বলিউডে ফ্লপ সিনেমা কয়টি! এবছর বলিউডের মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সিনেমা নাকি এতই বাজে ছিল যে সমালোচকরা রেটিংয়ে ফাইভস্টারদের মধ্যে তাকে জিরো স্টার দিয়েছিলেন।
মানুষ সিনেমাটি দেখতে না আসায় দুই থেকে তিন দিন পরে তা হল থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। ৬৫ কোটি রুপীর ঐ সিনেমায় প্রচারণা সত্বে ব্যয় করা হয় ২০ কোটি রুপি। টিকিট বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৩৮.৩৩ কোটি রুপি। ট্যাক্স বাদ দিলে টোটাল বক্স অফিস কালেকশন দাঁড়ায় ৩২.২০ কোটি রুপি।
বিদেশে সিনেমাটির দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ১০ কোটি। কিন্তু সিনেমাটি ১০৫ কোটিও বেশি রুপি কামিয়েছে। একটি ফ্লপ মুভি কিভাবে এত টাকা ইনকাম করে। এটাই বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি রহস্য। আগের দিনে চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের সম্পত্তির সবগুলোই বন্ধক রেখে সিনেমা বানাত। যদি কোনো কারণে সিনেমা ফ্লপ হতো তাহলে তারা দেউলিয়া হয়ে যেতেন। মুভি তৈরি করা তাই তখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
এরপর বলিউডে এলো যশ রাজ, ইউটিভি, বালাজি ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি বড় বড় প্রোডাকশন হাউজ। স্বাধীন মুভি মেকাররা ঝুঁকি নিয়ে যা করত এসব কোম্পানি সেই কাজটি করতে শুরু করল। এভাবে চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ আনার অনেক রাস্তাও খুলে গেল। যেমন ব্যান্ড বাজা বারাত সিনেমা তৈরির সময় অভিনেতা রাণবীর সিং এর বাবা ২০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করলে সিনেমাটিতে সে অভিনয়ের সুযোগ পায়। যদিও বর্তমানে রণবীর সিং তা অস্বীকার করে।
বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মে সিনেমা বিক্রি
অর্থ আয়ের রাস্তা আরো আছে। সিনেমা হচ্ছে একটি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি। তাই নির্মাতারা এর গান এবং সম্পূর্ণ সিনেমাটি নিয়ে কে কতদিনের জন্য ব্যবসা করতে পারবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।
সিনেমা দেখা এবং এর থেকে আয় ছিল সিঙ্গেল স্ক্রিন হল ভিত্তিক। এখনকার প্রোডাকশন হাউসগুলো মুভির right television গুলোকে দিয়েও আয় বাড়াচ্ছে। ফলে ফ্লপ সিনেমা গুলো হল থেকে নেমে যাওয়ার পর টিভিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানে বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভ তোলা তো হচ্ছেই।
পাশাপাশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন ঘরে ঘরে ড্রয়িং রুমে পৌঁছে গেছে। সিনেমা যতবার দেখা হয় তার চেয়ে এর গানগুলো শোনা হয় অনেক বেশি বার। youtube এর মিউজিক ভিডিও থেকে যত ভিউ তত লাভ।
ফ্লপ মুভিগুলো কিনে কিনে অজনদার হয়ে ওঠে ওটিপি প্ল্যাটফর্ম গুলো। নেটফ্লিক্স এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলোর কার স্টোকে কতগুলো সিনেমা রয়েছে তাই নিয়ে ব্রাগিং চলে। সাবস্ক্রাইবার বারে প্ল্যাটফর্ম গুলোর। এখানে মুভির ভিউ হলে তাদের লাভ। সেই সাথে মুভি মেকারের পকেটেও লাভ আসে একটি অংশ।
এই পোস্টের প্রথমে আলোচনা করা ছবিটি ওটিটি থেকে পেয়েছে চল্লিশ কোটি, মিউজিক রাইট থেকে পেয়েছে ১০ কোটি আর টিভি রাইট থেকে পেয়েছে পনেরো কোটি। এভাবে সিনেমাটি হলে আসার আগেই নিজেদের লাভ পেয়ে গেছে।
যে সিনেমা গুলো ভারতের চেয়েও বেশি আয় করেছিল
বলিউডে ফ্লপ সিনেমা কয়টি একটি বিষয় চিন্তা করুন তো বৃটেনে ভারতীয় মুভির শুটিং কেন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কারণ এতে ট্যাক্স ছার পাওয়া যায়। এখন আন্তর্জাতিক বাজারকে টার্গেট করতে international ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে বলিউডের সিনেমা তৈরি হচ্ছে।
শাহরুখ খানের ১৪ টি সিনেমা বলিউডের বাইরে দশ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ কমিয়েছে। তার ২০১৫ সালের ফিল্ম দিলওয়ালে ভারতে আয় করেছে ৭৪ কোটি রুপি। কিন্তু সমগ্র পৃথিবী থেকে আয় করেছে ১৭০ কোটি রুপি। আমির খানের সিক্রেট সুপারস্টার সিনেমাটি ভারতে ৬৩ কোটি রুপি কামালেও শুধুমাত্র চীনেই এই ছবি আয় করেছে ১৬৩ কোটি রুপি।
সিঙ্গেল স্ক্রিন হল বন্ধের কারন
সিনেমা থেকে এত আয় তাহলে সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন। কেন সেগুলোর জায়গা নিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স হল। সিঙ্গেল স্ক্রিন হলে টিকিটের দাম যেখানে ৫০ রুপি সেখানে মাল্টিপ্লেক্স হলে টিকিট বিক্রি হয় ২০০ রুপিতে। তাহলে ব্যবসাটা হচ্ছে কিভাবে?
ব্যবসা বুঝে প্রোডাকশন হাউসগুলো দেখেছে সিঙ্গেল স্ক্রিন হলে ১ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষকে মুভিটি দেখিয়ে যে আয় হয় সেই মুভিটি মাল্টিপ্লেক্সে ২০ লাখ উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষকে দেখিয়ে তার চেয়ে বেশি অর্থ কামানো যায়।
কিভাবে? সিনেমা হলে টিকিটের চেয়ে পপকন এবং কোলড্রিং বিক্রি করে বেশি টাকা কামানো যায়। বোতলে ভরা কোমল পানীয়র যে দাম একই ড্রিংক বরফ দিয়ে ডিস্কো গ্লাসে ঢেলে বিক্রি করলে তা দ্বিগুনেরও বেশি দাম। ঝা চকচকে মাল্টিপ্লেক্সের যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই বিজ্ঞাপনের পোস্টার সেখান থেকেও আসছে আয়।
সিনেমার শুরুতে চলে বিজ্ঞাপন। ইন্টারভ্যালুর বিজ্ঞাপন যেগুলো স্ক্রিপ্ট করার কোন সুযোগ নেই। একইভাবে অর্থ কামানোর রাস্তারও তেমন অভাব নেই।
বন্ধুরা উপরে আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম বলিউডের প্রোডাকশন হাউজগুলোর এখন মূল টার্গেট উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। কেননা তারা এ সকল মানুষের মাধ্যমে ফ্লপ খাওয়া সিনেমা গুলোকেউ খুব সহজে লাভের মুখ দেখাতে সক্ষম।
বলিউডের ফ্লপ খাওয়া সিনেমা গুলোকে নিয়ে আপনার কি মতামত তা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং বলিউডে আসন্ন সুপারহিট সিনেমা গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের পরবর্তী পোস্টগুলো ফলো করুন।