এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ইতিহাস! ক্রিকেট প্রেমিক বাংলার মানুষ এশিয়া কাপকে মনে করে এ উপমহাদেশের বিশ্বকাপ। কেননা এ এশিয়া কাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এর উত্থান। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে এশিয়া কাব অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ১৪ তম বারের মত এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করবে। এর আগেও একবার এশিয়া কাব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে যেখানে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেনি। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পদচারনা শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে।
আজকে আমরা জানবো এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পদচারণা ও এর উত্থান নিয়ে। যারা বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমিক ভক্ত রয়েছে আজকের পোস্টটি হতে পারে তাদের জন্য এক বিরাট গৌরবের বিষয় তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা যায়।
এশিয়া কাপ ও বাংলাদেশ
এশিয়া কাপ ১৯৮৬
১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত অংশগ্রহণ করে। সেবারে দলের সংখ্যা ছিল ৩ টি। স্বাগতিক শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান । রাজনৈতিক কারনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ভাল না থাকার কারনে ভারত সে বারে অংশগ্রহণ করেনি । তিন জাতির ঐ টুর্ণামেন্টে ২ টি ম্যাচের একটিও জয় পাইনি বাংলাদেশ। সেবারে কাপ ঘরে তুলে স্বাগতিক দল শ্রীলংকা।
এশিয়া কাপ ১৯৮৮
বাংলাদেশ প্রথম বারের মত ১৯৮৮ সালে এশিয়া কাপের আয়োজক দেশের স্বীকৃতি পায়। সেবারে অংশগ্রহণ করেছিল ভারত সহ ৪ টি দল। ১৯৮৮ র এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ৩ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু গত বারের মত এ বারেও সবকটি মাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। ঐ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। কিন্ত আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে শুনাম কুরিয়েছিল বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ১৯৯০
১৯৯০ এর এশিয়া কাবকে বলা হয় অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ। কেননা ১৯৯০ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা ছাড়াও সেবার এই আসরে অংশ নিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আরব আমিরাতে হয়া ঐ এশিয়া কাপে ২ টি ম্যাচ খেলে একটিও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান।
১৯৯০ সালের ২৫ই ডিসেম্বর আবারও অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপ। যেখানে পাকিস্তান অংশগ্রহণ না করলেও বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা মিলে আবারও তিন জাতি টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত করে ভারত। এবং ভারত চ্যাম্পিয়ন হলেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি একটিও ম্যাচ।
এশিয়া কাপ ১৯৯৫
দীর্ঘ ৪ বছর এশিয়া কাব আয়োজন না হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে আবারও শারজাতে বসে এই আসোর। আকরাম খানের নেতৃত্বে সেবারেও সব কটি ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ১৯৯৭
১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপের আয়োজনের দায়িত্ব নেয় শ্রীলংকা। আসরে চ্যাম্পিয়নও হয় তারা। তবে সেবারেও আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচেই হেরে জায়।
এশিয়া কাপ ২০০০
২০০০ সালে বাংলাদেশ পুনরায় এশিয়া কাপের আয়োজক সত্ত্ব পায়। ক্যাপ্টেন পরিবর্তন করে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমিনুল ইসলাম বুলবুল কে কিন্তু সেই কাঙ্খিত জয় আনতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরে জায় সবকটি ম্যাচ।
এশিয়া কাপ ২০০৪
আবারও দীর্ঘ ৪ বছর পর শ্রীলংকার মাটিতে বসে এশিয়া কাপ। সেবারে প্রথম ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ। নিয়মিত চার দলের বাইরে হংকং ও আরব আমিরাত অংশগ্রহণ করায়, হংকং কে ১১৬ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। যদিও পরের সবকটি ম্যাচ হেরেছিল।
এশিয়া কাপ ২০০৮
পাকিস্তানের মাটিতে ৬ টি দল নিয়ে ২০০৮ সালে আবারও অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাব।যেখানে আরব আমিরাতকে হারিয়ে দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেবারে অধিনায়ক ছিল আশরাফুল। খেলেছিল এক দারুন শতক।
এশিয়া কাপ ২০১০
সাকিবাল হাসানকে অধিনায়ক করে ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে পা রাখে বাংলাদেশ। জিতে পারেনি একটিও ম্যাচ। কারন সেবারে বাদ দেওয়া হয়েছিল আরব আমিরাত ও হংকং কে। আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত
এশিয়া কাপ ২০১২
২০১২ সালে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের চেহারাই ছিল ভিন্ন। কেননা সেবারি প্রথম পাকিস্থানের কাছে হারলেও ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথম ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। টানটান ঐ ম্যাচে ২ রানের জন্য হেরে জায় স্বাগতিকরা। ম্যাচটি শেষে অঝরে কেঁদেছিল বাংলার অসংখ্য ক্রিকেট প্রেমিক মানুষ। যা গোটা বিশ্ব দেখেছিল।
এশিয়া কাপ ২০১৪
২০১৪ সালের এশিয়া কাপ আবারও অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে সেবারে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের দল একটি ম্যাচও জিততে পারেনি এমনকি নবাগত দল আফগানিস্তানের কাছেও হেরে যায় বাংলাদেশ ।
এশিয়া কাপ ২০১৬
এরপরের আসর থেকে নতুন নিয়ম করা হয় এশিয়া কাপে। এশিয়া কাপ শুরু থেকে খেলা হতো ৫০ ওভারের কিন্তু ACC সিদ্ধান্ত নেয় পরের বিশ্বকাপ যে ফরমেটে হবে সে ফরমেটে আয়োজন করা হবে এশিয়া কাপ। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
এশিয়া কাপ ২০১৮
২০১৮ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবারো এশিয়া কাপ আয়োজনাছ। সেবারে অংশগ্রহণ করেছিল ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা সহ আরব আমিরাত যেখানে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আরব আমিরাতকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব অর্জন করে। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত সে ম্যাচে বাংলাদেশ এবারেও আর এশিয়া কাপকে নিজেদের ঘরে রাখতে পারেনি। এবারও হেরে যায় বাংলাদেশ আবারো একবার স্বপ্নভঙ্গ হয় টাইগার শিবিরে হৃদয় ভাঙে কোটি ভক্তের।
এশিয়া কাপ ২০২২
২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করেছিল ৬ টি দল এগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, হংকং এবং আফগানিস্তান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সেবারের এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা আর রানার আপ হয়েছিল পাকিস্তান। ২০২২ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পেয়েছিল দুইটি ম্যাচ যেখানে শ্রীলংকার কাছে এবং আফগানিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ২০২৩
মহামারী করোনার কারনে ২০২০ সালের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২৩ সালে এবারের এশিয়া কাপ হবে ওয়ানডে ফরমেটে । কেননা এ বছরের শেষের দিকে ইন্ডিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ODI বিশ্বকাপ যেখানে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করেছে। তাইতো ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজ। কেননা এখানকার মূল স্কোয়ারটিং বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
তো বন্ধুরা এই ছিল বাংলাদেশের এশিয়া কাপের ইতিহাস। এশিয়া কাপের ইতিহাসসহ আরো অন্যান্য দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।