মাসে এই পরিমাণটি ১০০০ থেকে ১৫০০ কিলো ক্যালরি হলেই যথেষ্ট।
কারণ এই সময়ে রোজার অল্প পরিমাণ খাবার গ্রহণ করলেই শরীরে অটোফেজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর কোষসমূহ পরিষ্কার হয়। আর এ কারণেই অন্যান্য মাসে যে পরিমাণ খাদ্য আমাদের প্রয়োজন হয় রমজান মাসে তার চেয়েও অনেক কম পরিমাণ খাদ্য আমাদের প্রয়োজন হয়।
তাই সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে আপনি কি খাবেন এই বিষয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। না হলে আপনি খুব অল্প সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। চলুন জেনে নেই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনের ইফতারে আমরা কি পরিমানে কোন খাবার গুলো খেতে পারব সে সম্পর্কে।
ইফতারে কি কি খাওয়া যাবে
আমরা যখন ইফতারের সময় সামনে ইফতার নিয়ে বসবো তখন একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, তাহল ইফতারে যেন আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি থাকে। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই ৬০০ কিলো ক্যালরি আমাদের শরীরের জন্য পর্যাপ্ত। চলুন এবারে জেনে নেই ইফতারে কি কি খেতে হবে ।
খেজুর
ইফতারে একটি জনপ্রিয় ও পছন্দনীয় খাদ্য খেজুর। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। খেজুর একটি শর্করা জাতীয় খাদ্য। চারটি মাঝারি সাইজের খেজুরে প্রায় ১০০ কিলো ক্যালরি শর্করা জমা থাকে। তাই আপনি প্রতিদিন ইফতারে চারটি থেকে পাঁচটি খেজুর খেতে পারেন। এক্ষেত্রে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যেন অবশ্যই নির্দেশনা অনুসরণ করে।
কলা
আপনি অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের ইফতারের তালিকায় একটি কলা রাখবেন। কারণ একটি কলার মধ্যে প্রায় ১০৫ কিলো ক্যালরি থাকে। যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকারী।
ছোলা ও বুট
ইফতারের সময় আপনি ছলা বুট রাখতে পারেন। কারণ ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ছোলা বুটে প্রায় ১৮০ ক্যালোরি শক্তি জমা থাকে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন এই পরিমাণের বেশি খাওয়া যাবেনা। অন্যথায় পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। কারণ ছোলা হজম হতে কিছুটা সময় নেয়।
ডিম
আপনি চাইলে একটি ডিমও রাখতে পারেন আপনার ইফতারের তালিকায়। কারন একটি ডিমে প্রায় ৮০ ক্যালোরি শক্তি জমা থাকে।
অন্যান্য ফল
আপনি চাইলেই এসব কিছুর পাশাপাশি আপনার পছন্দের ফলগুলো ইফতারে তালিকায় রাখতে পারেন। এর মধ্যে তরমুজ, আপেল, কমলা অন্যতম। এই ফলগুলো আপনার সারাদিনের পানি শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন শরবত
ইফতারে আপনি ডাবের পানি, ইসুববুলের ভুষি, লেবুর শরবত সহ আপনার পছন্দের পানীয় তৈরি করতে পারেন। যা আপনার পানি শূন্যতাকে দূর করতে সহায়তা করবে।
ইফতারি যা খাওয়া যাবে না
আমরা অনেকেই রয়েছি ইফতারে একটু ভাজাপোড়া বেশি খেয়ে থাকি। আসলে সারাদিন রোজা থাকার পর ইফতারের সময় তেলযুক্ত খাবার দিয়ে ইফতার করলে উপকারের চেয়ে বেশি অপকার দেখা যায়। নিচে ইফতারের কোন কোন খাবার গুলো পরিহার করতে তা দেওয়া হল।
তেল যুক্ত খাবার
ইফতারে অবশ্যই একটি বিষয় মনে রাখবেন কখনোই অতিরিক্ত তেলেভাজা যেমন আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা। কারণ এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে।
টক জাতীয় ফল
ইফতারে কি কি খেতে হয় আমরা অনেকেই রয়েছি ইফতারের সময় টক জাতীয় ফল খেতে পছন্দ করি। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখবেন টক জাতীয় ফল ইফতারে সময় খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
কারণ টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিড থাকে। আপনার যদি এ জাতীয় ফল পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই রাত্রে খাবার পর খেতে পারেন। আরেকটি বিষয় কখনোই ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। এতে বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
টমেটো
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের উপস্থিতি থাকে। যা ইফতারের সময় অতিরিক্ত খেলে পেটের জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই ইফতারের সময় টমেটো না খাওয়াই ভালো।
ঝাল খাবার
ঝাল খাবার অতিরিক্ত খেলে পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার বৃদ্ধি করে। ফলে পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। তাই ইফতারের সময় ঝাল খাবার পরিহার করতে হবে।
গরম জাতীয় খাবার
গরম জাতীয় খাবার যেমন চা-কফি ও ইত্যাদি পানীয় পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময়ে গরম জাতীয় এই সমস্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
যেহেতু পুরো একটি বছর পর মুসলিম জাহানের কাছে রমজান মাস অত্যন্ত পবিত্র এবং বরকত ময় হয়। তাই এই মাসে নিজেকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত নির্দেশনা গুলি আশা করি আপনারা মেনে চলবেন। আর এই নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে আপনারা রমজান মাসের ৩০ টা রোজা রাখতে পারবেন বলে আমরা আশা রাখি।