নাসা কিভাবে নভোচারীর মৃতদেহ পৃথিবীতে ফিরে আনে! নভোচারীরা স্পেস স্টেশনে মুক্ত অবস্থায় থাকলে ভর শূন্যতা নভোচারীর শরীরে থাকা অক্সিজেন শুষে নিবে।
এর সাথে বায়ুর চাপ না থাকার ফলে দেহ অস্বাভাবিক হারে ফুলে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই সব কিছু ঘটবে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে। প্রথমে নভোচারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। এরপর ৩০ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিটের মধ্যে নভোচারীর মৃত্যু হবে। তবে কোন নভোচারী স্পেস সুট পরা অবস্থায় যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকে এতে করে নভোচারীর আয়ু হতে পারে ছয় ঘন্টা।
যখন মহাকাশে অক্সিজেন বিহীন কোন নভোচারীরা মৃত্যু হবে তখন এমনও হতে পারে মৃত দেহটি মহাকাশে ভাসতে ভাসতে অন্য কোন গ্রহে গিয়ে আটকে পড়ল।
এক্ষেত্রে পৃথিবীবাসী কখনো কি তাদের নভোচারীকে ফিরে পাবে না। এমন কেউ কি আছে যে মহাশূন্যে গিয়ে সেই মৃত নভোচারীর মোরা দেহটি ফিরে নিয়ে আসবে। কি হবে যদি কোন নভোচারী স্পেস স্টেশনে মারা যায়। বন্ধুরা আপনারা জারা মহাকাশে অবস্থানরত নভোচারীদের অজানা সকল তথ্য জানতে আগ্রহি আমরা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে তাদেরকে জানানোর চেস্টা করবো মহাকাশে অবস্থানরত একজন নভোচারীর মৃত্যু হলে সেই মৃত দেহটি কিভাবে পৃথিবীতে ফিরে আনা হয় সে সম্পর্কে। আপনি যদি মহাকাশ প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরো পোস্টটি পরার অনুরোধ অনুরোধ রইল।
স্পেস স্টেশনে কত জন মারা গেছেন
এখন পর্যন্ত নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ জন নভোচারী স্পেস স্টেশনে মারা গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বর্তমান রাশিয়ার নভোচারী ভ্লাদিমির কমরফ পৃথিবীতে ফেরার সময় মারা যান।
এই নভোচারীকে মস্কোতে সমাহিত করা হয়। ২০০৩ সালে কলম্বিয়া ট্রাজিডিতে নিহত হয় একসঙ্গে ৭জন নভোচারী। তাদের মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্রের হেমফিলের বিবিন্ন স্থানে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে নভোচারীদের মৃতদেহ সংগ্রহ করে স্বাভাবিকভাবে মৃতদেহ গুলো দাফন করা হয়।
ক্যাপসুলের মাধ্যমে মৃত দেহ ফিরিয়ে আনা
স্পেস স্টেশনে মৃত্যু কোন অস্বাভাবিক বিষয় নেয় বরং এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। যদিও স্পেস স্টেশনে কোন নভোচারীকে পাঠানোর আগে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দীর্ঘ সময় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো এতটাই নিখুঁত হয়ে থাকে যে মহাকাশ ষ্টেশনে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থেকে।
সাবেক নভোচারী ক্রিজ হ্যাক ফিল্ডের মতে স্পেসে কোন নভোচারী মারা গেলে পরবর্তী করণীয় নির্ভর করে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের কমান্ডারের উপর। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এমন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে। তবে মহাকাশ স্টেশন থেকে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভাব্য কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে নাসা।
space মিশনে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেলে একটি ক্যাপসুলের মাধ্যমে নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরে আনা হবে। চাঁদে মারা গেলে পৃথিবীতে নভোচারীকে আনতে সময় লাগবে কয়েক দিন। তবে কি হবে যদি কোন নভোচারী মঙ্গল গ্রহে অথবা আরো অনেক দূরের কোন স্থানে space এ মারা যায়।
স্পেসশিপে কেন মৃত দেহ সংরক্ষণ করা হয়না
স্পেসশিপের ভিতরে মারা গেলে মোরা দেহ সংরক্ষণ করার কোন ব্যবস্থা করেনা নাসা। কারণ স্পেসশিপের ভিতর জায়গা এমনিতেই কম। এর মধ্যে মৃতদেহের জন্য আলাদা চেম্বার তৈরি করলে তৈরি হবে আরো জটিলতা।
এর সাথে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে। মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হলে পচন ধরে স্পেসশিপের পরিবেশ নষ্ট এবং রোগ জীবাণু সৃষ্টি করতে পারে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে তরল নাইট্রোজেন দিয়েও হিম শীতল তাপমাত্রাতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যায়।
কারণ অত্যাধিক শীতল তাপমাত্রায় অনেক ধীর গতিতে দেহের পচন ধরে। মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়াসহ যে নানান অনুজিব রয়েছে সেগুলো মূলত মৃতদেহের মধ্যে পচন ঘটায়। ধীরগতিতে হলেও দেহের এই পচন প্রক্রিয়া স্পেস শিপের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে জীবিত অন্যান্য নভোচারীদের।
এর জন্যই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃতদেহ স্পেসশিপে সংরক্ষণ করা হয় না। মৃতদেহ সংরক্ষণের সমস্যাকে সমাধানের জন্য নাসা সুইডিশ পরিবেশবান্ধব মোরাদেহ সৎকার কারি প্রতিষ্ঠান প্রমিসির সঙ্গে মিলে একটি ব্যাগ তৈরি করে। ব্যাগটির নাম দেওয়া হয় বডি ব্যাগ।
সম্পূর্ণ বায়ু নিরোধক এই ব্যাগের মধ্যে মৃতদেহ ভরে স্পেসের হিম শীতল তাপমাত্রার সংস্পর্শে রাখা হয়। ঠান্ডায় জমাট বাধা এই দেহকে পরবর্তীতে তীব্রভাবে কম্পিত করা হয়। ফলে পুরো মৃতদেহটি ভেঙে ৫০ পাউন্ড বা সাড়ে ২২ কেজি ওজনে পরিণত হয়। মিশন শেষ করে এই শূন্য নভোচারীর মৃতদেহটি পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়।
লুনার প্রস্পেক্টর মিশন
২০৩৫ সালের মধ্যে মঙ্গলে বসবাস করার পরিকল্পনা করছে মানুষ। বসবাসকারীরা সারা জীবনের জন্য সেখানে অবস্থান করবে এবং গড়ে তুলবে মানুষের বসবাসযোগ্য ঘরবাড়ি।
তখন সেখানেও মানুষ মারা যাবে। মানুষকে কোনোভাবেই অন্য গ্রহে বা উপগ্রহে সমাহিত করে সেখানকার পরিবেশ দূষিত করতে পারবেনা। জাতিসংঘের চার্টার তাই বলে। তবে একটি ব্যতিক্রম ঘটনাও দেখা যায়। ১৯৯৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মহাকাশ ভূতত্ত্ববিদ ইউগিন সুমেকার। মহাকাশ গবেষণায় অবদানের জন্য তার মরা দেহের ছাই ১৯৯৯ সালে নাসার লুনার প্রস্পেক্টর মিশনের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পাশে একটি গর্তে যক্রাচ করাননো হয়। তখন থেকে এই বিজ্ঞানীর মৃতদেহের ছাই চাঁদেই রয়েছে।
বন্ধুরা স্পেসে অবস্থানরত নভোচারীদের মৃতদেহ নিয়ে নাসার এমন পরিকল্পনা আপনার কাছে কতটুকু যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় তা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন এবং মহাকাশ সম্পর্কে আপনার অজানা সকল তথ্য জানতে চাইলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।