লাইফস্টাইল

নিম পাতা যে ১০টি মারাত্মক রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে

নিম পাতার উপকারিতা

প্রায় চার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে নিম। নিম গাছের পাতা থেকে শুরু করে ছাল, শিকড় এবং ফল সবকিছুই পুষ্টিগুণে ভরপুর। আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন সকালে নিমপাতা খালি পেটে খান তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন।

ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে এই নিন। এছাড়াও পেটে ব্যথা, আলসার, হৃদপিণ্ড ও ধমনীর রোগ, চোখের সমস্যা, মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে নিম। নিম গাছের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়া উপাদান যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

নিম পাতায় রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড। তাই ভারত, বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার মানুষ এটা বিশ্বাস করেন যে নিম ৪০ টি জটিল এবং সাধারন রোগ নিরাময় করতে পারে। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাবো নিম পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং কখন কিভাবে এবং কতটুকু পরিমানে নিম পাতা খাওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে।

নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল এজাডিরেক্টাইন্ডিকা। নিম পাতায় রয়েছে flybornet যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।  এছাড়াও এতে এজাডিরেক্টিং, বুটানিক এসিড, পিটার পিনয়েড, গ্লাইকসাইড পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়।

১/ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

রক্তের মধ্যে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে নিম পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালে নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। কেননা এই নিম পাতার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গ্লাইকোসাইট পাওয়া যায়। যেমন প্লাবনয়েড গ্লাইকোসাইট এবং সেপনিন গ্লাইকোসাইট।

যে উপাদান গুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হাইপগ্লাইসামিক উপাদান। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন সকালে নিম পাতা খাওয়া প্রয়োজন।

২/ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে নিম পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে এন্টিহিস্টামিন উপাদান যা রক্তনালীকে সচল রাখতে সহায়তা করে। নিম পাতার বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আমাদের শরীরের রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে থাকে।

নিম পাতা খাওয়ার ফলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন এক গ্লাস পানির সঙ্গে ১ চা চামচ মধু এবং নিম পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

৩/ হৃদ যন্ত্র ভালো রাখে

হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন করোনারি আর্টারি ডিজিস এবং অস্বাভাবিক হৃদপন্দন চিকিৎসায় নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। করোনারি আর্টারি ডিজিস হলো সবচেয়ে সাধারণ হৃদরোগ।

এতে হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন কমে যায় ফলে বুকে ব্যথা হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে শুরু করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিম পাতার নির্যাস হৃদযন্ত্রের রক্ত চলাচল করতে সহায়তা করে এবং মানুষের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। তাই আপনি যদি আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা নিম পাতার রস খেতে পারে।

৪/ ওজন কমাতে সাহায্য করা

দেহের ওজন কমানোর জন্য বর্তমানে অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। তবে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে দেহের ওজন কমানোটা অত্যন্ত কার্যকারী বলে আমরা মনে করি।

এজন্য নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। নিমের ফুল দেহের চর্বি কমাতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিম পাতা এবং নিম পাতার ফুল বেটে এক চা চামচ মধু এবং লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবন করলে এটি খুব দ্রুত আপনার শরীরের পরিবর্তন নিয়ে আসতে সহায়তা করে।

৫/ হাঁপানি দূর করতে সহায়তা করে

বহু বছর থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে হাঁপানির ঔষধ হিসেবে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের বিচি থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা প্রতিদিন নিয়ম করে সেবন করলে হাঁপানির মতো কষ্টদায়ক রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও এই তেল জ্বর এবং সর্দি দাঁড়াতে সহায়তা করে। আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল সেবন করতে পারেন তাহলে খুব সহজে হাঁপানিকে প্রতিরোধ করা যায় এবং হাঁপানির অফুরন্ত কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করা যায়।

৬/  লিভার ভালো রাখে

মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। আর এই লিভারকে ভালো রাখার জন্য নিম গাছের ফুল অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। লিভারের জন্ডিসের মতো সমস্যা দূর করার জন্য নিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নিম পাতার নির্যাস লিভারের টক্সিন দূর করে এবং লিভারের মধ্যে এনজাইম এর মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি আপনার লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে নিমপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা এর রস খেতে পারেন।

৭/  দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে

দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির সমস্যা দূর করার জন্য বহু বছর ধরে নিন গাছের ডাল ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দাঁতের মাড়ির মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে নানান রকম সমস্যা হয়ে থাকে।

এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে আমাদের দাঁতকে রক্ষার জন্য নিম গাছের ডাল অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আর এ কারণে আমরা দেখে থাকি আজকাল বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্টে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা দাঁত এবং মাড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি মুখের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৮/  চোখের সমস্যা দূর করে

নিম পাতার অনেকগুলো উপকারের মধ্যে একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ উপকার হলো এটি আমাদের চোখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। আপনি যদি কখনো চোখের মধ্যে জ্বালা, অস্বস্তি সহ অন্য সমস্যা অনুভব করেন তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

এজন্য পরিমাণ মত নিমপাতা পরিষ্কার পানিতে নিয়ে সিদ্ধ করুন এবং সেই সিদ্ধ পানি পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার চোখের মধ্যে ধীরে ধীরে ঝাপটা দিন। এভাবে আপনার চোখ পরিষ্কার করতে থাকুন।

৯/  আলসার প্রতিরোধ করে

বর্তমান সময়ে পেটের আলসার একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা যে সমস্ত ফাস্টফুট খাবার গুলো প্রতিনিয়ত খাচ্ছি এর ফলে পেটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস্টিং বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফলে দেখা দিচ্ছে পেটের মধ্যে ব্যথা সহ অন্যান্য উপসর্গ। আর এজন্য আপনি চাইলেই প্রতিদিন নিম পাতা সেবন করতে পারেন। কেননা নিম পাতা পেটের আলসার নিরাময় করতে দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে। কারণ নিম পাতার নির্যাস পাকস্থলীতে থাকা  অতিরিক্ত এসিডের পরিমাণকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়।

১০/ কৃমি নাশক

আমরা সচরাচর দেখে থাকি যে সমস্ত শিশুদের পেটে কৃমি জন্ম নেয় সে সমস্ত শিশু দেখতে রোগাপাতলা এবং খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই শিশুর পেট থেকে কৃমি দূর করার জন্য নিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এজন্য নিম গাছের ছাল প্রতিদিন তিনবার গরম পানিতে দিয়ে খেলে ভীষণ উপকার পাওয়া যায়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।