দেশের ব্যাংক গুলোর ঋণ খেলাপির পরিমাণ কত! দেশের ১৫ টি ব্যাংকের মধ্যে মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ঝুঁকিভিত্তিক প্রয়োজনীয় সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না।
একদিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি অপরদিকে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ঝুঁকির মাত্রা বহুগুনি বেড়ে গিয়েছে। জানা যায় গত জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৭টি সরকারি বাকি ৬টি বেসরকারি এবং ২টি বিদেশি ব্যাঙ্ক রয়েছে।
এর মধ্যে নতুন প্রজন্মের দুটি নতুন ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংক দুটো হল বেঙ্গল ব্যাংক এবং সিটিজেন ব্যাংক। ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৩,৭৬৮ কোটি টাকা। যেখানে তাদের মূলধন থাকার কথা ছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। একইভাবে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২,৩৫২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ২,১৮৯ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২,০২৯ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২,৩৮৬ কোটি টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলোর সবগুলো মিলে একত্রে মূলধন থাকার কথা ছিল ২০,৬৫৬ কোটি টাকা। তবে তারা মূলধন রেখেছে ৯,৯১১ কোটি টাকা একমাত্র ব্যতিক্রম ব্যাংক হিসেবে দেখা গিয়েছে BDBL কে। কেননা এই ব্যাংকটির এখন পর্যন্ত কোন মূলধন ঘাটতি নেই।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১,৩১৪ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঘাটতি ৮৮ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংকের ৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১,৮১২ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১,৩৭৯ কোটি টাকা, বর্তমান পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ৪,৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান ব্যাংকগুলো ব্যক্তির আমানত গ্রহণ করার পর সেই আমানতকৃত অর্থ অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে। আর এই ঋণের অর্থ ব্যাংকগুলো সঠিক সময়ে উদ্ধার করতে না পারার কারণে তৈরি হয় খেলাফি বা মন্দ ঋনের তালিকা।
নিয়ম অনুযায়ী ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে অনুপাত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিত সংরক্ষণ ও অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হয়। যার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুন মাসের শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাফি ঋণে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০.১১ শতাংশ। খেলাফি ঋণের এই পরিমাণ দেশের ইতিহাসে এবাড়ি প্রথম। গেল সব শেষ তিন মাসে খেলাফি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি পর এখন পর্যন্ত তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আর এজন্যই দীর্ঘদিন ধরে তাদের মূলধন সংকট চলছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও বেশি সুদে তহবিল বা আমানত নিয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়ার কারণে ঘাটতিতে পড়েছে।
অন্যদিকে অনিয়ম এবং জালিয়াতির কারণে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণের ব্যর্থ হয়েছে।(দেশের ব্যাংক গুলোর ঋণ খেলাপির পরিমাণ কত)
বন্ধুরা দেশের ১৫টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটটির পিছনের কারণ কি শুধু একটাই নাকি অন্য কিছু রয়েছে তা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের সাইটের সঙ্গে থাকুন।