ফিলিস্তিনিদের কেন নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই! ইসরাইল ফিলিস্তিনকে এমন ভাবে দখল করেছে যে এক পাশে গাজা এবং অপরপাশে পশ্চিমতীর এবং মাঝখানে ইসরাইল। ইসরাইলিরা ১৬০দেশে ফ্রি ভিসাতে ঘুরতে পারলেও ফিলিস্তিনিরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে ইসরাইলি বাহিনীর অনুমতি নিতে হয়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে যদি কেউ ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর যেতে চায় তাহলে অনেকদিন আগে থেকেই আবেদন করতে হয়। তাও ৯০% ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করা হয় না।
যে ব্যক্তিগুলো পশ্চিমতিরে যেতে চায় তাদেরকে ইসরাইলি বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এই জিজ্ঞাসাবাদে যদি সন্তুষ্ট হয় তাহলেই সেই ব্যক্তিকে যেতে দেওয়া হয়। আপনি শুনে অবাক হবেন যে বেশিরভাগ গাজাবাসি আল আকসা দেখেনি কারণ আল আকসা মসজিদ পশ্চিম তীরে অবস্থিত।
ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক দলের বিবাদ
ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনী রাখার অনুমতি নেই। তবে ফিলিস্তিনি সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটি বাহিনী রয়েছে। কিন্তু তাদের কোন ভারী অস্ত্র রাখার অনুমতি নেই।
কেননা ইসরাইলের এক চুক্তিতে এটি মেনে নিয়েছিল পশ্চিম তীরের সরকার পিএলও। পিএলও এবং হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের দুটি রাজনৈতিক দল। যেখানে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ গাঁজাতে এবং পিএলও সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম তীরে। তবে ২০০৬ সালের নির্বাচনে পুরো ফিলিস্তিনে হামাস জয়লাভ করে ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দখল করে নেন। এরপর থেকেই ফিলিস্তিনে দুটি রাজনৈতিক দল দুই প্রান্তে তাদের শাসন কার্য শুরু করে। আর পশ্চিম তীরের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলের সকল শর্ত মেনে পশ্চিমতীরকে ডি মিলিটারিরাইজ করলেও হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা সেটা মেনে নেয়নি।
ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর
পশ্চিমতীরে ইজরাইলের শর্ত অনুযায়ী নিজস্ব কোন মিলিটারি ফোর্স নেই। তবে একটি সিকিউরিটি ফোর্স আছে এক্ষেত্রে তাদের শর্ত হচ্ছে ইসরাইলি বাহিনীকে সকল বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে এবং আরো শর্ত দিয়েছে যে তাদের কোন ভারী অস্ত্রশস্ত্র রাখা যাবে না।
এই সিকিউরিটি ফোর্সের যেসব অস্ত্র রয়েছে সেগুলো ইসরাইলের দেওয়া এমনকি তাদের ব্যবহার করা গাড়িগুলো ইজরায়েল দিয়েছে। যেগুলো প্রতিনিয়ত ইসরাইল বাহিনী ট্র্যাক করে থাকে। অর্থাৎ তাদের চলার গতি এবং তারা কোথায় যাচ্ছে কি করছে এই সকল বিষয়ে ইসরাইলি বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতায় নোট করা হয়।
আর এ কারণেই যখন ইসরাইলি বাহিনী বেআইনিভাবে কোন ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে যায় তখন ফিলিস্তিনের এই সিকিউরিটি ফোর্স কিছুই করতে পারে না। পশ্চিম তীরের যেকোনো বাড়িতে যেকোনো সময় চাইলেই ইসরাইলি বাহিনী তল্লাশি করতে পারে। আমরা হয়তো সচরাচর অনেক ভিডিওতে দেখে থাকি ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনের বহু জনতা পাথর ছুরছে এটি মূলত পশ্চিম তীরে দৃশ্য।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা
অন্যদিকে হামাস শাসিত গাজা উপত্যকা ইসরাইলের কোন শর্ত মেনে চলেনা। তাদের নিজস্ব মিলিটারি রয়েছে এবং তাদের অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী চাইলেও প্রবেশ করতে পারে না। তারা নিজেরাই সেখানকার নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তাদের আর্টিলারি ইউনিট রয়েছে। আর এসব ইউনিটের কাছে অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।
যার বেশিরভাগই তারা নিজেরাই উৎপাদন করে থাকে। ইসরাইলের শর্ত মেনে না নেওয়ার কারণে গাঁজা উপত্যকাকে ইসরাইলি বাহিনী চারপাশ থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গাজার দুই পাশে ইসরাইল অন্য পাশে মিশর এবং আরেক দিকে সমুদ্র। আর এ কারণেই গাজা উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবথেকে বড় জেলখানা। যেখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস। মিশর সীমান্তে আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি দেয়াল তুলে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের চলাচলের জন্য মাটির নিচে যে সুরঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো সে ধ্বংস করে দিয়েছে ।মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় আসার পর মিশর সীমান্ত নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। আর এ কারণেই ইসরাইল তখন মুরসিকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে নেয়।
এর ফলে ইজরাইল সৌদি আরব এবং আমিরাত জোট একত্রে মুরসির সরকারকে হটিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় বসান। আর সে সময় তাকে সবার আগে অভিনন্দন জানিয়েছিল সৌদি আরব। যদিও ইসরাইলের উদ্দেশ্য এবং তাদের উদ্দেশ্য একেবারেই ভিন্ন ছিল কিন্তু লক্ষ্য একটাই ছিল।
এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য মিশরের সীমান্ত চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। সীমানা প্রাচীর তৈরি করার জন্য মিশর সীমান্তে যে বাড়িঘর গুলো ছিল সেগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় এবং সেখানে সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করা হয়।
গাজার শিক্ষা ব্যবস্তা
হামাস শাসিত গাজার মধ্যে শিক্ষার হার ৯৯%। যখন ইসরাইল গাজায় হামলা করে এবং এই হামলায় গাজার বাড়িঘর ভেঙে গেলে তারা সবার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে।
এমনকি তাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি রয়েছে। গাঁজার মধ্যে তাদের নিজস্ব একটি বিমানবন্দর ছিল গাঁজা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে। যেটি ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়।
হামাসের সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে ফিলিস্তিনের দুইবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইসরাইলি সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে। ইসরাইল সেসময় পিছু হোটেলে এবং মধ্যস্থতা করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে তখন প্রায় ১০০ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়। অপরদিকে ২০০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়।
ফিলিস্তিনে বহির বিশ্বের সহযোগিতা
গাজা উপত্যকায় ঔষুদ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো চোরাই পথে আমদানি করতে হয়।ইরান চোরাই পথে অস্ত্র এবং কাতার অর্থ প্রদান করে থাকে। সৌদি আরব সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো তাদের দানের একটা বড় অংশ ফিলিস্তিনে প্রেরণ করে। তবে সেই অনুদান গুলো গাজায় নয়, পশ্চিম তীরে পাঠানো হয়।
ইজরাইল হামাসকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে তারা যদি ইসরাইলের শাসন মেনে নেয় এবং নিজস্ব সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করে তাহলে তারা অবরোধ তুলে নেবে এবং আন্তর্জাতিক সকল সহায়তা প্রদান করবে। কিন্তু পশ্চিম তীরের পিএলও সরকার মাহমুদ আব্বাস এটি মেনে নিলেও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা এসব শর্ত মেনে নেইনি।
আর এ কারণেই তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। আর এর ফলে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে পাথর ও ঢিল ছুড়লেও গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে বোমা এবং মিসাইল ছুরে।
ইসরাইলের আয়রন ড্রোন
যদিও ইসরাইলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ড্রোন এসব মিসাইলকে প্রতিহত করে। তবে গেল শনিবার হামাসের ছুরা মিসাইলগুলো ইসরাইলের আয়রন ড্রোন আটকাতে পারেনি। ২০ মিনিটের মধ্যে ছুরা প্রায় ৫ হাজারের মতো মিসাইল ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। যা ইসরাইল সহ তার মিত্রদের বেশ অবাক করেছে।
আর এখন প্রশ্ন উঠেছে ইজরাইলের আয়রন ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। কেননা হামাসের তৈরি মিছাইলগুলো সেরকম অত্যাধুনিক মিসাইল নয়। কারণ তারা এসব মিসাইল তৈরি করে ফেলে দেওয়া রড, পাইপ ও অন্যান্য পরিত্যক্ত পদার্থ থেকে।
বন্ধুরা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে রাজনৈতিক বৈরিতা রয়েছে তা আপনার কাছে কতটুকু যুক্তিযুক্ত বলে মনে হচ্ছে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং আপনি কি বিশ্বাস করেন যে পশ্চিমতীর এবং গাজা উপত্যকা একত্রে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে অচিরেই ইসরাইল নামক রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মিশে যাবে তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন।