কিডনি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ কি কি! বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের ১০টি লক্ষণের মাধ্যমে জানাবো যে আপনার কিডনির মধ্যে কোনো ইনফেকশন হয়েছে কিনা বা আপনার কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতেছে কিনা। আপনি চাইলেই এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং আপনার কিডনির মধ্যে কোনো রকম সমস্যা হয়েছে কিনা তা জানতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিডনি অসুস্থ হওয়ার ১০টি লক্ষণ।
১/ কিডনি মানব শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আপনার হার্ট শরীরের মধ্যে রক্ত পাম্প করে থাকে। যেই রক্তের ৮০% কিডনির মধ্যে প্রবেশ করে।
এরপর সেই রক্তকে কিডনি ফিল্ডার করার কাজ করে থাকে এবং শরীরের মধ্যে পাম্প করে দেয়। রক্ত পরিশোধন করার পরে যে খারাপ অংশগুলো থেকে যায় সেগুলোকে কিডনি মল এবং মূত্র হিসেবে পাঠিয়ে দে । কিন্তু যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন ব্লাড ফিল্টারিং করতে পারে না।
যার কারণে শরীরের মধ্যে টক্সিন এবং ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শরীরের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ জমা হতে থাকে। যার ফলে কিডনি পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায়। ফলে সেই বিষাক্ত টক্সিন যুক্ত রক্ত আপনার মস্তিষ্কে চলে যায় এবং পুরো শরীরের মধ্যে সবসময় ক্লান্তি ভাব নিয়ে আসে। যদি আপনি এমন কোন লক্ষণ এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২/ দ্বিতীয় পর্যায়টি হচ্ছে আপনার সবকিছুতেই অনেক বেশি রাগ বৃদ্ধি পাবে। আপনি যতই শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশে থাকুন না কেন একটু এদিক ওদিক হলেই আপনার মধ্যে এগ্রেসিভ মুড প্রকাশ পাবে এবং আপনি সকলের সামনে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করবেন।
পাশাপাশি আপনাকে যে কোন কাজের মধ্যে অত্যন্ত বিরক্তিবোধ মনে হবে। এটি হওয়ার একমাত্র কারণ যখন কিডনি শরীরের মধ্যে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন রক্ত শরীরের মধ্যে পরিশোধন হতে পারে না। ফলে সেই বিষাক্ত রক্ত মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। আর এই অক্সিজেন কমতির কারণে আপনি সবসময় বিরক্তিবোধ অনুভব করে থাকেন। এটি কিডনি খারাপ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
৩/ যদি আপনার বারবার বমি আসে এবং খিদা অনুভব না হয় তাহলে এটাও একটা কিডনি খারাপের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে যেতে পারে।
আপনার কিডনি নষ্ট হচ্ছে রক্ত পিউরিফাইন না হওয়ার কারণে এবং শরীরের মধ্যে বিষাক্ত উপাদান ছড়িয়ে পড়ছে যার কারণে আপনার পাচন প্রক্রিয়া এবং পুরো বডির ফাংশন ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে আপনার খাবারের প্রতি অনিহা প্রকাশ পায় এবং যেকোনো খাবার নাকের কাছে নিয়ে গেলে একপ্রকার গন্ধ অনুভব হয় ফলে আপনি খেতে পারেন না।
৪/ বারবার প্রসাব আসে এটা কিডনি মেল ফাংশন হওয়ার একটি কারণ। কেননা যখন আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে তখন এর ফিল্ডার কোনোভাবেই কাজ করবে না। ফলে আপনার প্রস্রাব ধারণ ক্ষমতা অনেক কমে যাবে।
এর ফলে আপনি যে খাবারগুলো গ্রহণ করেন সেগুলো কিডনি পিউরিফাইন না করে সরাসরি মূত্রথলিতে প্রবেশ করে। ফলে ঘন ঘন প্রসাবের চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে অনেক সময় ইউরেনের ইনফেকশন হয়ে থাকে। যদিও এই লক্ষণগুলোকে মানুষ নরমাল হিসেবে ভেবে থাকে। কিন্তু এই লক্ষণ গুলো আপনার কিডনি খারাপ হওয়ার সংকেত হতে পারে।
৫/এছাড়াও আরো অনেক লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণগুলো দেখলে আপনি বুঝবেন আপনার কিডনি খারাপ হতে চলেছে। যেমন গরমের দিনেও আপনাকে প্রচুর ঠান্ডা লাগা, কোনরকম পিপাসা না লাগা এবং দিন ও রাত্রে অনেক বেশি ঘুম হওয়া তাহলে আপনি বুঝে নিবেন আপনার কিডনি অনেক দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই খুব দ্রুত চিকিৎসা করা অনেক বেশি জরুরী।
৬/ শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়া এটিও কিডনি খারাপ হওয়ার একটি লক্ষণ। আপনি যদি দেখেন আপনার শরীরের হাত পায় ফুলে যাচ্ছে বা রস ধরেছে তাহলে বুঝবেন এটি কিডনি খারাপের একটি চূড়ান্ত লক্ষণ। কেননা কিডনি খারাপ হওয়ার কারণে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ রস বের হতে পারছে না। ফলে দেহের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত রস জমা হচ্ছে।
৭/ অনেক বেশি হাই ব্লাড প্রেসার কিডনি খারাপ হওয়ার একটি অন্যতম লক্ষণ। যদিও এই হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা অনেক লোকের মধ্যে দেখা যায় এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাটি বাড়তে থাকে। কিন্তু আপনার বয়স যদি বেশি হয় এবং বারবার এই সমস্যাটি দেখা দেয় তাহলে আপনি একবারের জন্য হলেও কিডনি পরীক্ষা অবশ্যই করে নিবেন।
৮/ কিডনি খারাপের আরেকটি অন্যতম রোগ হচ্ছে অ্যানিমিয়া। যাদের শরীরে অ্যানিমিয়া রোগ বাসা বাঁধে তাদের অন্যতম সমস্যা হয়ে থাকে কিডনিতে। কেননা অনেক পরীক্ষায় দেখা গেছে অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিডনির সমস্যায় ভুগে থাকে।
এই রোগে খুব দ্রুত শরীরের মধ্যে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। যদি এই রোগের সঠিক সময়ের চিকিৎসা শুরু করা না যায় তাহলে রোগী অনেক গম্ভীর ভাবে ডুবে যায়। তাই আপনার শরীরে যদি রক্তের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে খুব দ্রুত পরীক্ষা করুন আপনার মধ্যে অ্যানিমিয়া রোগ বাসা বেধেছে কিনা।
৯/ লাগাতার যদি আপনার শরীরের মধ্যে বিভিন্ন রকম চর্মরোগ যেমন দাঁত, পাঁচরা অথবা খুসলি দেখা দেয় তাহলে এটি কিডনির সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতি তখনই সৃষ্টি হয় যখন আপনার কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং আপনার শরীরের মধ্যে রক্ত পিউরিফাইং হতে পারে না।
ফলে শরীরের মধ্যে টক্সিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন কোষ নষ্ট হতে থাকে। ফলে যেখানে সবচেয়ে বেশি কোষ নষ্ট হয় সেখানে অনেক বেশি পরিমাণ খুশলি হতে থাকে। যদিও এই সমস্ত চর্মরোগ অন্য কারণেও হয়ে থাকে। কিন্তু এই লক্ষণ গুলোর সঙ্গে যদি চর্মরোগ গুলো বারবার দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত পরীক্ষা করান। যদিও এই সমস্ত চর্মরোগ অন্য কারণেও হয়ে থাকে। কিন্তু এই লক্ষণ গুলোর সঙ্গে যদি চর্মরোগ গুলো বারবার দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত পরীক্ষা করান।
১০/ প্রস্রাব করার সময় যদি জ্বালাপোড়া হয় অথবা ব্যথা করে অথবা প্রসাব খুব দ্রুত ডার্ক হচ্ছে তাহলে দ্রুত আপনি কিডনি পরীক্ষা ক্রুন। কেননা এসব সংকেতের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি আর কাজ করছে না।
রক্ত সঠিকভাবে পিউরিফাইন না হওয়ার কারণে পুরো শরীরের মধ্যে টক্সিন জমতে পারে এবং ধীরে ধীরে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। এর কারণে প্রসাবের রাস্তা জ্বলতে পারে ও ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি প্রসাবের রং গারো হলুদও হতে পারে।
বন্ধুরা উপরোক্ত এসব সমস্যা দেখা দিলে আপনারা খুব দ্রুত কিডনি পরীক্ষা করুন। হতে পারে আপনার কিডনি একেবারেই ড্যামেজ হয়ে গেছে। এজন্য আপনাকে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হতে পারে অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনও করতে হতে পারে। আর এই চিকিৎসা এতটা সহজ নয়।
কেননা এখানে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় এবং ডোনার খুঁজতে হয়। তাই আপনি উপরোক্ত এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই আপনি সতর্কতা অবলম্বন করার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারেন।