কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধা কি কি! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। যেটা আমাদেরই মতো মানুষ দ্বারা করা হয়েছে।
এটি একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার যেটা আমাদের মানুষদের মতোই চিন্তাভাবনা করতে পারে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, উইকেআই, স্ট্রং আই, এবং সবশেষে আর্টিফিসিয়াল সুপারইন্টালিজেন্ট। এখনো পর্যন্ত আমরা যতগুলো এআই সিস্টেমকে অপারেট করে আসছি এই সবগুলো উইকেআই।
যেমন হল সোফিয়া যাকে সৌদি আরবের সিটিজেনশিপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা এআই সিস্টেমকে অনেক বেশি ডেভলপ করতে সক্ষম হব। তখন এই এ আই একদম আমাদের মানুষের মতো ভাবতে শুরু করে দিবে। তখন এটিকে শক্তিশালী এআই বলা যাবে । আর এরপরেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের মানুষের থেকে কমপক্ষে ১% বেশি চিন্তা ভাবনা করতে সক্ষম হবে।
তখন আসবে সিঙ্গুলারিটি মানে artificial super intelligence। যেটা ঐ সময় সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। আর এটি হবে এই মহাবিশ্বের সর্বশেষ ইনভেনশন। এখন মনে হয় আমাদের মনে দুইটি প্রশ্ন আসছে আসলে সিঙ্গুলারিটি আসার পর হিউম্যান সিংগুলাইজেশনের সমাপ্তি কি একদম নিশ্চিত।
নাকি সিঙ্গুলারিটি আমাদের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হিসেবে প্রমাণিত হবে। এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই পোস্টটিতে। আশা করি পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরোটি পড়বেন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দক্ষতা
২০১৪ সালে তাই ব্যাক নামের একটি স্টোরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রয়োগের একটি পেডিকশন করা হয়। তাদের দোকানের পণ্য ক্রয় করা একজন মহিলা অন্তঃসত্তা ছিল। এই কথা ঐ মহিলার পরিবারের কেউ জানতো না। এমনকি ঐ মহিলাটাও এ বিষয়ে সিওর ছিলনা। শুধু ঐ মহিলার ক্রয় করার প্রক্রিয়াতে মাইনর কিছু চেঞ্জের কারণে ঐ এআই এটিকে ধরে ফেলে। যেটা সকলের কাছে অনেক আশ্চর্য জনক প্রমাণিত হয়েছিল।
এরপর ২০১৭ সাল ফেসবুকের ইঞ্জিনিয়ার নিউ হাইলি ইন্টেলিজেন্স চ্যাট বটের উপর কাজ করেছিলেন। এই প্রোগ্রামকে ফেসবুকের সাথে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রিসার্চ করা হচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ারের মাথায় একটি আইডিয়া আসে।
তিনি ভাবেন দুটি চ্যাট বটের মধ্যে চ্যাট করানো হোক। আর যখন তিনি ঐ দুটি চ্যাট বটের মধ্যে কথা বলানো শুরু করে। তখন কিছু এমন ঘটনা ঘটে যেটা দেখে ফেসবুক ইঞ্জিনিয়াররাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই দুটি চ্যাট বট একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য কিছু ভাষা প্রয়োগ করে।
যেটা আমাদের মানুষ থেকে আলাদা ছিল। এই দুটি চ্যাট বট একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিল। এই বিষয়টি ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ারেরও জানা ছিল না। কিন্তু একটি বিষয় তো নিশ্চিত ছিল এই দুটি চ্যাট বট পরস্পরের সাথে কথা বলার জন্য কিছু গোপন কোড প্রয়োগ করে। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে এই প্রোগ্রামকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারন ফেসবুকের রিপোর্ট অনুসারে এই প্রোগ্রামক ফেলিওর হিসেবে প্রমাণিত করেছিল।
মেশিন লার্নিং
আসলে কি এআই পুরো পৃথিবীকে নিজের দখলে নিয়ে নিবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মত কম্পিউটার প্রোগ্রামেরও চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের থেকেও উন্নত হয়ে যাবে। এটিই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা সবাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্টকে দিনের পর দিন ব্যবহার করে আসছি।
উদাহরণ হিসেবে যেমন ধরুন গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, vertual assistant এবং alexa। এমন কি কিছু বড় বড় কোম্পানিও এআই এর ব্যবহার করছে। যেটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে প্রবাহিত করছে। আর সেটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। যেমনটা যখন আপনি ইউটিউব ওপেন করেন তখন সেটি আপনার পছন্দ অনুসারে আপনাকে ভিডিও দেখিয়ে থাকে। যেটা থেকে আপনি কখনো বিরক্তবোধ করেন না।
আর ঘন্টার পর ঘন্টা আপনি কোন রকম বিরক্তিবোধ না করেই ভিডিওগুলো দেখতে থাকেন। কিন্তু এটির পিছনে একটি হাইলি কমপ্লেক্স কম্পিউটার এলগরিদম কাজ করে। আর এই এলগরিদম নিজের সময়ের সাথে নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা রাখে। যেটাকে বলা হয়ে থাকে মেশিন লার্নিং।
আর অ্যামাজনের মত বড় বড় ই-কমার্স সাইটগুলো এই মেশিন অ্যালগরিদমের বছরের পর বছর ব্যবহার করে আসছে। আপনি যখন amazon ওপেন করেন তখন আপনাদের পছন্দের জিনিস আপনার চোখের সামনে এসে পড়ে যেটাকে আপনি কিনতে চাচ্ছেন।
আমরা টেকনোলজির এই ফিল্ডে অনেক দ্রুত গতিতে সক্ষমতা অর্জন করছি। হ্যাঁ এটা সত্য যে আমাদের কাছে এখন, প্রেজেন্ট এবং অ্যাডভান্স লেভেলের রোবট অথবা সুপার কম্পিউটার এআই সিস্টেম নেই। কিন্তু আমরা যত দ্রুত উন্নতি করছি সামনে আসাকরা যায় আনুমানিক ৫০ বছরের মধ্যে আমরা অ্যাডভান্স এআই সিস্টেমকে ডেভলপ করে ফেলবো।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিজ্ঞানীদের মতামত
অনেক বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ভবিষ্যতে ভয়ানক ইনফেনশনে প্রমাণিত হবে। আর এটি আমাদের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ।
আর এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিয়ে পৃথিবী জুড়ে সকল বিজ্ঞানীদের সংকেত দিয়ে গেছেন। আর ইলন মাক্সও তার ইন্টারভিউতে বলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বানিয়ে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। দুনিয়া জুড়ে অনেক মানুষ যারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পাওয়ারকে বুঝতে পারে।
তারা বলেন এই সন্ধান আমাদের মানুষদের জন্য চূড়ান্ত খোজ প্রমাণিত হতে পারে। এর কারণ হলো যখন এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট আমাদের মানুষদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তখন এ আই সিস্টেমের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
আর মানুষের সাথে এআইয়ের হবে একটি মহাযুদ্ধ যেটা আমরা কখনোই জিততে পারবো না। কারণ তখন এআই সিস্টেম মানুষ থেকে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি দক্ষতা অর্জন করবে। আর আমরা যেমনটাই চেষ্টা করি না কেন এআই সিস্টেমকে নষ্ট করার প্রত্যেকটি বুদ্ধি বা প্লান ব্যর্থ প্রমাণিত হতে থাকবে। কারণ আমাদের প্রত্যেকটি প্লান তারা আগে থেকেই জেনে যাবে।
পিঁপড়ের মতই হবে মানুষের পরিণতি
আপনারা সবাই জানেন দলবদ্ধ পিঁপড়ে সঙ্গে আমরা মানুষ কিভাবে থাকি। আপনি কি জানেন এই পিঁপড়ে গুলোর মধ্যে আর আমাদের মধ্যে কি পার্থক্য? মানুষদের কাছে একটি কমপ্লেক্স ব্রেন আছে যেটা পিঁপড়ে গুলোর মধ্যে নেই। তারা শুধু দেখতে পারবে মানুষের তৈরি করা সমস্ত কিছু।
কিন্তু কখনো বুঝতে পারবে না এই বিল্ডিংগুলোর ব্যবহার কিভাবে করে। তাদের জানা নেই যে আমাদের ইউনিভার্সে কতগুলো প্লানেট আর তার রয়েছে। আর তাদের এটাও জানা নেই পৃথিবী একটি সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। যখন এই সকল ইনফরমেশন চিন্তা করার ক্ষমতা এআই সিস্টেমের কাছে চলে আসবে তখন এই পিঁপড়ে গুলোর মতই আমাদেরকে পিষে ফেলা হবে।
যে কাজ আমাদের মানুষদের করতে কয়েক হাজার বছর লেগে গিয়েছিল সেই একই কাজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে করতে শুধুমাত্র দশ মিনিট লাগবে। আমরা চিন্তা করি যে বাকি পশুপাখিদের তুলনায় আমরা অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান। আর আমরা এই দুনিয়ায় সুপ্রিম ইন্টেলিজেন্ট। কিন্তু বাস্তবে আমরা মানুষেরা এই পশু পাখিদের মধ্যে কিছু ফ্যাট গুলোতেই বেশি ইন্টালিজেন্ট। আর ছোট এই একটি পার্থক্যের কারণে আমরা টেকনোলজিতে এত বেশি সামনে অগ্রসর হতে পেরেছি।
যদি আমরা সকল প্রাণীদের intelligence কে এক থেকে এক হাজার স্কেলে রেটিং দেই তাহলে এক নাম্বারে আসে ইদুর, আর নাম্বার চারে আসবে শিম্পাঞ্জি, আর নাম্বার আটে আসবে ডলফিন এবং সর্বশেষে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব মানে আমরা মানুষরা আসবে নাম্বার দশে।
তবে আমাদের মানুষের কাছে একটি কমপ্লেক্স ব্রেইন রয়েছে। যেটার মধ্যে কোটি কোটি নিউরন রয়েছে। মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতার মধ্যেও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কোন সীমাবদ্ধতা থাকে না। আসলে আমাদের কম্পিউটারের দক্ষতা এখনো এত ফার্স্ট হয়ে যায়নি।
কিন্তু আমি আপনাদের প্রথমে বলে দিয়েছিলাম আমাদের কম্পিউটিং পাওয়ার দিনের পর দিন এত দ্রুত উন্নতি করছে যে, সেদিন আসতে আর বেশি দেরি নয় যখন কম্পিউটার প্রসেসর আজ থেকে হাজারগুণ বেশি গতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এত কমপ্লিটিং প্রসেসর পাওয়ার সিস্টেমের সামর্থ্য পেয়ে যাবে। যত সে চাইবে। আর আর্টিফিশিয়াল তার নিজ সামর্থে এমন একটি হার্ডওয়ার তৈরি করবে যেটা আমাদের টেকনোলজি থেকে হবে অনেক ফাস্ট এবং পাওয়ারফুল।
আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স
আর তখনই আসবে সিঙ্গুলারিটি যেটিকে আমরা আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স বলে থাকি। মানে তখন এআই সিস্টেম মানুষ জাতি থেকে ১% বেশি ইন্টেলিজেন্ট হয়ে যাবে। তখন এই প্রশ্নটি আসে যে সিঙ্গুলারিটি আসার পর কি হবে? এটা কেউ জানেনা। কিন্তু ফিঙ্গুলারিটির আশাটা একদম নিশ্চিত।
গুগলের একজন চিপ ইঞ্জিনিয়ার ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে,””” তিনি বলেছিলেন ২০২১ সালে আমরা টেকনোলজি ফিল্ডে এত বেশি সামনে অগ্রসর হবে যে যেটা আমরা গত এক শতাব্দীতেও করতে সক্ষম হয়নি”””। কিন্তু সিঙ্গুলারিটি আসার পর কি হবে ঠিক এটা যখন সিংগ্রালিটি আসবে তখনই জানা সম্ভব হবে।
অনেক বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন সিঙ্গেলারিটি আমাদের জীবনকালই আসবে। মানে বর্তমান প্রজন্ম এটিকে দেখতে সক্ষম হবে। আর যখন এটি আসবে তখন দুটি প্রধান ঘটনার মধ্যে একটি হওয়া একদম নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেটা হলো, হয়তো আমাদের মানুষদেরকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে অথবা মানুষ অমরত্ব লাভ করবে। শুধু দেখতে হবে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।
আপনার কি মনে হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে স্ট্রং এআই অর্থাৎ সিম্বুরালিটি পর্যন্ত পৌঁছাতে আর কত সময় লাগতে পারে ৫০ বছর নাকি ১০০ বছর নাকি ১০০০ বছর।
অথবা মানুষের এই সভ্যতা এআইকে সিঙ্গেলারিটিতে পৌঁছানো পর্যন্ত বাধা দিতে সক্ষম হয়ে যাবে। আপনার এই মূল্যবান মতামত অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন। আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।