বিটকয়েন হালবিং কি! বন্ধুরা আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো বিটকয়েন হালবিং নিয়ে। আমরা হয়তো সকলি জানি আর মাত্র ১ বছর আছে বিটকয়েন হালবিং এর।
প্রতিটি হালবিং এর পর বিটকয়েন মেসিপ পরিমাণে পাম্প করে থাকে। এটার ফান্ডামেন্টাল কারণ হলো এর সাপ্লাই রিডিউস হয় মার্কেট থেকে। যদিও বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সাপ্লাই হল 21 মিলিয়ন এবং বর্তমানে অলরেডি মাইন্ড করা হয়ে গেছে 19 মিলিয়ন। তাই বর্তমানে প্রতিটা ব্লক মাইন করার জন্য বিটকয়েনের এখানে রিওয়ার্ড দেওয়া হয় 6.25 btc করে। যেটা নেক্সট হালবিং এর পরে 3 পয়েন্ট 25 হয়ে যাবে।
এটার মানে হল বিটকয়েনের সাপ্লাই মার্কেট থেকে আরেক দফা কমে যাবে। আজকে আমি এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে বিটকয়েন হালবিং 2024 সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পোস্টটি স্ক্রিফট না করে পুরটা পরার অনুরধ রইল।
বন্ধুরা বিটকয়েন হালবিং 2024 সম্পর্কে জানতে হলে আগে আমাদেরকে জানতে হবে বিটকয়েন হালবিং কি? তাহলে চলুন আগে জেনে নেই বিটকয়েন হালবিং সম্পর্কে।
বিটকয়েন হালবিং কি?
হালবিং বিটকয়েন এর মধ্যে একটি ইভেন্ট। যে ইভেন্টের মাধ্যমে যারা বিটকয়েন মাইনার রয়েছে তাদের বিটকয়েনটা বা তাদের রিওয়ার্ডটা এখানে অর্ধেক করে দেওয়া হয় এবং তারা ফিফটি পার্সেন্ট কম রিওয়ার্ড পাওয়া শুরু করে। আমরা যদি দেখি তাহলে নিচে দেখতে পাবো
Bitcoin Halving Event- | Block Height- | Block Reward- | Date- |
Sixth Halving | 1,260,000 | 0.78125 | Month TBC, 2032 |
Fifth Halving | 1,050,000 | 1.5625 | Month TBC, 2028 |
Fourth Halving | 840,000 | 3.125 | March-May 2024 |
Third Halving | 630,000 | 6.25 | May 11, 2020 |
Second Halving | 420,000 | 12.5 | July 9, 2016 |
First Halving | 210,000 | 25 | November 28, 2012 |
Genesis Block | 1 | 50 | January 9, 2009 |
এখানে যদি দেখেন তাহলে দেখা যাবে বিটকয়েনের হালবিং সর্বপ্রথম 2009 সালে হয়েছিল এবং 2009 সালে 50 টি বিটকয়েন প্রতি ব্লগে রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হতো। এরপরে 2012 সালে পুনরায় হালবিং হলে পঞ্চাশের অর্ধেক 25 টি বিটকয়েন প্রতি ব্লগে রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হয়। এরপর সেকেন্ড হালবিং হয়েছিল 2016 সালে। যেখানে 25 এর অর্ধেক 12.5 বিটিসি প্রতি ব্লগের মধ্যে রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হয়। এরপর দেখা যায় বিটকয়েনের থার্ড হালবিংহয়েছিল 2020 সালে এবং পুনরায় এখানে বিটকয়েন অর্ধেক 6.2 বি টি সি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর দেখা যাচ্ছে বিটকয়েনের আপকামিং হালবিং 2024 সালে যেখানে পুনরায় বিটকয়েন কে প্রতিটি ব্লগে 3.125 করে দেয়া হবে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিটকয়েন যখনই তার অল টাইম হাইট তৈরি করে না। কারন এরপরে বিটকয়েন একটা বেয়ার মার্কেটের মধ্যে বা কোল্ড মার্কেট এর মধ্যে চলে যায়। এরপর বছর খানিক পরে মার্কেট ঠান্ডা হলে দেন আবার যখন হালবিং কাছাকাছি আসে তখন বিটকয়েনের মার্কেট আপ ডাউন করতে শুরু করে।
আমরা যদি দেখি তাহলে দেখতে পাবো 2009 সালে প্রথম হালভিং হওয়ার পর প্রায় 3 মিলিয়ন পারসেন বিটকয়েন আপ করেছিল। এরপরে দেখা যায় 2012 সালে প্রায় 9-10 হাজার বিটকয়েন পার্সন আব হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে 2016 সালে 4000% পাম করেছিল এবং 2020 সালের যদি দেখা যায় তাহলে 700% পার্সেন্ট এর মত বিটকয়েন পাম্প করেছিল। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে বিটকয়েনের মার্কেট যত বড় হয় বিটকয়েনের মধ্যে প্রাইস এবিলিটি তত কমবে।
কারণ হলো বড় মার্কেট ক্যাপের একটি কয়েন কে কিন্তু আপের ডাউন করতে অনেক পরিমাণ খরচ হয় বা অনেক পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হয়। যার কারণে ছোট বাইসেলে এখানে তেমন একটা ইফেক্ট পড়ে না। আপনি হয়তোবা খেয়াল করবেন নরমাল কয়েনের মধ্যে 1 মিলিয়ন ডলার সেল করলে 10% থেকে 20% ডাউন হয়ে যায়।
কিন্তু বিটকয়েনের মধ্যে আপনি 100 মিলিয়ন ডলার সেল করতে পারবেন আবার 500 মিলিয়ন ডলারও সেল করতে পারবেন। বিটকয়েন তেমন বেশি ডাউন হবে না। কিন্তু এখানে ধরেন, কয়েক বিলিয়ন ডলার খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আপনি সেল করতে চান তখন আবার এখানে বিটকয়েনের প্রাইস টা কমে যাবে। বিটকয়েনের বর্তমান মার্কেট ভ্যালু 500 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিটকয়েন হালবিং 2024
সাতসি নাকা মুত যখন বিটকয়েন বানিয়েছিলেন তখন উনি এমন ভাবে বিটকয়েনর ডিজাইন করেছিলেন যেন কোন ব্যক্তি বা পারসন ছাড়া বিটকয়েন ডিস্ট্রিবিউট করা যায়। এ আইডিয়াটা তিনি মূলত বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য করেছিলেন। যেখানে বিটকয়েন মাইনারদের বিটকয়েন ট্রানজেকশন ভেরিফিকেশন সাকসেসফুলি করার ফলে মাইনাররা কিছু রিওয়ার্ড পেত। তখন ঐ রিওয়ার্ডগুলো কিভাবে মানুষের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে সেই আইডিয়া সাতসি নাকা মুত বিটকয়েনের দুটি রুলের মধ্যে রেখেছিলেন।পাশাপাশি আরো কিছু রুল রেখেছিলেন।
আমরা যদি আরো সহজ ভাষায় জানতে চাই তাহলে ধরুন আপনি আপনার বাসায় কাজ করার জন্য দুজন লোককে নিয়ে আসলেন এবং তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে আপনি টাকা বা অন্য কোন বিনিময় মুদ্রা দিয়ে থাকেন। সেই প্রসেসটাই এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। যে সমস্ত লোক বিটকয়েন মাইনিং করবে তাদেরকে রিওয়ার্ড হিসেবে কিছু দিতে হবে এবং সেই রিওয়ার্ডটি কিভাবে দেওয়া যায় তার জন্য সাতসি নাকা মুত দুটি রুল রেখেছিলেন।
প্রথম রুটি হলো বিটকয়েন পৃথিবীতে 21 মিলিয়নের বেশি হতে পারবে না।
তার মানে হল পৃথিবীতে শুধুমাত্র 21 মিলিয়নেই বিটকয়েন থাকব এবং এর বেশি কেউ আর বানাতে পারবেনা এবং কেউ কেইটো করতে পারবে না শুধুমাত্র 21 মিলিয়ন বিটকয়েনই থাকবে।
দ্বিতীয় রুলটি হল যখন বিটকয়েন দুই লাখ দশ হাজার ব্লক মাইনিং হয়ে যাবে তখন বিটকয়েনের রিওয়ার্ড হাফ হয়ে যাবে। তার মানে হলো 2 লাখ 1000 ব্লক যখন মাইন্ড সম্পূর্ণ হয়ে যাবে প্রতি চার বছর পর পর সেটিকে অর্ধেক করে দেওয়া হবে। আর এই কাজটি ততক্ষণ অব্দি চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বিটকয়েন ব্লক 2 লাখ 10 হাজার সম্পূর্ণ হয়। আর যখনই 2 লাখ 10 হাজার ব্লক মাইন্ড করা সম্পূর্ণ হয় তখন বিটকয়েন হালবিং আসে। তার মানে এই দুই লাখ দশ হাজার ব্লক মাইন্ড করতে সময় লাগে চার বছর আর প্রতি চার বছর পর পর বিটকয়েন হাবিং হয়।
2009 সালে যখন বিটকয়েন মাইনিং স্টার্ট হয়েছিল তখন প্রতি ব্লকের জন্য 50 টি করে বিটকয়েন রিওয়ার্ড হিসেবে মাইনারদের দেওয়া হত। এরপর সবার প্রথম 2012 সালে বিটকয়েন হালবিং হলে 2 লাখ 10 হাজার ব্লক মাইন্ড করার সকল মাইনারদের পঞ্চাশের অর্ধেক 25টি বিটকয়েন রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হত। এভাবে পর্যায়ক্রমে 2016 এবং 2020 সালে বিটকয়েন হালবিং এর সময় প্রতি 2 লাখ 10 হাজার ব্লক মাইন্ড করার পর মাইনারদেরকে 12.5 এবং 6.25 বিটকয়েন রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় 2024 সালে 2 লাখ 10 হাজার ব্লক মাইন্ড হওয়ার পর মাইনারদেরকে রিওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হবে 3.125 বিটকয়েন। এভাবেই সর্বশেষ বিটকয়েন্টি মাইনিং হতে সময় লাগবে 2140 সাল।
বিটকয়েন হালবিং কেন রাখা হলো
বিটকয়েন হালবিং এবং এটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থাৎ 21 মিলিয়ন করার কারণ হলো এর সাপ্লাই এবং ডিমান্ড। যদি বিটকয়েনের সাপ্লাই আনলিমিটেড বা বিটকয়েন যত খুশি তত উৎপাদন করা যেত কোন প্রকার হালবিং বা হাফিং ইভেন্ট না রাখা হতো তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনেক বিটকয়েন মার্কেটে এসে যেত।ফলে বিটকয়েনের দাম এত বেশি থাকতো না
উদাহরণ হিসেবে মনে করা যাক, মনে করেন ফ্যেয়াট কারেন্সি যেটার আনলিমিটেড সাপ্লাই রয়েছে সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কোন দেশের গভর্নমেন্ট যখন যত খুশি তত টাকা বা মুদ্রা উৎপাদন করতে পারবে তখন একোডিং টু লো সাপ্লাই অর ডিমান্ড কমতে থাকবে। আমরা যদি বাংলাদেশ বা ইন্ডিয়ার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব উভয় দেশের সরকার প্রতিনিয়ত টাকা বা রুপিস সাপ্লাই বাড়িয়ে দিচ্ছে ফলে দেখা যাচ্ছে 1990 সালে বা 2000 সালের দিকে 20 টাকার যে মূল্য ছিল বর্তমানে সেই মূল্যটা কমে গেছে। অর্থাৎ আগে 20 টাকা দিয়ে যে দ্রব্যগুলো পাওয়া যেত ঠিক একই দ্রব্য এখন কিনতে 20 টাকারও বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
আর এই পদ্ধতিটিকেই কাজে লাগিয়ে নতুন একটি কারেন্সি উৎপাদন করেছেন সাতসি নাকামুত যার সাপ্লাই দিনকে দিন কমবে কিন্তু ডিমান্ড কখনো কমবে না।
সোনার বিকল্প বিটকয়েন
সাতোশি নাকামুতোর বিটকয়েন মূলত গোল্ডকে ফলো করে। বলতে গেলে গোল্ডের অনুরূপ মুদ্রা বিটকয়েন। কেননা শুরুর দিকে গোল্ড বা সোনা যখন মাইনিং করা হতো তখন খুব সহজ একটা বিষয় ছিল এবং বর্তমানের মত এত ভারী যন্ত্রপাতি লাগতো না গোল্ড মাইনিং করতে। একইভাবে 2009 সালে সাতোশি নাকামুতো যখন বিটকয়েন মাইনিং শুরু করে তখন প্রতি 2 লাখ 10 হাজার ব্লক মাইনিং করার জন্য 50টি করে বিটকয়েন মাইনারা পেতো।
কিন্তু বর্তমানে এই বিটকয়েন মাইনিং করা খুবই কঠিন। কারণ প্রতিনিয়ত মানুষ বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। যেমন ভাবে পৃথিবীতে সোনা একসময় ফুরিয়ে আসবে এবং এর চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাবে একই পাবে সাতোশি নাকামুতো হালবিং এর মতো পদ্ধতি আবিষ্কার করে বিটকয়েন সাপ্লাই প্রতি চার বছর পর পর কমিয়ে দেন। তাই বিটকয়েনকে গোল্ডের অনুরূপ মনে করা হয়।
বন্ধুরা বিটকয়েন হালবিং 2024 এই পোস্টটি থেকে আপনারা সকল বিষয় জানতে পারলেন। আশা করি যারা বিটকয়েনে ইনভেস্ট করতে চাচ্ছেন তারা চাইলেই এখানে ইনভেস্ট করতে পারেন। কেননা যেমন ভাবে আমরা জানলাম হালবিং এর পরে বিটকয়েনের ডিমান্ড আরো অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই আগামী হালবিং এর আগে আপনি যদি বিটকয়েনে ইনভেস্ট করেন তাহলে আশা করা যায় আপনি একটি ভালো মানের প্রফিট পেতে পারেন। তো বন্ধুরা আজকের পোষ্টটি এতোটুকুই ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যান্য মুদ্রার হালবিং সম্পর্কে জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টগুলো ফলো করুন ধন্যবাদ।