পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেন কে! হলিউডের নতুন সিনেমা ওপেনহাইমার নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পারমাণবিক বোমার জনক হিসেবে পরিচিত পদার্থ বিজ্ঞানী রবাট ওপেনহাইমারের জীবনী নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমাটি।
আর সে কারণেই এই বিজ্ঞানীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক বেশি আগ্রহ। আমরা সকলেই জানি পারমাণবিক বোমা কতটা ভয়াবহ মানব জাতির জন্য। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এই পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে তখন লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
এমনকি এখন পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে শিশুরা বিকলাঙ্গ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এবং ঐ সমস্ত এলাকায় এখন পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয়নি। বলা হয়ে থাকে তখন যে পারমাণবিক বোমাটি ব্যবহার করা হয়েছিল তার ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা ছিল কয়েক কিলোমিটার। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে আধুনিক পারমাণবিক বোমাগুলো তৈরি করা হয়েছে তার ক্ষমতা কয়েক হাজার কিলোমিটার থেকে কয়েক লাখ কিলোমিটার দূরপর্যন্ত হতে পারে। তাই বুঝতে পারছেন বর্তমান সময়ে যদি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে এই পারমাণবিক বোমা মানব জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে পারে মানব জাতি সহ পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী।
এই পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেছেন আমেরিকান বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার। আজকে আমরা জানবো ওপেন হাইমার এর জীবনী এবং এই পারমাণবিক বোমা কেনই বা তৈরি করা হয়েছিল সে সম্পর্কে। তাহলে বন্ধুরা চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক পারমাণবিক বোমা সম্পর্কে।
ওপেনহাইমার এর জন্ম
জার্মানি থেকে অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় আসা এক ইহুদি পরিবারে ১৯০৪ সালে জন্ম নেন ওপেনহাইমার বিলাসিতার মধ্যে বড় হওয়া ওপেনহাইমার অত্যন্ত লাজুক হলেও ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান খেলাধুলায় কোন আগ্রহ না থাকলেও মাত্র ৯ বছর বয়সেই গ্রীক ও লাতিন দর্শন পরেছিলেন আর আগ্রহী ছিলেন খনিজ পদার্থে।
ওপেনহাইমারের পড়াশোনা
ওপেনহাইমার হার্বাট বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করেন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে স্পর্শকাতর ও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিত্ব এ সময় তার জন্য নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ল্যাবরেটরীতে কাজের আগ্রহ না থাকলেও শিক্ষকের জড়াজড়িতে বিরক্ত হয়ে একদিন তিনি একটি আপেলের ভিতর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ভরে তার শিক্ষক টিউটরের ডেক্সের ভিতরে রেখে দেন।সৌভাগ্যবশত টিউটর আপেলটি খাননি।
কিন্তু ওপেনহাইমারের কেমব্রিজে পোড়া এজন্য ঝুঁকির মুখে পড়ে। শেষে মনোবিজ্ঞানের কাছে যাবার শর্তে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি পান তিনি। পরের বছর এক বন্ধু তার বান্ধবীর কাছে প্রেম নিবেদন করলে তাকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেন ওপেনহাইমার। মনো চিকিৎসকরা তাকে যে মানসিক স্বস্তি দিতে পারেনি তা তিনি পরবর্তীকালে পেয়েছিলেন সাহিত্য থেকে এমনটাই মনে করেন তার জীবনী কাররা। এ সময় থেকে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক বই পড়া তার সারা জীবনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪০ সালে জীববিজ্ঞানী ক্যাটরি হারিসনকে বিয়ে করেন ওপেনহাইমার।
পরমাণু বোমা তৈরি
পরমাণু অস্ত্রের হুমকি সম্পর্কে রাজনীতিবিদদের আগে বিজ্ঞানীরাই সচেতন হয়েছিল। ১৯৩৯ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথম মার্কিন সরকারের নেতাদের কাছে এ নিয়ে এক চিঠি লিখেছিলেন। প্রথম যখন বোমা তৈরির প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে ওপেনহাইমারের নাম প্রস্তাব করা হয়, তখন বেশ কিছু আপত্তি উঠেছিল। কিন্তু তার জ্ঞান, বিশ্বস্ততা ও উচ্চবিলাসীর কারণে ম্যান হ্যাডেন প্রকল্পের সামরিক নেতা জ্যাম সিব্রোস তাকে নেওয়ার পক্ষেই মত দেন।
শয়তানের কাজ
যুদ্ধের পর পরমাণু বোমা সম্পর্কে ওপেনহাইমারের মত পাল্টে গিয়েছিল। তিনি একে ত্রাস ও আক্রমণের যন্ত্র এবং সামরিক শিল্পকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৯৬০-এর দশকে এক সাক্ষাৎকারে ওপেনহাইমার বলেছিলেন, বিস্ফোরণের পর পরই তার মনে পড়েছিল হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতার একটি লাইন, “””এখন আমি পরিণত হয়েছি সাক্ষাৎ মৃত্যুতে বিশ্ব ধ্বংসকারীতে”””। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানকে ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন। আমার মনে হয় যেন আমার হাতেই রক্ত লেগে আছে। প্রেসিডেন্ট পরে বলেছিলেন আমি ওকে বলেছিলাম রক্ত লেগেছে আমার হাতে ওটা নিয়ে আমাকেই ভাবতে দাও।
পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেন কে
অস্ত্র তৈরীর সময় ওপেনহাইমার তার সহকর্মীদের বলতেন পরমাণু বোমা ব্যবহৃত হলে কি হবে তা বিজ্ঞানীদের ভাববার বিষয় নয়। তাদের দায়িত্ব তাদের কাজ করা।
কিন্তু যুদ্ধের পর ওপেনহাইমারের নিজের যুক্তির উপর আস্থা উঠে গিয়েছিল। পরে আরো শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা তৈরিরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। এ কারণে ১৯৫৪ সালে তার বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার তদন্ত করে এবং তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স কেড়ে নেয়। ১৯৬৩ সালে তাকে এনরিকো ফার্মেস পুরস্কার দেওয়া হলেও ক্লিয়ারেন্স ফেরত দেওয়া হয় তার মৃত্যুর ৫৫ বছর পরে। ওপেনহাইমার তার বাকি জীবনে একদিকে তার কাজ নিয়ে গর্ব অন্যদিকে এর পরিমাণ নিয়ে অপরাধবোধ ভুগেছেন। তরুণ বয়স থেকেই অত্যাধিক ধূমপান করতেন ওপেনহাইমার এ কারণে তার কয়েক দফা যক্ষা হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি গলার ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেছিলেন “””একই ভুল পুনরায় না করাই হচ্ছে বিজ্ঞানের কাজ এটা কবিতা নয়””।
সর্বশেষ কথা
পৃথিবী ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এজন্য দায়ী মানুষ। কেননা মানুষ মানুষকে ধ্বংস করার জন্য তৈরি করেছে বিধ্বংসী সব অস্ত্র। যা ব্যবহার করে প্রকৃতি সহ ক্ষতি করা হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে। আমরা হয়তো অনেকে জানিনা যে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রাশিয়া, আমেরিকা, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া।
আইএসআই এর তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার কাছে মোট পারমাণবিক বোমা রয়েছে ৫০০০ টির বেশি এবং আমেরিকার কাছে রয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টির বেশি। চীনের কাছে রয়েছে ২ হাজার টির বেশি যেগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীকে কয়েকশ বার ধ্বংস করা যাবে।