বিটকয়েন এর দাম কত! বিটকয়েন হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। বর্তমানে ১ বিটকয়েনের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৪৪,৫০০০০ লক্ষ টাকা।
এটি এক ধরনের বিকেন্দ্রিক ডিজিটাল মুদ্রা । যেকোনো ব্যাক্তি পরিচয় গোপন রেখে বিটকয়েনে লেনদেন করতে পারে। বিটকয়েনের মুল মন্ত্র হল সামান্য কিছু লোক মুদ্রা ব্যাবতা নিয়ন্ত্রণ করারা চেয়ে মুদ্রা ব্যাবস্থায় কারো নিয়ন্ত্রণ না থাকাই ভাল। বিটকয়েনকে অনেকেই ভবিষ্যৎ এর মুদ্রা হিসেবে মনে করে।
আজকের পোস্টটিতে আমরা জানবো বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে। আর জানবো এটির ভবিতসত সহ অন্যান্য তথ্য। তাহলে চলুন শুরু করি আজকের পোস্টটি।
বিটকয়েনকে ভাল ভাবে জানতে হলে বর্তমান বিশ্বের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির অসুবিধা বুজতে হবে। আমরা নিরাপদে অর্থ রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে বিশ্বাস করে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা জমা রাখি। কিন্ত কিছু দুর্নীতি বাজ ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের টাকা নিয়ে রিতিমত ছিনিমিনি খেলে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দা তার অন্যতম উদাহরণ। আমেরিকার জনগনের গুচ্ছিত টাকা ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। ব্যবসায় লোকসান করে স্বাভাবিক ভাবে তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারেনা। ফলে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় এক ভয়াবহ মন্দা।
সেই মন্দার জন্য শুধু ব্যাংক বা ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ীরা দায়ী নয় দায়ী সরকারের ভুল পলিসি এবং ব্যবস্থাপনাও। এর অন্যতম কারণ যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতি এক সুতোয় গাথা। তাই আমেরিকার মন্দা অন্যান্য দেশে ছরিয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগে নি। সেই অর্থনৈতিক মন্দায় বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। তখন আমেরিকার জনগণ বড় বড় ব্যাংক এবং সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়। আর এ কারণেই ব্যাংক এবং সরকারি হস্তক্ষেপ এড়িয়ে স্বাধীন অর্থ ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিটকয়েনের জন্ম হয়েছিল। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে সীমাবদ্ধ নয় বরং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ব্যক্তির কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিটকয়েন নিয়ন্ত্রিত হয়।
সাতাশি নাকামুত
২০০৮ সালের ১৮ই আগস্ট bitcoin.org ওয়েব সাইটটি নিবন্ধিত হয়েছিল। সে বছর নভেম্বরে সাতাশি নাকামুত ছদ্মনামে একজন বিটকয়েন কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। ২০০৯ সালের সাতাশি নাকামুত হালফিনি নামে এক ব্যক্তিকে ১০ বিটকয়েন প্রদানের মাধ্যমে বিটকয়েন লেনদেনের সূচনা করেন। বিটকয়েন হল একটি পিয়ার টু পিয়ার ব্যবস্থা।
অর্থাৎ প্রেরক এবং প্রাপক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে সরাসরি বিটকয়েন লেনদেন সম্পূর্ণ হয়। তাই এখানে কোন প্রতিষ্ঠানের দরকার হয় না। লেনদেন কারি ব্যক্তিরা ব্যতীত তৃতীয় কোন ব্যক্তির পক্ষে এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব নয়। বিটকয়েনের মত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আর্থিক লেনদেনের সম্পূর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে ক্রিপটোগ্রাফি । ক্রিপটোগ্রাফি দ্বারা লেনদেনের সত্যতা যাচাই করা হয়। বিটকয়েন ক্রিপটোগ্রাফি ব্লক চেনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়।
ব্লক চেন হলো এক ধরনের উন্মুক্ত হিসাবের খাতা যে কোন ব্যক্তি চাইলেই দুর্নীতিবাদ ব্যাংকারের মত হিসেবে গরমিল করতে পারবে না। নতুন বিটকয়েন উৎপাদন করার জন্য অত্যন্ত জটিল কম্পিউটিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যাকে বলা হয় মাইনিং।
বিটকয়েন উৎপাদন
কয়েক বছর আগেও সাধারণ বাসাবাড়ি কম্পিউটারে মাইনিং করা যেত কিন্তু বর্তমানে বিটকয়েন মাইনিং করে লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ছোটখাটো ডাটা সেন্টার গড়ে তুলতে হয় তারপরও এই বিটকয়েন বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। বিটকয়েন চাইলেই ইচ্ছামত উৎপাদন করা যাবে না। বিটকয়েনের সংখ্যা কখনোই ২ কোটি ১০ লাখের বেশি হতে পারবে না। প্রতিটি বিটকয়েন ১০ কোটি ভাগে বিভক্ত। এগুলকে বলা বলা হয় ছাতসি। 2140 সালের পর থেকে নতুন করে আর কোন বিটকয়েন উৎপাদন করা যাবে না।
স্বর্ণের উপর মানুষের আস্থার কারণে স্বর্ণের দাম যেমন বেড়ে যায় ঠিক একই ভাবে বিটকয়েনের উপর মানুষের ক্রমবর্ধমান আস্থইয় একে বর্তমান পর্যায়ে নিয়েছে এসেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে বিটকয়েনের দাম দিন দিন বাড়তেই থাকে লোকজন বিটকয়েন কে স্টোক মার্কেটের মত ব্যবহার করতে শুরু করে তখন অল্প দামে কয়েন কিনে বেশি দামে বিক্রি করার হিরিক পরে যায়।
বিটকয়েনের মূল্য ধস
গত কয়েক বছরে বিটকয়েন ধারণার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে। বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক লেনদেন এবং প্রতারণার কারণে ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে বিটকয়েনের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এরপর থেকেই অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সির আসল মূল্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। যদিও এখন বিটকয়েনের বাজার আগের তুলনায় অনেকটা স্থিতিশীল। মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, পেপালস ও টারবালছের মত বেশ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনে কেনাবেচা সমর্থন করে।
বিটকয়েনের চালিকাশক্তি ব্লগ চেইন রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এত বিপুল পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয় যা অনেক দেশের ব্যবহৃত জ্বালানির চেয়েও বেশি। বিটকয়েন তৈরি করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর যে পরিমাণ চাপ পড়ছে বিশেষজ্ঞরা তাতে বেশঙ্কিত। বর্তমানে বিটকয়েনের লেনদেন প্রক্রিয়া খুব ধীরগতিতে পরিচালিত হয়। জনপ্রিয় পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ভিসা প্রতি সেকেন্ডে ২৪ হাজার লেনদেন প্রক্রিয়াজাত করে। অন্যদিকে বিটকয়েন প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৭টি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে।
যেকোনো মুদ্রার প্রধানত ২টি দিক থাকে,
১/ কার্যকর বিনিময় যোগ্যতা
২/ মুদ্রা মানের ইস্থিতিসিলতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিটকয়েনের এ দুটোর মধ্যে কোনোটিই নেই। বিটকয়েনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিটকয়েন লেনদেন কারী সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায় না। অর্থাৎ পরিচয় গোপন করে লেনদেন করা হয়। সে কারণে একটা সময় বিটকয়েন ব্যবহার করে মানুষ নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। সিল্ক রোড নামের একটি ডার্ক ওয়েবসাইটে বিটকয়েনের বিনিময়ে হেরোইন, কোকেন এলএসডির মত ভয়াবহ মাদক অবাধে বিক্রি হতে থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিকে স্বীকৃতি প্রদান
এছাড়া কালোবাজারি এবং অর্থপাচারেও বিটকয়েন ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনে অনেক বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ রয়েছে। সেখানে যেকোনো মুদ্রা কে বিটকয়েনে এবং বিটকয়েন কে অন্য কোন মুদ্রা রূপান্তর করা যায়। কোন দেশের কেন্দ্রিও ব্যাংক বা সরকারি অনুমোদন ছাড়া সকল অর্থই অচল। সে কারনে ক্রিপ্টো কারেন্সি বা বিটকয়েন অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। ২০১৮ সালে মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি ফতোয়া দিয়েছিলেন বিটকয়েনে লেনদেন ইসলাম সমর্থিত নয়। ২০১৭ সালে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন সহ সকল ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন নিষিদ্ধ করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় ক্রিপ্টোকারেন্সি মালিকানা সংরক্ষণ এবং লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটি কোন অপরাধ নয়। সম্প্রতি এল সালবার দো বিশ্বের প্রথম দেশ যারা কিনা বিটকয়েন কে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিটকয়েন থেকে স্থায়ী মুদ্রার মূল্য
BTC | দেশ | মূল্য |
1 BTC | USD | 29,960.59 |
1 BTC | TRY | 749,913.45 |
1 BTC | RUB | 2508, 899.40 |
1 BTC | EUR | 27,572.73 |
1 BTC | Bangladesh | 44,50000 |
বন্ধুরা আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদেরকে অনেক ভাল লেগেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যান্য মুদ্রা সম্পর্কে জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন ধন্যবাদ।