ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধে কে কার পক্ষে! গেলে শনিবারের আক্রমণের মাধ্যমে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেখানে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের প্রায় ১৫০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে এবং ফিলিস্তিনের প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে।
আর ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন যুদ্ধে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব। একদিকে ইজরাইলের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কয়েকটি দেশ। অন্যদিকে সরাসরি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ নিচ্ছে কিছু দেশ। আর এখানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি করেছে চীন এবং রাশিয়া।
কেননা তারা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকাকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ করেছে। তবে নিরপেক্ষ অবস্থানেও দেখা যাচ্ছে কোন কোন বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রনকারি দেশকে। আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন যুদ্ধে কোন দেশ কার পক্ষে এবং দেশগুলোই বা কি কি বিবৃতি দিয়েছে সে সম্পর্কে।
১/ ভারত
প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে বাংলাদেশের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। অর্থাৎ বন্ধু রাষ্ট্র হলেও এই বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে।
শনিবার ভোরে ইসরাইলে হামাস আক্রমণ করলে টুইটারে একটি পোস্ট করেন মোদি। যেখানে মোদী হামাসের হামলার নিন্দা এবং এরকম কঠিন মুহূর্তে ইসরাইলের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন,”” ইসরাইলে সন্ত্রাসী হামলার খবর শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি।
ইসরাইলের নিহত মানুষ এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এমন কঠিন মুহূর্তে আমরা ইসরাইলের পক্ষে আছি””।
২/ ইরান
ইসরাইলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলায় হামাসের পক্ষ নিয়েছে ইরান।ইরানের গণমাধ্যম আইএসআইএ প্রকাশ করা হয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল-খামিনির উপদেষ্টা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিগত কয়েক বছরে সবচেয়ে বড় হামলা করার কারণে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাহিম সাফাবি নামে ঐ উপদেষ্টা বলেন,”” আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের স্বাগত জানাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন এবং জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকতে চাই””।
এরিনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও আক্রমণকে স্বাগতম জানিয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশাপাশি ইরানের অন্যান্য বড় শহরে হাজার হাজার মানুষ সমর্থন জানিয়েছে।
৩/ রাশিয়া
গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদে। তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পররাষ্ট্র নীতি ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল যুদ্ধের জন্য দায়ী।
৪/ যুক্তরাষ্ট্র
ইসরাইলের পক্ষে সব সময় অবস্থান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হতে হয় দেশটিকে। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছেন ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল যুদ্ধের জন্য একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ।
আর এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী ফোন আলাপে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফোন আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন,”” ইসরাইল তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড এবং জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। আর এজন্য তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রমণও করতে পারে””।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন ইসরাইলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাথরের মত। আর যেকোনো পরিস্থিতিতেই তা অটুট থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পক্ষপাতিত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এমনকি হোয়াইট হাউজের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ ফিলিস্তিনের প্রবাসীরা ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।
৫/ চীন
ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। সেই সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর উচ্চ পদের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছে।
আর চীন এ যুদ্ধকে বন্ধ করার জন্য দিন রাষ্ট্র তত্ত্বনীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। কেননা চীন বিশ্বাস করে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে এবং উভয় পক্ষ যুদ্ধের মনোভাব থেকে সরে আসবে। চীনের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে,”” ফিলিস্তিন ইসরাইলের বর্তমানের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে চীন খুবই উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন সংঘাতের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে একটি বিষয় জানা যাচ্ছে যে শান্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতা চলতে পারে না। দি রাষ্ট্র তত্ত্বের বাস্তবায়ন ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়। চীনের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল।
৬’/ ফ্রান্স
ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন বলেছেন তিনি ইসরাইলের উপর হামাসের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তিনি টুইটারে বলেন আমি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য পূর্ণ সংগতি প্রকাশ করছি। ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে হামাসের সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া নেদারল্যান্ড ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেছে এবং এরকম দুঃসময়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। এর বাইরেও বেলজিয়াম, ইউরোপীয় কমিশন, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, চেক প্রজাতন্ত্র ,ইউক্রেন এবং পোল্যান্ড ইজরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
৭/ সৌদি আরব
ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিলিস্তিনের উপর আগ্রাসন থামানোর আহ্বান জানান।
এছাড়াও সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
৮/ বাংলাদেশ
ফিলিস্তিন ইসরাইল বিষয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে আমরা ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম ধরনের আহ্বান জানাচ্ছি।
এবং উভয় পক্ষের নিরীহ মানুষের প্রাণহানি বন্ধের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধ বিরোধী আহ্বান জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরাইলিদের জোরপূর্ব ভূমি দখল এবং সেখানে বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে শান্তি নিয়ে আসবে না বলে দাবি করেন বাংলাদেশ।
৯/ লেবানন
গত কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে ইসরাইল এবং লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। আর গেল শনিবার হামাসের আক্রমণের মাধ্যমে এই উত্তেজনায় আরো ঘি ঢেলে দেওয়া হয়েছে।
কেননা ইসরাইলি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে হামাস লেবাননের সীমান্ত থেকে ইসরাইলে আক্রমণ চালিয়েছে। যা লেবাননের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে।
১০/ তুরস্ক
ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল যুদ্ধে সরাসরি কোন পক্ষ না নিলেও তুরস্ক জানিয়েছে দুই দেশকেই যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করতে। আর এজন্য তুরস্ক সর্বোচ্চ সহায়তা করবে বলে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন।
১১/ পাকিস্তান
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে পাকিস্তান সব সময় ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল দ্বন্দ্বে দিন রাষ্ট্র তত্ত্বনীতি মেনে চলে। কেননা পাকিস্তান বিশ্বাস করে দি রাষ্ট্রনীতি তত্ত্ব বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব/
১২/ আফগানিস্তান
ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধে আফগানিস্তান ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে বলেছে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের আক্রমণ আফগানিস্তান তীক্ষ্ণ নজরে রেখেছে এবং তারা এখানকার পরিস্থিতি সব সময় পর্যালোচনা করছে। কেননা ইসরাইল ইতোমধ্যেই ইসলামের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনা গুলোতে হামলা চালিয়েছে এবং ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করেছে। (ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধে কে কার পক্ষে)
বন্ধুরা আপনারা কি চান ফিলিস্তিন নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং ইসলাম বিশ্বের মধ্যে তার শান্তির বাণী পৌঁছে দিক। এ মন্তব্যের পক্ষে থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন এবং ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন।