পাগলা মধুর উপকারিতা! হিমালয় কন্যা নেপাল যেন রহস্যমণ্ডিত একটি জগত। এখানকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায় বিশেষ এক ধরনের মধু। যেটা কোন মানুষ খেলে অদ্ভুত এক ধরনের মাদকতার সৃষ্টি হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি খেয়ে ফেললে মানুষটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। তাইতো এর নাম দেওয়া হয়েছে ম্যাট হানি বা পাগলা মধু।
ম্যাট হানি বা পাগলা মধু কোন মৌমাছি সংগ্রহ করে
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৌমাছি এপিস ডরছাটা ল্যাব্রিওছা বাস করে হিমালয়ের দুর্গম পাহাড়ে। এই মৌমাছি ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
মৌমাছিটি রোডো ডেন্ডন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। যেই মধুতে থাকে গাইনো টক্সিন নামে বিষাক্ত এক যৌগ। গাইনো টক্সিন মানুষের হ্যালোসিলেশন ঘটাতে পারে। বৈশিষ্ট্যে যেমন এই মধু বিরল তেমন এটি বিশ্বে খুব কম পরিমাণ উৎপাদন হয়ে থাকে। পাহাড়ের গা ঘেসে মৌমাছিরা ঝুলন্ত মৌচাকে মধুর জমা করে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে উঠে একমাত্র নেপালের কুলুং জাতির মানুষেরা এই মধু সংগ্রহ করে থাকে। আর এই মধু সংগ্রহ করা হয় বছরে মাত্র দুইবার। এর জন্য কুলুং জাতির মানুষেরা প্রায় ৪ ঘন্টা খারা পাহাড়ের গা ঘেঁষে উপরে উঠতে থাকে।
পাহাড়ে চড়ার জন্য প্রথমে তারা জংলি বাস ও লতাপাতা দিয়ে মই তৈরি করে। এরপর যেখানে মৌচাক রয়েছে সেখানে এই মই ঝুলিয়ে দেয় দুর্গম পাহাড়ের গা ঘেসে। এরপর দলনেতার নির্দেশে মধু সংগ্রহ কারীরা সেই মই দিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে।
ম্যাট হানি বা পাগলা মধু যেভাবে সংগ্রহ করা হয়
মৌচাক কাটার জন্য তাদের হাতে থাকে ২৫ ফিট লম্বা বাস এবং মাথায় থাকে ছুরি বাধা। এছাড়া কারো হাতে থাকে জলন্ত খরের আগুন এবং জুড়ি। সকলের গায়ে থাকে ভারী এবং মোটা পোশাক।
মশারী এবং বাঁশ দিয়ে হেলমেটের মত বানিয়ে মুখ মন্ডল ও মৌমাছির কামড় থেকে চোখকে রক্ষা করে তারা। অত্যন্ত গরম এবং ঝুলন্ত মই দিয়ে এভাবেই মৌচাকের কাছে মধু সংগ্রহ করার জন্য যান তারা।
মধু সংগ্রহকারীরা যতই মৌচাকের কাছাকাছি যায় এবং ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছিদের তাড়ানোর চেষ্টা করে ততই মৌমাছিরা আক্রমাত্ম্য হয়ে ওঠে এবং মধু সংগ্রহকারীদেরকে হুল ফুটাতে থাকে। এমন অবস্থায় সাধারণ একজন মানুষের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধ্য কাজ। কিন্ত এই দক্ষ মধু সংগ্রহকারীরা কাজটি খুব স্বাচ্ছন্দে করে থাকে।
বাসের মাথায় চুড়ি লাগানো অবস্থায় মৌচাক কেটে ফেলানো হয় নিচে থাকা ঝুরিতে। ৩ দিনে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ গ্যালন মধু সংগ্রহ করা হয়। এরপর সংরক্ষিত মধুকে ছাকনির সাহায্যে মৃত মৌমাছি এবং উচ্ছিষ্ট আলাদা করা হয়। যদিও এই মধু বহির বিশ্বে এল এস ডির প্রাকৃতিক রূপের মতো।
মজার বিষয় হল এই পাগলা মধু সেখানকার মানুষদেরকে পাগল করে না। যদিও তাদের এত বেশি মৃত্যু সম্ভাবনা নিয়ে মধু সংগ্রহ করাকে অনেকে পাগলামি বলে থাকে। তবে এই মধু সেবনে সাধারণ মানুষের মতো তাদের নেশা হয় না। দুঃখের বিষয় হলো আর্থিক নিরাপত্তা ও এই মধুর পর্যাপ্ত পরিমাণ দাম না পাওয়ার কারণে কুলুং জাতির মানুষেরা ধীরে ধীরে এই পেশা থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিচ্ছে।
পাগলা মধুর উপকারিতা
এইচপিও চ্যানেলের ভাইস ডকুমেন্টরির একজন রিপোর্টার এই মধু পান করে বলেছেন এটি অনেকটা মাদক সেবনের অনুভূতি দেয় তবে অনেক ধিড় গতিতে।
এছাড়া তিনি আরো বলেছেন যে এই মধু পান করার ফলে হার্টের রোগ, রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি রোধ, ওজন কমা সহ নানান ধরনের শারীরিক উপকারিতা হয়। এই মধু নিয়মিত পান করলে মানুষের শরীরের মধ্যে যৌন দুর্বলতা সহ আরো অনেক উপকার হয়ে থাকে।
পাগলা মধুর অপকারিতা
অবশ্যই যেকোনো খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে ঠিক একইভাবে পাগলা মধু নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় পান করলে শরীরের মধ্যে বাসা বাধা সমস্ত রোগ দূর হতে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় প্রতিনিয়ত পান করলে এটি আপনাকে নেশার দিকে অগ্রসর করবে। কেননা এই মধুতে রয়েছে গাইনো টক্সিন নামে এক বিশেষ ধরনের যৌগ।
যেটি একজন মানুষ প্রতিনিয়ত বেশি মাত্রায় সেবন করলে নানান ধরনের শারীরিক খারাপ লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এ কারণে পাগলা মধু নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় পান বা সেবন করতে হয়।