কাবা ঘরের ভিতরে কি আছে! ইসলাম ধর্মাবলীয় মানুষের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জায়গা হল কাবা শরীফ। প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য পাড়ি জমান মক্কায়।
হিজরী নববর্ষ কে স্মরণীয় করে রাখতে পহেলা মহরম অর্থাৎ ১৯ জুলাই পুরানো গিলাপটি পরিবর্তন করে পবিত্র কাবা শরীফে লাগানো হয়েছে নতুন গিলাব। প্রায় সারা বছর পবিত্র এই ঘরের দরজা বন্ধ থাকে বলে এই ঘর নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কি আছে নতুন গিলাবে মোড়ানো এই ঘরের ভিতরে আজকে জানবো সে সম্পর্কে।
১৯ জুলাই পুরানো গিলাপটি পরিবর্তন করে পবিত্র কাবা শরীফে লাগানো হয়েছে নতুন গিলাব। এর আগে প্রতিবছর ৯ই জিলহজ সকালে কাবার গিলাব পরিবর্তন করা হতো। তবে গত বছর থেকে সেই নিয়ম পরিবর্তন করে হিজরী নববর্ষের প্রথম দিন কাবার গিলাব পরিবর্তন করা হয়। সৌদির বার্তা সংস্থা এস পি এ থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
কাবা শরীফের অবস্থান
কাবা শরীফ হচ্ছে মুসলিম জাহানের জন্য একটি পবিত্রতম স্থান। এটি সারাক্ষণ পুরো বিশ্ব থেকে ইবাদত করার জন্য মানুষ তাওয়াফ করে থাকে। এছাড়া এটি পৃথিবীর একদম মাঝখানে অবস্থিত যার ফলে বিশ্বের প্রতিটি মুসলমান কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে থাকে।
কাবা ঘরের একটি ইতিহাস হচ্ছে এখানে যখন আল্লাহতালার ইবাদতের জন্য মানুষ গিয়ে থাকে তখন আল্লাহ ঐ সমস্ত মানুষের ইবাদত বেশি কবুল করে নেয় এবং তাদের মনের চাওয়া পাওয়াকে আল্লাহ কবুল করেন। পবিত্র কাবা শরীফের শুধু মানুষ এই তাওয়াফ করে না এখানে ফেরেশতা পশুপাখিরাও তাওয়াফ করে থাকে।
এক হাদিসে বলা হয়েছে আল্লাহতালা ইবাদতে মশগুল ফেরেশতারা একবার এই ঘরে তাওয়াফ করার পর পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত তারা আর এই ঘরে তাওয়াফ করার সুযোগ পায় না। কাবাঘরকে সারা বছরের জন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আর এই কাপড় তৈরি করতে দক্ষ কারিগররা সারা বছর কাজ করে থাকে।
কাবা ঘরের গিলাপ তৈরি
পুরানো গিলাপটি সুরিয়ে হাতে তৈরি নতুন গিলাবটি কাবায় লাগাতে অংশ নেয় ১৩০ জনের একটি দল। সিল্কের নতুন এই গিলাপটি ১২০ কেজি সোনা ও ১০০ কেজি রুপার তার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পবিত্র এই গিলাপ তৈরিতে দীর্ঘদিন সতর্কতার সঙ্গে কাজ করেছে একদল দক্ষ কারিগর। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিল্ক দিয়ে তৈরি গিলাপের এক অংশে সোনার তৈরি তার দিয়ে পবিত্র কুরআনের আয়াতকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই গিলাপের পারিভাষিক নাম কিসওয়া। পুরো বছরজুড়েই বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিলিং মেশিনে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাবার গিলাবটি তৈরি করা হয়।সেলাই মেশিনটি ১৬ মিটার লম্বা যা কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে চালানো হয়।
কাবার ভিতরে কি আছে
প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য পাড়ি জমান মক্কায়। তবে এই ঘরের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে বলে মক্কায় গেলেও সাধারণ মানুষের সৌভাগ্য হয় না এই ঘরের ভিতরে কি আছে তা দেখবার। তাই এই ঘরের ভিতরে কি আছে তা নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। মুসলিম উম্মার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ঘর কাবা শরীফের ভেতরে রয়েছে একটি সিন্দুক। জেটিতে রাখা আছে উৎকৃষ্ট মানের সুরভী।
এছাড়া কয়েকটি মকমলের তৈরি তোয়ালে রাখা আছে দেওয়ালে। পবিত্র কাবা ঘর মুছার জন্য ব্যবহার করা হয় সেগুলো। এ ঘরের ভিতরে আরো রয়েছে বিভিন্ন যুগের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি মশাল। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশারা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন সেগুলো।
পবিত্রতম এই ঘরের ভিতরে ডান পাশে রয়েছে একটি দরজা। যেটি স্বর্ণ দ্বারা নিমজ্জিত এর নাম বাবুরতবা। যার বাংলা অর্থ তওবার দরজা।এই ঘরে দেওয়ালের উপরের অংশে লাগানো রয়েছে সবুজ রেশমি কাপড়। এসব কাপড়ে স্বর্ণের মাধ্যমে অঙ্কন করা আছে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত। প্রতি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করা হয় রেশমি কাপড়গুলো।
কাবা শরীফের মেজে এবং দেওয়াল মূল্যবান মার্বেল পাথরের মাধ্যমে মজাইক করা আছে। এছাড়া রয়েছে মর্মর পাথরের তিনটি ফলক। কোনো জানালা নেই কাবা ঘরে ভেতরে প্রবেশের জন্য। শুধুমাত্র একটি দরজার রয়েছে। বছরে অন্তত দুইবার পরিষ্কার করা ছাড়া সাধারণত সারা বছর বন্ধ অবস্থায় থাকে এই দরজা।
বন্ধুরা আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি কাবা ঘরের ভিতরে কি কি আছে। আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আজকে আপনারা জানতে পারলেন কাবা ঘরের ভিতরের অবস্থান সম্পর্কে। ইসলাম সম্পর্কে এরকম নিত্য নতুন পোস্ট যদি পেতে চান তাহলে আমাদের সাইটটি ফলো করুন এবং সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।