নাসা কোন গ্রহে পানির সন্ধান পেয়েছে! আমাদের বিজ্ঞান বর্তমানে অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। আজ আমরা টেকনোলজির মাধ্যমে সবকিছু করতে পারি। যা আমরা গত লাখো বছরেও করতে পারিনি। এসব টেকনোলজির সাহায্যে আমরা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে অনেক গ্রহের সন্ধান করেছি।
কিন্তু এখনো আমাদের কাছে অনেক গ্রহ অজানা রয়েছে। যেগুলোর রহস্য এখনো আমরা উদঘাটন করতে পারিনি। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রহস্য জীবন। অর্থাৎ এই জীবনের সন্ধান আমাদের গ্রহ ব্যতীত অন্য গ্রহে আছে কিনা সে ব্যাপারে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেনি।
এই জীবনের অনুসন্ধান করার জন্যই নাসা ২০০৯ সালে ক্যাপলার স্পেস টেলিস্কোপকে মহাশূন্যে প্রেরণ করে। এই টেলিস্কোপটির মূল উদ্দেশ্য ছিল এটি এমন গ্রহের অনুসন্ধান করবে যে গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর মত অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে।
সূর্য থেকে পৃথিবীর এই নির্দিষ্ট দূরত্বকে হেবিটেবল জন বলা হয়ে থাকে। যেখানে পানি একটি লিকুইড ফর্মে থাকতে পারে। আর তখন থেকেই নাসার এই টেলিস্কোপটি আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে অসংখ্যএক্সো প্লানেটের অনুসন্ধান করেছে। আর এই টেলিস্কোপ দ্বারা খোঁজ পাওয়া একটি প্ল্যানেট বিজ্ঞান মহলকে অবাক করে দেয়। যার নাম হচ্ছে K2-18B।
এই গ্রহটিকে নিয়ে বর্তমানে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপও রহস্যময় কিছুর অনুসন্ধান করেছে। যা শুনে আপনিও অবাক হবেন। আজকের আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে এই গ্রহটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। আর যারা মহাকাশ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি হতে চলেছে অত্যন্ত এক্সক্লুসিভ। তাহলে চলুন শুরু করি,
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নতুন আবিষ্কার
বিজ্ঞানীরা যখন কোন এক্সো প্লানেটকে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে তখন তারা দূরে অবস্থান করা ঐ সমস্ত তারার দিকে টেলিস্কোপের সাহায্যে নজরদারি করে। আর দীর্ঘ সময় এই নজরদারি করার পর যদি তারা সেই তারার মধ্যে সামান্য টুকু পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাহলে বিজ্ঞানীরা ধরে নেয় সেই তারার কাছে কোন গ্রহের উপস্থিতি রয়েছে।
যেটা ঐ তারা থেকে আসা আলোকে বাধা দিচ্ছে। এরপর বিজ্ঞানীরা যখন আরো বিস্তারিত ভাবে এটি নিয়ে গবেষণা করে তখন তারা আরো জানতে পারে যে এটি কত দূর থেকে সেই তারাটিকে প্রদক্ষিণ করছে। আর এই পদ্ধতির মাধ্যমে কেবলার টেলিস্কোপ অনেক গ্রহের অনুসন্ধান করেছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে ট্রানজেট মেথড পদ্ধতি বলে থাকে।
কেবলার K2-18B এ রয়েছে বিশাল এক সমুদ্র আর এটা নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছে। নাসার এই অনুসন্ধান মহাকাশপ্রেমী এবং জ্যোতির্বিদদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছেন।
এই টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা লিও নক্ষত্রের ১০০ টিরও বেশি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। আর ঐ সমস্ত গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহতে মহাসাগর থাকার কথা জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা। আর গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে এস্টোমার নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দ্বারা সংরক্ষিত তথ্য বিশ্লেষণ করার পর এরকম ঘোষণা করেন। এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর ভরের মোটামুটি ৮.৬ গুন।
এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মধ্যে অদ্ভুত সব লক্ষণ দেখা গিয়েছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের উপস্থিতি রয়েছে। হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ আকাশের নিচে একটি সমুদ্র । এই তথ্যটি আরো চিত্তাকর্ষ হয়ে উঠেছে জৈবিক কার্যকলাপের অস্তিত্বের ইঙ্গিত মিলায়।
ডাই মিথেন সালফেট নামের পরিচালিত একটি অনুর খুবই অল্প পরিমানে সংকেত পাওয়া গেছে। যা শুধুমাত্র পৃথিবীর জীবন দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে। বিশেষত সামুদ্রিক পরিবেশের ফাইটোপ্লাঙ্কটন দ্বারা। যদিও ডিএমএস সনাক্তকরণে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। তবে এটি পৃথিবীর বাইরে জীবনের সম্ভাবনার পরিমাণকে বহু গুনে বাড়িয়ে তুলেছে।
K2-18B পৌঁছানোর সময়
K2-18B আমাদের পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। এর অর্থ এটি প্রায় ১২০ট্রিলিয়ন পথ। আর যে দূরত্বটা অনেক বেশি।
যদি আমরা এই গ্রহতে voice of spc-র গতিতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডে এই গতিতেও যদি পৌঁছাতে চাই তাহলেও আমাদের পৃথিবী থেকে এই গ্রহতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০ লক্ষ বছর। কিন্তু আমরা যদি আলোর গতিতে পৌঁছাতে পারি তাহলে আমাদের মাত্র ১২৪ বছর সময় লাগবে।
কিন্তু যেহেতু আমরা আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছি তাই এই গ্রহে পৌঁছাতে আমাদের মাত্র সময় লাগবে দুই বছর। আর সেটা টাইম ভ্যালুশনের কারণে। আর এই টাইম ভ্যালুয়েশনের কারণে কেন সময় স্লো হয়ে যায় সে সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। যখন আপনি এই প্ল্যানেটে পৌঁছে যাবেন তখন দেখবেন এই প্ল্যানেটটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই গুণ বড়।
এই গ্রহের admosphere এ হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের সাথে সাথে পানির মেঘ দেখা যাবে। যদিও এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকেও অনেক বড়। কিন্তু তারপরও এই গ্রহটির সারফেস আমাদের পৃথিবীর সমান। তাই এই গ্রহে যখন আপনি ল্যান্ড করবেন তখন এখানে তেমন কোন পার্থক্য আপনার মনে হবে না।
ল্যান্ড করার পর যখন আপনি এই গ্রহের মধ্যে চলাচল করবেন তখন আপনার মনে হবে আপনি পিঠের মধ্যে কোন ব্যাগ নিয়ে চলাচল করছেন। এমনটা হওয়ার কারণ এই গ্রহটির সারফেস গ্রাভিটি পৃথিবীর চেয়ে ১০ পার্সেন্ট বেশি। যেটি আপনাকে এই গ্রহটির মধ্যে কোন চাপ সৃষ্টি করবে না।
K2-18B তাপমাত্রা
এই গ্রহের মধ্যে আপনার সঙ্গে যে বড় সমস্যাটি হতে পারে তা হচ্ছে এই গ্রহের তাপমাত্রা। কারণ এই গ্রহটি তার নক্ষত্রের অনেক কাজ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। গ্রহটি তার সূর্যকে মাত্র ২ কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে প্রদক্ষিণ করছে। ফলে এতটা কম দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম করার কারণে এই গ্রহটি অনেক উষ্ণ হবে।
এছাড়াও গ্রহটির একটি দিক সবসময় নক্ষত্রের দিকে অবস্থান করে। যেমনটি আমাদের চাঁদ। আর অপর দিকটি সবসময় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। K2-18B এই গ্রহটি প্রায় স্থির থাকার কারণে এই গ্রহটির টারমিনেটর লাইনে গিয়ে ল্যান্ড করতে হবে। যেখানে তাপমাত্রা পৃথিবীর মতোই নাতিশীতোষ্ণ হবে।
যেহেতু এই গ্রহটির একদিকে রাত এবং একদিকে দিন তাই টারমিনেটরে আপনি যদি ল্যান্ড করেন তাহলে আপনি সেখানে সবসময় সকাল এবং সন্ধ্যার দিকে যে হালকা আলো থাকে ঠিক ঐ রকম একটি পরিবেশ দেখতে পাবেন। এই গ্রহটির এক বছর পৃথিবীর সময়ের অনুযায়ী মাত্র ৩৩ দিন। এখনো বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি নিয়ে আরও বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করে যাচ্ছে।
K2-18B প্রথম অনুসন্ধান করা হয় ২০১৫ সালে
বিজ্ঞানীরা এমনটি বলছে যে আমরা আগামী দিনে এই সুপার আর্থ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবো। ২০১৫ সালে যখন সর্বপ্রথম এই গ্রহটির অনুসন্ধান করা হয়েছিল তখন সবাই এমনটা ভেবেছিল যে এটা হয়তো মিনি নেপচুন টাইপের প্লানেট হবে।
যেটা প্রায় নেপচুন আর পৃথিবীর মাঝে মাঝারি আকারের একটি প্লানেট। আর যার কারণে এটা একটি গ্যাসীয় প্লানেটেও হতে পারে। কিন্তু ২০১৭ সালে থেকে ২০১৯ সাল করা রিসার্চ থেকে বিজ্ঞানীরা এমনটাই জানতে পারে এই গ্রহটি একটি রকি প্লানেট। আর সেই সাথে এই প্লানেটটির স্যারফেজ গ্রাভিটি আমাদের পৃথিবীর সমান।
আর যেহেতু জেমস ওয়েভ টেলিস্কোপের রিচার্জ থেকে এমনটি জানা গেছে যে, এই গ্রহে তরল আকারে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। তাই বলাই যায় এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব অবশ্যই রয়েছে। এছাড়া এমনটিও বলা যায় বিজ্ঞানীদের দ্বারা অনুসন্ধান করা একমাত্র প্লানেট যেখানে আমরা প্রথমবারের মতো পানি পাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি।
বন্ধুরা K2-18B প্ল্যানেট নিয়ে আপনার মন্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং এই প্ল্যানেট সম্পর্কে আপডেট তথ্য পেতে চাইলে আমাদের সাইটটি ফলো করে সঙ্গে থাকুন।