শিক্ষা

বারছে করোনা দেশে নৌ, স্থল ও বিমান বন্দরে সতর্কতা জারি

করোনা

করোনা আবার বাড়ছে কেন! হ্যালো বন্ধুরা বর্তমান সময়ে হঠাৎ করে করোনা প্রভাব বিধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি যেন ২০২০ সালের মতো না হয় তার জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতেছে তার সাথে সাথে বলা হচ্ছে যে, যেসব এলাকাগুলিতে রেড ডট চিহ্নিত করা হয়েছে সে এলাকার জনগণকে আবার স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সরকার বলেছে।

তাহলে চলুন জানা যাক কোন কোন এলাকাগুলোতে সরকার জারি করেছে রেড ডট আর কোন কোন এলাকাগুলোতে কোন পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে চলুন বিস্তারিত জানা যাক,,,

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি ঢেউ এসেছে। এক ঢেউ থেকে আরেক ঢেউয়ের ব্যবধান বরাবরই দুই থেকে তিন মাসের বেশি পর্যন্ত থেকেছে। কিন্তু পঞ্চম বা সর্বশেষ, অর্থাৎ চলতি বছরের জুন থেকে শুরু পঞ্চম ঢেউ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই আবার নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে।

করোনা আবার বাড়ছে কেন, তার উল্লেখিত কিছু কারণ

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এত অল্প সময়ের ব্যবধানে সংক্রমণ বৃদ্ধি এর আগে ঘটেনি। এটিকে ষষ্ঠ ঢেউ বলা যেতে পারে।’গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া করোনার পঞ্চম ঢেউয়ের সংক্রমণ কমতে থাকে জুলাইয়ের শেষ দিকে এসে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই করোনা শনাক্তের হার ৫–এর নিচে নেমে আসে। এবার পঞ্চম ঢেউ শেষ হওয়ার দিকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশা করেছিলেন, পরের ঢেউ আসতে হয়তো আরও বেশি সময় লাগবে। আর সেটি এলেও খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ব্যাপক টিকাকরণকে এ ক্ষেত্রে একটি বড় সুরক্ষা বলে বিবেচনা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে আগস্টের শেষ দিক থেকে করোনা বাড়ছে। আর বাড়ছে দ্রুত হারে। গতকাল বুধবার সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার করোনা–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৭৩। এ সময় করোনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আট সপ্তাহ পর করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫–এর ঘরে গেল।

এ বছর মহামারির ৩৩তম সপ্তাহে অর্থাৎ, ১৫ থেকে ২১ আগস্টে করোনা শনাক্ত এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম হয়েছিল। এর পরের সপ্তাহে অর্থাৎ, ২২ থেকে ২৮ আগস্ট করোনা শনাক্তের হার বেড়ে যায় সাড়ে ২২–এ। এর পরের সপ্তাহে ৭ শতাংশের কিছু বেশি বাড়ে শনাক্তের হার। ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর করোনা বাড়ে ৪৭ শতাংশ। আর সর্বশেষ ১২ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর করোনা শনাক্ত বাড়ে ২৮ শতাংশ।

আগের ঢেউয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এত অল্প সময় এভাবে সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে কেন? এর উত্তরে একাধিক কারণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমটি হলো, সর্বশেষ ঢেউয়ে, অর্থাৎ পঞ্চম ঢেউয়ে পরিপূর্ণভাবে সংক্রমণ না ছড়ানো। দ্বিতীয় হলো, জনসংখ্যার একটি বড় অংশের করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ না নেওয়া। তৃতীয় হলো, অমিক্রনের নতুন ধরনের টিকার মাধ্যমে সৃষ্ট সুরক্ষাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা এবং চতুর্থ, দীর্ঘ মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রে উদাসীনতা।

বাংলাদেশে এযাবত করোনার যে পাঁচটি ঢেউ গেছে, এর মধ্যে সর্বশেষ পঞ্চম ঢেউই অপেক্ষাকৃত কম সময় ছিল। পঞ্চম ঢেউয়ের সময় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও আগের ঢেউগুলোর চেয়ে কম ছিল। যেমন করোনার চতুর্থ ঢেউ, অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অমিক্রন ধরনের প্রকোপে ৯৬৫ জনের মৃত্যু হয়। আর পঞ্চম ঢেউয়ে গত জুন ও জুলাই মাসে মোট মৃত্যু হয় ১৬০ জনের। পঞ্চম ঢেউয়ে সংক্রমণ হয় করোনার অমিক্রন ধরনের দুই উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫–এর প্রকোপে।

এবার করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। সেটি হলো, দেশে সংক্রমণ শুরুর পর প্রতিবারের ঢেউ শুরু হয়েছে নতুন কোনো ধরন দিয়ে। একই ধরনে নতুন ঢেউ হয়নি। কিন্তু এবারই প্রথম অমিক্রনের এই দুই উপধরন দিয়ে নতুন করে একটি ঢেউ সৃষ্টির পথে।

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) গত ২৩ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ৩৮টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে। দেখা যায়, ঢাকা শহরে ২৬টি নমুনাই বিএ.৫ এবং ১২টি নমুনা বিএ.২ উপধরন। প্রথম দিকে বিএ.৫ সবচেয়ে বেশি আকারে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। পরে এর পাশাপাশি বিএ.২ যুক্ত হয়।

এবার এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর একটি কারণ হতে পারে আগের ঢেউ পরিপূর্ণ না হওয়া, এমনটাই মনে করেন মহামারি বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যখন কোনো মহামারি সৃষ্টি হয়, তখন যতক্ষণ সুযোগ থাকে সংক্রমণ ছড়াতেই থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বা স্বাস্থ্যব্যবস্থার কারণে সেই সুযোগ যদি বন্ধ হয়, তবে ভাইরাস নতুন করে সংক্রমণের বিস্তার ঘটানোর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে অতি উদাসীনতা হঠাৎ করে ভাইরাসের বিস্তারে সহযোগিতা করেছে।

মুশতাক হোসেন বলেন, আগেরবার বিএ.৫–এর মাধ্যমে যাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন, এবার তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। কিন্তু যাঁরা হননি, তাঁদের সেই আশঙ্কা আছে। গতবার দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমণ শেষ হওয়ার পেছনে ত্বরিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেওয়ার একটি ভূমিকা থাকতে পারে। ওই দফায় সংক্রমণ পুরোপুরি ছড়াতে না পেরে এখন তা ছড়াচ্ছে। তবে এবার সংক্রমণ খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।

টিকাকে করোনার সুরক্ষার কবচ বলে মনে করা হয়। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭৭ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭১ শতাংশ মানুষ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ২৬ শতাংশ মানুষ। মোট প্রায় ৩০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত। দেশে এখনো করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেননি প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ, দ্বিতীয় ডোজ নেননি প্রায় ৯৪ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ না নিলে টিকার কার্যকারিতা পাওয়ার আশা নেই বলেই বলেন গবেষকেরা।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘সরকারি হিসাবেই বলা যায়, ৭০ ভাগ লোকই বুস্টার ডোজ নেয়নি। যারা দুটো ডোজ নিয়েছে, তার প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেছে। তাই তাদের মধ্যে থেকে সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের পরিস্থিতি গুরুতর হচ্ছে না। যদি ৭০ ভাগ লোক বুস্টার নিত, তাহলে সংক্রমণ কম হতো।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।