বঙ্গবন্ধু রেল সেতু আপডেট! উত্তরবঙ্গের একসঙ্গে ছয় ট্রেন চলবে এমন একটি মহাসড়ক নির্মাণকাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছেন। এবারে বড় আকারে রেলপথ সংযোগের আওতায় আসতে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। যার শুরুটা হচ্ছে যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে।
রেল বিভাগ বলছে, পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তরের জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ৩৮টি রেল চলাচল করতে পারে সেখানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন ৬৮টি রেল চলাচল করতে পারবে এমন একটি সেতু তৈরি করছেন।
এই প্রসঙ্গে একই আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলাছেন। অপরদিকে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে দেশটির রেলবিভাগ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত রেলের মোট ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৫নং মেগা প্রকল্পটি হচ্ছে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু।
শুরুতে প্রাথমিকভাবে সেতুর অনুমোদিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে উদ্বোধনের আগেই নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা করা হয়। এরমধ্যে জাপানি আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাইকা) ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করছে। বাকি অর্থ বাংলাদেশের।
এই সেতুর ৩৮টি পিলার পাইলিংয়ের কাজ শেষ। আরো বেশ কয়েকটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষের দিকে চলে জাচ্ছে। জানুয়ারি পর্যন্ত এই সেতুর অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ।
দিন যতই যাচ্ছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নিমান কার্যক্রম। সেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরের যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা হবে তেমনি খুলবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর (এডিডিআই) অতিরিক্ত চিফ প্রকৌশলী মো. আহসান জাবির জানিয়েছেন।
বর্তমানে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-কালিহাতী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা এই দুই প্রান্তে রেল সেতু নির্মাণে ৫০টি পিলারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেতু এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে এসব বিষয়ে জানা যায়।
রেল সেতুর পিলার সম্পন্ন
বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছেই ৪.৮ কিলোমিটার দুই লাইনের রেল সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৮টির পাইলিংয়ের কাজ শেষ। বাকিগুলোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেখানে রাত-দিন কাজ চলছে। ২০২১ সালের মার্চে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে শেষ হওয়া পিলারগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে মাঝামাঝি পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ অংশে বাদ রয়েছে ৮টি পিলারের পাইলিং কাজ।
কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো জানিয়ে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ১০ আগস্টে নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ সীমান্তে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়।
তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে সময়ক্ষেপণসহ শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়েন। এরপরই বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের চিন্তা সামনে আসে। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে জাইকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। যমুনা নদীর দুই প্রান্তে দুটি ভাগে চলছে নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে সেতুর পূর্বপাশে টাঙ্গাইল অংশে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের মাঝে সুপার স্ট্রাকচার গার্ডারের কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, আগে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে নদীর দুই প্রান্তে সমানতালে কাজ চলানো সম্ভব হয়নি। তবে এখন বেশ জোরেসোরে কাজ চলছে।
নদী ওপর মহাকর্মযজ্ঞ
যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রকল্প এলাকায় চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে পাইলিংসহ সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট নানা কাজ। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয়েছে প্রকল্পের এলাকা।
বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সেতুপূর্ব-উত্তর পাশের গাইড বাঁধের কাছ থেকে পাইল বসানোর কাজ শুরু হয়। এখন ভারি ক্রেনের সাহায্যে হ্যামার দিয়ে বসানো হচ্ছে পাইলিং পাইপ। হ্যামারের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো প্রকল্প এলাকা। প্রকল্পে দেশি ও বিদেশি কোম্পানির কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।(বঙ্গবন্ধু রেল সেতু আপডেট)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৪.৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেল সেতু নির্মাণ। এই প্রকল্পের মধ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উভয় প্রান্তে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাস্ট, প্রায় ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ। এছাড়া সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে থাকবে নতুন স্টেশন ভবন, ইয়ার্ড রিমডেলিং ও রেলওয়ে সেতু মিউজিয়াম। একই প্রকল্পের আওতায় কিছু নদী শাসন ও সংস্কার কাজও করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে বিপ্লবের হাতছানি বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে সুপার গতিতে চলবে ৬৮ ট্রেন
উত্তরবঙ্গের ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণকাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এবারে বড় আকারে রেলপথ সংযোগের আওতায় আসতে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। যার শুরুটা হচ্ছে যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে। রেল বিভাগ বলছে, পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তরের জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ৩৮টি রেল চলাচল করতে পারে সেখানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন ৬৮টি রেল চলাচল করতে পারবে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। অন্যপাশে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে দেশটির রেলবিভাগ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত রেলের মোট ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৫নং মেগা প্রকল্পটি হচ্ছে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু।
শুরুতে প্রাথমিকভাবে সেতুর অনুমোদিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে উদ্বোধনের আগেই নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা করা হয়। এরমধ্যে জাপানি আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাইকা) ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করছে। বাকি অর্থ বাংলাদেশের।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতু আপডেট এরপর দ্বিতীয় পর্ব আসবে।