ভ্রমন

পৃথিবীর যে কয়েকটি রহস্যজনক স্থানের ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কেউ

পৃথিবীর রহস্যময় স্থান

পৃথিবীর রহস্যময় স্থান! বন্ধুরা প্রতিটি কাজের পিছনে একটি করে লজিক থাকে। যখন কোন একটি কাজের বা কোন একটি স্থানে পিছনে যথাযথ যুক্তি বা লজিক পাওয়া যায় না তখন তাকে রহস্য বলা হয়। যেমন পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে যেখানে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার পরেও এর পিছনের কারণ তারা ভালো করে বের করতে পারিনি। বন্ধুরা আর আজকের এই পোস্টটি হতে যাচ্ছে পৃথিবীর রহস্যময় স্থান সম্পর্কে, তাহলে চলুন জেনে নেই।

রক্তের ঝর্ণা (ব্লাড ফলস) এন্টার্কটিকা

আমাদের বিস্মিত করার জন্যে পৃথিবীর ভাণ্ডার সবসময় পূর্ণ থাকে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই লুকিয়ে আছে ব্যাখ্যাবহুল এমন কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় যা আমাদেরকে পৃথিবী বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার জন্য কিছুটা হলেও উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

এই স্থানসমূহের মধ্যে কিছু স্থানে পৌঁছানো মোটামুটি অসাধ্য সাধনের সমান, আর কিছু স্থান সারা বিশ্বের পর্যটকদের গন্তব্যস্থল। এই সকল স্থান বিজ্ঞানীদের ব্যস্ত রাখে উত্তর খোঁজার কাজে, আর বিশ্ব আমাদের প্রতিনিয়ত বিস্মিত করে সেই সকল রহস্যের উদঘাটন করে।

রক্তের ঝর্ণা (ব্লাড ফলস), এন্টার্কটিকা-বেশির ভাগ মানুষ নিজের চোখে ব্লাড ফলস অবলোকন করতে পারবেনা, কিন্তু দৃশ্যটি অত্যন্ত চমকপ্রদঃ টেইলর গ্লেসিয়ার এর শ্বেত-শুভ্র গা বেয়ে রক্তলাল ঝর্ণা বয়ে পরছে।

এই ঝর্ণা প্রথম আবিষ্কার করেন অস্ট্রেলিয়ান ভূতত্ত্ববিদ গ্রিফিথ টেইলর ১৯১১ সালে, যিনি প্রথম টেইলর গ্লেসিয়ারে অভিযান চালান এবং তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। গ্লেসিওলজিস্ট এবং মাইক্রোবায়োলজিস্টরা এই রহস্যময় লাল প্রবাহের কারণ অন্বেষণ করছেন তারা এই উপসংহারে এসেছেন যে, রক্তরাঙা এই পানির উৎস হল ভূগর্ভস্থ জলাশয় যেখানে লোহার আধিক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে, বরফের ১৩০০ ফিট নিচে উদ্ভিজ্জাণু বিদ্যমান যা লোহা এবং সালফার পূর্ণ পানির মধ্যে এখন টিকে আছে।

ম্যাগনেটিক হিল, মঙ্কটন, নিউ ব্রান্সউইক-এমন কি আছে যা একটি গাড়িকে কোন রকম শক্তিপ্রয়োগ ছাড়াই পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে? পৃথিবীর অন্তর্নিহিত কোন চুম্বকীয় ক্ষমতা? নাকি এর থেকেও চমৎকার কিছু? এমনই এক জায়গা রয়েছে কানাডার প্রদেশ নিউ ব্রান্সউইক এর মঙ্কটন শহরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে, যা ম্যাগনেটিক হিল হিসেবে পরিচিত।

১৯৩০ সালে যখন ম্যাগনেটিক হিলের ঘটনা প্রচারণা লাভ করতে থাকে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই স্থানের চুম্বকীয় ক্ষমতার পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা চলছে।এই স্থান পর্যটকদের আকর্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে আবিষ্কারের পর থেকেই।

অবিস্মরণীয় এই চুম্বকীয় ক্ষমতা পরখ করতে চাইলে গাড়ির চালককে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমানের ফী দিতে হবে গাড়িকে রাস্তার শেষ প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তারপর যখন গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করা হবে তখন গাড়িটি চুম্বকীয় ক্ষমতার বলে পেছনে গড়ান শুরু করবে।

সার্টসি, আইসল্যান্ড-যদি কেও আপনাকে খুব জোর সহকারে বলার চেষ্টা করে যে পৃথিবীতে নতুন কিছুই নেই, তাহলে তাদেরকে জানান আইসল্যান্ডিক দ্বীপ সার্টসি এর ব্যাপারে।

আইসল্যান্ডের ভেস্তমানেয়ার আরকিপেলেগো শহরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ এই সার্টসি। ১৯৬৩ সালের পূর্বে এই দ্বীপের অস্তিত্ব ছিলনা।১৯৬৩ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৩০ মিটার নিচে সংঘটিত ওয়েস্টম্যান আইল্যান্ডের এক জলস্থ আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই দ্বীপের উৎপত্তি।

অগ্ন্যুৎপাত চলতে থাকে ১৯৬৭ সালের ৫ জুন পর্যন্ত এবং বন্ধ হওয়ার পর সেই স্থানে এক দ্বীপের সৃষ্টি হয় যা আগে সেখানে ছিল না। এই নতুন দ্বীপের নামকরণ করা হয় নোর্স পুরাণের আগুণের ইয়োটুন বা দৈত্য সার্টর এর নামানুসারে।

মোয়েরাকি বোলডার্স, নিউজিল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের পূর্ব উপকূলে কোয়েকোহে সমুদ্র সৈকত অবস্থিত এবং সেই সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় উপবৃত্তাকার পাথর, যার একেকটির পরিধি প্রায় ১২ ফিট।

হাজার হাজার বছর আগে সমুদ্রের নিচে এই পাথরগুলোর সৃষ্টি। জীবাশ্ম বা ঝিনুকের মত খনিজ পদার্থ ও পলি সংগ্রহ করে করে শক্ত মজবুত এই পাথর সৃষ্টি হয়েছে, যেমন করে সৃষ্টি হয় ঝিনুকের ভেতরের মুক্তা। ধূসর বর্ণের উপবৃত্তাকার এই পাথরগুলো উপকূলীয় ভাঙ্গনের ফলে সৈকতে এসে জড়ো হয়েছে। স্থানীয় মাওরি লোককাহিনী অনুসারে এই পাথরসমূহ আরাই-তে-উরু নামক এক বিশাল নৌযানের ইল বাস্কেট, ক্যালাবাস এবং কুমারার ধ্বংসাবশেষ।

লংইয়ারবেইন, নরওয়ে-২০ এপ্রিল থেকে ২৩ অগাস্ট পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডের উত্তরে আর্কটিক সাগরে অবস্থিত নরওয়েইয়ান আরকিপ্যালেগো স্ভালবার্ডে সূর্য অস্ত যায় না।

এই ঘখ্রিস্টপূর্ব ২ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত দেনিজলির কাছে অবস্থিত এই এলাকা তাদের জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য যারা খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ এই উষ্ণ জলাশয় গুলো থেকে উপকৃত হতে চায়। বর্তমানে প্রাচীন পবিত্র নগর হিয়েরোপলিসের জলাশয়ের অবশিষ্টাংশ এখন বিদ্যমান, কিন্তু “তুলার প্রাসাদ” এর এমন চত্বর, পাহাড় চূড়া এবং স্থির সাদা ঝর্ণার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিকার অর্থে মনোমুগ্ধকর।টনাটি সেখানে অবস্থিত মানুষের দেহ ঘড়ির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সূর্য অস্ত না যাওয়ার ফলে এই সময়কালে কখন দুপুর, কখন মধ্যরাত বা কখন নতুন একটা দিনের শুরু তা বুঝে ওঠাই মুশকিল হয়ে পরে।

পামুক্কালে, তুর্কি-পামুক্কালে, যার অর্থ “তুলার প্রাসাদ”, তুর্কির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত দেনিজলি প্রদেশের এক প্রাকৃতিক স্থান। এলাকাটি তার প্রাকৃতিক উষ্ণ জলাশয় এবং ট্রাভেরটাইনের প্রকাণ্ড সাদা চত্বরের জন্য বিখ্যাত, যা মূলত প্রবাহিত পানির থেকে যাওয়া কার্বনেটেড খনিজ পদার্থ দিয়ে সৃষ্ট। এই এলাকায় মোট ১৭ টি প্রাকৃতিক উষ্ণ জলাশয় আছে।

বন্ধুরা আজকের পোস্টটিতে যেসব স্থানের কথা বলা হয়েছে সেই সব স্থানগুলোতে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে কিন্তু এদের মূল কারণ বের করতে পারিনি। তাই বন্ধুরাই এইসব স্থানগুলোকে পৃথিবীর রহস্যময় বা রহস্যজনক স্থান বলা হয়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।