ক্রিপ্টোকারেন্সি

বিটকয়েন মাইনিং কি এবং কিভাবে বিটকয়েন মাইনিং করা হয়?

বিটকয়েন মাইনিং কি! বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে যেমন মাটি খুরে গোল্ড বা ডায়মন মাইনিং করা হয় তেমন কম্পিউটার গ্রাফিক্স কাড বা ক্রিপ্টো মাইনিং এর জন্য তৈরি করা এসিক মেশিনের মাধ্যমে বিটকয়েন মাইনিং করা হয়।

বিটকয়েন মাইনিং কি

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা এ পোস্টের মাধ্যমে জানবো কি ভাবে বিটকয়েন মাইনিং করা হয়। তাহলে কথা না বারিয়ে চলুন শুরু করি আজকের পোস্টটি।

মাইনিং সম্পর্কে জানার আগে চলুন একটু জেনে আসা জাক বিটকয়েনের ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ করা হয় কীভাবে?

বিটকয়েন লেনদেন কিভাবে সম্পন্ন হয়? (How is Bitcoin Transation Completed?)

ধরুন আমি থাকি রাজশাহীতে আপনি থাকেন ঢাকায়। আমি যদি এখন আপনাকে বলি এক লক্ষ টাকা পাঠাতে তাহলে আপনি কি করবেন? আপনি প্রথমে যাবেন ব্যাংকে এবং ব্যাংকার কে বলবেন আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আমার একাউন্টে এক লক্ষ টাকা পাঠাতে। তারপর ব্যাংকার আপনার একাউন্ট থেকে এক লক্ষ টাকা মাইনাস করবে এবং আমার আমার একাউন্টে ১ লক্ষ টাকা প্লাস করে দিবে এবং এই ট্রানজেকশন টি ব্যাংকের লেজারে সংরক্ষণ করা থাকবে। কিন্তু বিটকয়েন এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আপনি যদি আমাকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করতে চান তাহলে আপনি আপনার যে কোন ওয়ালেটে যাবেন এবং আমার এড্রেসে এক লক্ষ টাকা সেল করবেন।

বিটকয়েন এবং ব্যাংক ট্রান্সফারের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন ব্যাংক দিয়ে যদি আপনি লেনদেন করতে যান তখন ব্যাংক আপনার কাছ থেকে বড় একটি ফি কাটবে বা ব্যাংক যেকোনো সময় আপনার ট্রানজেকশন আটকে দিতে পারে আবার ব্যাংকে থাকা অর্থ যে কোন সময় হ্যাক হতে পারে। এমনকি ব্যাংক ব্যাংক ক্রাফ্টটো হতে পারে। অন্যদিকে বিটকয়েনের মাধ্যমে আপনি যখন লেনদেন করবেন তখন আপনার ট্রানজেকশনটি যেকোন একজন মাইনার কমপ্লিট করে এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড সকল কম্পিউটার এই ট্রানজেকশনটি ভেরিফাই করে এবং আপনার ট্রানজেকশনটি বিটকয়েনের লেজারে  আপলোড করা থাকবে। এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ যদি কোন মাইনার গোলমাল করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে অটোমেটিক নেটওয়ার্ক থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বিটকয়েন কোথা থেকে আসে (where does Bitcoin come from)

বিটকয়েন মূলত একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সাতাশি ন্যাকামোতো নামে কোন এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এটিকে এমন ভাবে তৈরি করেছেন যাতে মানুষ ডেইলি আদান প্রদান করতে পারে।  এটির মাধ্যমে কোন প্রকার ব্যাংক ছাড়াই লেনদেন করতে পারেন। কিন্তু ২০০৭-৮ এর দিকে এ ধরনের ধারণা ছিল খুবই ইউনিক।

যার ফলে সাতাশি ন্যাকামোতোর সামনে কয়েকটি প্রশ্ন দার হয়। যেমন বিটকয়েনের ট্রানজেকশন গুলি কমপ্লিট করবে কে? এবং মার্কেটে বিটকয়েন এর সাপ্লাই কিভাবে দেওয়া হবে? বিটকয়েনের ট্রানজেকশন কমপ্লিট করার জন্য সাতাশি ন্যাকামোতো মূলত মাইনারদের কে সিলেক্ট করেন। মূলত মাইনাররা তাদের কম্পিউটারের পাওয়ার ব্যবহার করে ট্রানজেকশন করবে ওগুলোকে ভেরিফাই করবে এবং বিটকয়েন নেটওয়ার্ক এর সি কিউট করবে। আর এই কাজের জন্য মাইনাররা একটি ট্রানজেকশন ফি পাবে। বিটকয়েনের সাপ্লাইয়ের জন্য সাতাশি ন্যাকামোতো মূলত মাইনাদেরকেই সিলেক্ট করেন।

এলগারিদম অনুযায়ী ট্রানজেকশন ফি এর পাশাপাশি প্রতি ব্লক এর জন্য নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট এর বিটকয়েন রিলিজ হয় এবং মাইনারদের মধ্যে এটি রিওয়ার্ড হিসেবে বিতরণ করা হয়। শুরুর দিকে মাইনাররা প্রতি ব্লকের জন্য ৫০টি বিটকয়েন রিওয়ার্ড হিসেবে পেতো। হালিং এর মাধ্যমে প্রতি চার বছর পর পর এই রিওয়ারটিকে অর্ধেক করে দেওয়া হয় তার ফলে বিটকয়েনের সাপ্লাই কমতে থাকে এবং বিটকয়েন এর দাম বাড়তে থাকে। বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সাপ্লাই হল ২ কোটি ১০ লক্ষ বিটকয়েন। এলগারিদম অনুযায়ী শেষ বিটকয়েন তৈরি হতে সময় লাগবে ২১৪০ সাল পর্যন্ত।

বিটকয়েন খনির ইতিহাস (history of Bitcoin mining)

২০০৯ সালে বিটকয়েন লঞ্চ হওয়ার পর এর মাইনিং করতো শুধুমাত্র সাতাশি ন্যাকামোতো এবং প্রোগ্রামার helpin । তখন তারা তাদের পার্সোনাল কম্পিউটার দিয়েই মাইনিং করতো। তারপর আস্তে আস্তে নেটওয়ার্কে মাইনারের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পার্সোনাল কম্পিউটার দিয়ে মাইনিং করা আর প্রফিটেবল থাকে না। ২০১২ সালের দিকে কম্পিউটারের গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে মাইনিং করার আইডিয়া প্রকাশ পায় এবং এ আইডিয়াটি খুব শীঘ্রই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে ২০১২ সালের শেষের দিকে গ্রাফিক্স কার্ডের সংকট দেখা দিতে শুরু করে এবং মার্কেটে থাকা গ্রাফিক্স কার্ডের দামও বেড়ে যায় হুহু করে। ২০১৩ সালে ক্যানন ক্রিয়েটিভ নামে চাইনিজ কোম্পানি এসিক মাইনার রিলিজ করে।

এটি মূলত মাইনিং করার জন্যই তৈরি করা হয়। যার ফলে অনেক কম খরচে বেশি মাইনিং করা যেত। লঞ্চ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এই মাইনিং মেশিন গুলো মাইনারদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাইনিং ফার্মিং এসিক মাইনার দিয়ে মাইনিং করে। এসব মেশিন খুব পাওয়ারফুল হওয়ার কারণে হোনার কম্পিউটার বা গ্রাফিক কার্ড দিয়ে মাইনিং করা ততটা প্রফিটেবল না।

কম্পিউটার খনির অসুবিধা (computer mining difficulty)

বিটকয়েনের শুরুর দিকে যখন সাতাশি ন্যাকামোতো এবং প্রোগ্রামার হেল ফেনী মাইনিং করত। তখন তারা তাদের পার্সোনাল কম্পিউটার দিয়ে দিনে হাজার হাজার বিটকয়েন মাইনিং করতে পারত। কারণ নেটওয়ার্কে তখন তত বেশি মাইনার ছিল না এবং প্রতি ব্লকে যে ৫০ বিটকয়েন রিলিজ হতো তা সে কয়েকজনের মধ্যেই ভাগ করে দেওয়া হতো।

এই জন্য সাতাশি ন্যাকামোতো খুব অল্প সময়ে এক মিলিয়ন বিটকয়েন মাইনিং করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন বিটকয়েন নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা শুরু হলে অনেকেই তাদের পার্সোনাল কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং করা শুরু করে। কিন্তু প্রতি ব্লগে সেই ৫০ টি বিটকয়েনেই উৎপাদন হত এবং নেটওয়ার্কে থাকা সকল মাইনারদেরকে এটি ভাগ করে দেওয়া হতো। এভাবেই মূলত মাইনিং ডিফিকাল্টি তৈরি হয়। যত বেশি মাইনার বিটকয়েন নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে যুক্ত হবে তত মাইনিং ডিফিকাল্টি বাড়বে এবং বিটকয়েন নেটওয়ার্ক ততো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

বিটকয়েন মাইনিং কি লাভজনক (Is Bitcoin mining profitable)

বর্তমান সময়ে মাইনিং খুব একটা প্রফিটেবল না। কারণ অনেক বড় বড় মাইনিং ফার্ম লার্জে স্কেলে মাইনিং করার ফলে মাইনিং ডিফিকাল্টি বেড়ে যাচ্ছে। তবে মাইনিং প্রফিটেল ডিপেন্ড করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। যেমন বিদ্যুৎ খরচ এবং আপনার ব্যবহারকৃত মাইনার। আপনি কোন মাইনিং মেশিন ব্যবহার করছেন এবং তা কত কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ খরচ করে এবং তার মাইনিং ক্যাপাসিটি কত। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের মাইনিং ক্যালকুলেশনের ওয়েবসাইট রয়েছে আপনি চাইলে আপনার  প্রফিট লস ঐখান থেকে ক্যালকুলেট করতে পারেন।

খনির অন্যান্য ধরন (Others types off mining)

ক্লাউড মাইনিং

ক্লাউট মাইনিং বলতে বুঝায় আপনি সরাসরি কোন মাইনিং রিড বা কম্পিউটার না কিনে অন্য জনের কাছ থেকে মাইনিং পাওয়ার কিনা। এটির মানে হল আপনি নিজে কোন ঝামেলায় না গিয়ে অন্য মাইনিং কোম্পানিকে টাকা প্রদান করবেন এবং তারা সে টাকা দিয়ে মাইনিং মেশিন কিনবে এবং আপনাকে ওইখান থেকে প্রফিট প্রদান করবে। আইডিয়াটি ভালো হলেও অনলাইনে থাকা প্রায় সকল কোম্পানি এস ক্যাম হয়ে থাকে। আমি আপনাদেরকে না করব এ ধরনের কোনো মাইনিং ফার্মে বিনিয়োগ করতে।

মোবাইল মাইনিং

অনেকগুলো মোবাইল অ্যাপ আছে। যেগুলো থেকে আপনি মোবাইলের মাধ্যমে বিটকয়েন মাইনিং করতে পারেন। টেকনিক্যালিও এটা সত্য। কিন্তু যদি আপনি মোবাইল দিয়ে মাইনিং করতে চান তাহলে আপনার ইনকাম হবে খুবই অল্প। যেমন ধরি কোন মোবাইলের রেম ৮ জিবি এবং এটির দাম হল ২২ হাজার টাকা। যদি আপনি এ মোবাইল দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টা মাইনিং করেন তাহলে আপনার ২৪ ঘন্টায় ইনকাম হবে মাত্র ৭ সেন্ট বা ৭ টাকা। তাই মোবাইল দিয়ে মাইনিং না করাই উচিত।

ওয়েব মাইনিং

২০১৭ সালের দিকে বেশ কিছু ওয়েবসাইট তাদের ভিজিটরের কম্পিউটারের পাওয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য। এই সিস্টেমটিকে ক্রিপ্টো জ্যাকিংও বলা হয়। বর্তমানে প্রায় ৮৫ হাজারেরও বেশি ওয়েব সাইটে এই সিস্টেমটি চালু রয়েছে।

বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে জনপ্রিয় প্রশ্ন (Popular Questions about Bitcoin mining)

কি হবে যদি গুগোল তার সকল কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং শুরু করে?

গুগল যদি তার সকল কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং শুরু করে তাহলে গুগল মাত্র ৫২৫ ভাগের এক ভাগ বিটকয়েন মাইনিং করতে পরবে। আপনি কি মাইনিং করতে পারবেন? বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো মানুষ যেকোনো জায়গা থেকে বিটকয়েন মাইনিং করতে পারবে। আপনি চাইলেই আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার দিয়েও বিটকয়েন মাইনিং শুরু করতে পারেন। কিন্ত ইস্পেসালি ক্রিপো মাইনিং এর জন্য মেসিনের কাছে আপনার কম্পিউটারের পাওয়ার কিছুই না।

কিহবে যদি কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং করা হয়?

গুগলের কাছে থাকা ৫৩ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটা আমাদের কাছে থাকা নরমাল কম্পিউটারের চেয়ে ১০ কোটি গুন বেশি ফাস্ট । তারা যদি তাদের এই কম্পিউটার দিয়ে মাইনিং শুরু করে তাহলে বিটকয়েন মাইনিং ডিফিকাল্টি অনেক বেরে যাবে। কিন্ত গুগল এটি না করার কারন হল গুগল যে টাকা ইনকাম করে এ কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যাবহার করে ১৩০ ভাগের ১ ভাগ ইনকাম হবে বিটকয়েন মাইনিং করে। তাই মুলত গুগল বিটকয়েন মাইনিং করেনা।

বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম কিভাবে বিটকয়েন মাইনিং করতে হয়। এবং বিটকয়েন মাইনিং করতে গেলে কত টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। ওটির মাধ্যমে কি রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় কিনা। ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।