নিউরালিং ইন্টারনেট সেবা কি! এই মুহূর্তে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মার্কিন ধনকুবে ইলন মাক্সের স্টারলিং ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার খবরের পরপরই অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন জন্মেছে।
এই যেমন আমরা বর্তমানে ব্রডব্যাঙ্ক এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যে সেবা পাই তার সঙ্গে স্টার্লিং ইন্টারনেট পার্থক্য কি। স্টারলিং ইন্টারনেটের স্পিড বেশি না কম। কিংবা আমাদের দেশে খরচ কেমন পড়বে এসব খুঁটিনাটি এবং সব প্রশ্নের উত্তর জানাবো আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি
স্টার্লিং এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি তা জানার আগে ইন্টারনেটের ধরন সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। ইন্টারনেট হল ইন্টার কানেক্টেড নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ। অনেকে একে নেট নামেও বলে থাকে।
নেটওয়ার্ক তরঙ্গের মাধ্যমে অনেক সংখ্যক কম্পিউটার ডিভাইসকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে তথ্য আদান-প্রদান করার প্রক্রিয়াকেই ইন্টারনেট বলা হয়। আর স্যাটেলাইট হল মহাকাশের এমন কোন বস্তু যা তার চেয়েও বড় কোনো বস্তুকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। যেমন ধরুন চাঁদ আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
এক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। তবে সেগুলো প্রাকৃতিক উপগ্রহ। মহাশূন্যে প্রাকৃতিক উপগ্রহের পাশাপাশি মানুষের তৈরি বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে। এই যেমন আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ওয়ান। তবে এই ধরনের স্যাটেলাইট দিয়ে কিন্তু ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয় না। কিন্তু স্টার্লিং হল এমন এক ধরনের স্যাটেলাইট যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট সেবা পাই।
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৬ ধরনের ইন্টারনেট সেবা দেখা যায়। যেমন ডায়াল আপ ইন্টারনেট, ডিএসএল ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, কেবল ইন্টারনেট, ওয়্যারলেস ইন্টারনেট এবং সেলুলার ইন্টারনেট। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ কেবল ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে থাকে।
কেবল ইন্টারনেট সাধারণত সাবমেরিন বা কেবল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু starlink এর ইন্টারনেট সেবা কেবল এর মাধ্যমে দেওয়া হয় না। সেটা কিভাবে দেওয়া হয় তাহলে? এর আগে জেনে নেই এ স্টার্লিং কি।
স্টার্লিং কি
নিউরালিং ইন্টারনেট সেবা কি আপনি স্টারলিংকে অরবিটাল স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট হিসেবে ভাবতে পারেন। এটি স্পেস এক্স সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ২০১৫ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাক্স চালু করেন।
এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক প্রটোটাইপ স্যাটেলাইট কক্ষপথে ২০১৮ সালে চালু করা হয়। মূলত স্পেস এক্স এর অধীনে পরিচালিত স্টার্লিং এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে সব জায়গায় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা চালু করা বা প্রদান করা। স্টার্লিং মূলত একটি এলইও স্যাটেলাইট অর্থাৎ লো আর্থ অরবিটাল স্যাটেলাইট।
পৃথিবী থেকে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থান করায় এই স্যাটেলাইটগুলোকে উন্নত লো অরবিট স্যাটেলাইট বলা হয়। সর্বোচ্চ দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে এই এলইও স্যাটেলাইট তথা স্টার্লিং এর অবস্থান হয়ে থাকে। এলইও স্যাটেলাইট গুলোর দূরত্ব কম হওয়াতে এর লেটেন্সি কম দেখায়।
যেখানে জিও স্টেশনের স্যাটেলাইট অর্থাৎ ভুস্থির উপগ্রহের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২২ হাজার ৩০০ মাইল অথবা ৩৫ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এই ধরনের স্যাটেলাইট গুলো লেটেন্সি রেট বেশি দেখায়। যেমন আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১।
এস্টার লিংক ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে
আগেই বলেছি স্টাইলিং হলো একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। এটি সরাসরি লোয়ার অরবিট স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সেবা প্রদান করে থাক।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় স্টারলিং এর কাজটি অনেকটা আমাদের বাড়িতে ব্যবহার করা ডিস টিভি পরিষেবার মত। এখানে আপনাকে starlink ইন্সটল করার জন্য ব্যবহারকারীদের একটি ডিস ব্যবহার করতে হবে। যা একটি মিনি স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করার মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
স্টার্লিং ইন্টারনেট সেবার সুবিধা
- এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যেকোনো জায়গা থেকে ব্যবহার করা যেতে পারে
- কখনো কখনো এর গতি সাধারণত প্রতিশ্রুতির তুলনায় খুব দ্রুত হয়ে থাকে
- প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং দুর্যোগের সময় স্টার্লিং ইন্টারনেট খুব ভালো পরিসেবা প্রদান করতে পারে
- কেবল তার না থাকার কারণে দুর্যোগের সময় এটি খুব সহজেই পুনরুদ্ধার করা যায়
স্টার্লিং ইন্টারনেটের অসুবিধা গুলো
- এই মুহূর্তে লিটেন্সি সমস্যা স্টারলিং ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় একটি অসুবিধা।
- স্টার্লিং ইন্টারনেটের দাম সাধারণ ইন্টারনেটের তুলনায় অনেক বেশি।
- এই ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আকাশকে পরিষ্কার থাকতে হবে। প্রবল বৃষ্টি কিংবা প্রবল বাতাস থাকলে স্টারলিং ইন্টারনেট সেবার কানেকশন কে বিঘ্ন করতে পারে।
- স্টার্লিং ইন্টারনেট পরিষেবা কখনোই VPN কে সমর্থন করে না।
স্টার্লিং ইন্টারনেট পরিষেবার দাম কত
স্টার্লিংকে দুই ধরনের সেবা রয়েছে এর মধ্যে একটি হল আবাসিক সেবা। এটি শুধুমাত্র আবাসিকদের ব্যবহারের জন্য। এ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার তথা ডিস ও রাউটারের জন্য এককালীন চার্জ ৫৯৯ ডলার।
প্রতিমাসে সাবস্ক্রিপশন ফি ১১০ ডলার। অপরটি হলো বাণিজ্যিক সেবা। এই সেবা আবাসিক সেবার দ্বিগুণ গতি প্রদান করে থাকে। কিন্তু এর জন্য এককালীন চার্জ দিতে হবে ২৫০০ ডলার এবং প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি ৫০০ ডলার। যতই দিন যাবে ব্যবহারকারী বাড়বে এবং একপর্যায়ে অবশ্যই এই ইন্টারনেটের দাম কমবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যবহারে কতটা প্রভাব ফেলবে
ইলন মাক্সের স্টারলিং বাংলাদেশকে একটা সেবার আওতায় আনতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এন্টেনা যুক্ত রাউটার ফ্রি অর্ডার নেওয়া শুরু করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হলেও ইলন মাক্সের মতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটই ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ।
বিশ্বের অনেক দেশের গ্রাহক এরই মধ্যে স্টারলিংক রাউটারের ব্যবহার শুরু করেছেন। গ্রাহক সংখ্যা এরই মধ্যে ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি স্টারলিং এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকেও ডিভাইস অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। ৯৯ ডলার ডিপোজিট করে যে কেউ অর্ডার করতে পারবেন। যেহেতু খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছে এই স্টারলিং ইন্টারনেট পরিষেবা তাই এখন দেখার বিষয় হলো এই স্টারলিং বাংলাদেশের জন্য কতটুকু কল্যাণকর হয়।