বিদ্যুৎ বিল চেক! বন্ধুরা বর্তমানে দিনে দিনে বিদ্যুৎ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তাই বন্ধুরা আমাদের এই বিদ্যুৎ কিভাবে অপচয় কমিয়ে সাশ্রয় করা যায় এ বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই চলুন বন্ধুরা কোথায় বাড়ি শুরু করা যাক কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় বা বিদ্যুৎ বিল চেক করে আমাদের বিদ্যুতিক বিল কমাতে পারি।
এসির তাপমাত্রা ২৬–২৭–এর মধ্যে রাখা
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রথম ধাপ হলো সচেতন হওয়া। ঘরে যতই বাতি থাকুক না কেন, লেখাপড়ার প্রয়োজন ছাড়া ঘরে একটি বাতিই যথেষ্ট। লেখাপড়ার দরকারে বেশি ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে, অন্যান্য সময় কম ওয়াটের বাতি ব্যবহারের অভ্যাস খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
সেন্সর লাগানো বাতি ব্যবহার করলে প্রয়োজন ও সাশ্রয়—দুটোই যুগলবন্দী হবে দারুণভাবে। শুধু তাই নয়, রান্নাঘরের অ্যাডজাস্ট ফ্যান চালিয়ে না রেখে শুধু প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার অভ্যাসের সুফলও আপনি পেতে পারেন। কাপড় শুকানোর জন্য অনেকে বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়ে রাখেন, এটাও একটা অপচয়।
যাদের বাসায় এসি আছে, বাড়তি বিলের বোঝা তাদের কাঁধেই বেশি পড়ে বলে প্রচলিত আছে। ঘরে শীতল আবহ আনতে এসির তাপমাত্রা ২৬–২৭–এর মধ্যে রাখলে আরামদায়ক তাপমাত্রা থাকবে, তবে কম্বল গায়ে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিলের কাঁটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবার ইনভার্টার এসির ব্যবহারে বিল কম আসে।
পিক আওয়ারে (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা) বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে অফ-পিক আওয়ারে যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার বিল কমানোর একটি কার্যকর কৌশল।
সব সময় মনে রাখতে হবে, বিল নিজে দিলেও বিদ্যুৎ পুরো দেশের সম্পদ। আপনার কিছুটা সচেতন বিদ্যুৎ ব্যবহারই পারে অন্য কারও বাসায় বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে। বিদ্যুতের খরচ কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামসাদ খোরশেদ:
বাসার প্রতিটি জানালায় রঙিন কাচের ব্যবহার না করা
বাসা তৈরির সময় পশ্চিম দিকে রান্নাঘর, আর দক্ষিণ দিকে শোবার ঘর রাখলে ঘরে আলো-বাতাস বেশি ঢোকে, ফলে বাতি ও পাখার সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব হয়। বাসার প্রতিটি জানালায় রঙিন কাচের ব্যবহার না করে স্বচ্ছ কাচ লাগালে ঘর প্রাকৃতিকভাবে আলোকিত হবে।সোলার লাইটের (সৌরবাতি) ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের বাসায় সোলার আছে, তাদের সেটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি।
দিনের আলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। যত ভোরে সম্ভব ঘুম থেকে ওঠা ও রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।রান্নাঘর ও বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলা বাতি জ্বালানোর বাজে অভ্যাস বর্জন করা উচিত। কাপড় অল্প ময়লা হলেই ওয়াশিং মেশিনে না দিয়ে বেশ কিছু কাপড় জমিয়ে একত্রে ধুয়ে ফেলা যায়।
বিদ্যুৎ–চালিত যন্ত্র ব্যবহার না করে কিছু পণ্যের ম্যানুয়াল ডিভাইস ব্যবহার করলে বা রান্নাঘরে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করলে বিল কম আসবে। যেমন ব্লেন্ডার, এগ বিটার, ফুড প্রসেসর, টোস্টার, স্যান্ডুইচ মেশিন, জুসার ইত্যাদি।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর ৭ উপায়
বাংলাদেশে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০২৩। বিদ্যুৎ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, বর্তমানে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।কিন্তু কিভাবে দরকারি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও বিল কমানো সম্ভব? তার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা। খবর বিবিসি বাংলার।
১. সুইচ বন্ধ রাখা ফ্যান, বাতি, টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার না করলে সব সময় এগুলোর সুইচ বন্ধ করে রাখা। অনেক সময় বাথরুম বা বারান্দার লাইট জ্বলে থাকে। সেটি যাতে না হয়, তা খেয়াল রাখা হলে বিদ্যুৎ বিল বেশ খানিকটা কমে আসে। মেশিন বা ইস্ত্রি ব্যবহার না করলে প্লাগ খুলে রাখা উচিত। কম্পিউটার বা টিভি ব্যবহার না করলে স্লিপ মুডে বা বন্ধ করে রাখুন।
২. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার এনার্জি বাল্ব বা এলইডি বাতি ব্যবহার করা হলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমে আসে। প্রচলিত একটি বাতি একশো ওয়াট ব্যবহার করে, সেখানে একটি এনার্জি বাতি ব্যবহার করে মাত্র ২৫ ওয়াট। এছাড়াও এখন ইনভার্টারযুক্ত ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।
৩. এসির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বাসাবাড়িতে এসি ব্যবহার এখন অনেক বেশি নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু নিয়ন্ত্রিতভাবে এসি ব্যবহার করা গেলে এর বিল কমিয়ে আনা সম্ভব। এসির তাপমাত্রা সবসময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট মাত্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর এসি বন্ধ করে ফ্যান চালানো যেতে পারে।
৪. মানসম্মত তার ব্যবহার বিদ্যুতের সংযোগ ও তারের ওপর বিদ্যুতের বিল অনেক সময় নির্ভর করে। খারাপ মানের তার হলে, সংযোগ দুর্বল বা নড়বড়ে হলে সেটি লো ভোল্টেজের সৃষ্টি করে, ফলে বিলও বেড়ে যায়।
৫. বিকল্প যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাসায় রান্না করা বা খাবার গরম করার ক্ষেত্রে মাইক্রো ওভেন ব্যবহার না করে চুলা ব্যবহার করতে পারেন। স্লো কুকার বা টোস্টার ব্যবহার করা যায়। মাইক্রো ওভেনে ডিফ্রস্ট না করে পানিতে রেখে খাবারের বরফ ছাড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। ওয়াশিং মেশিনে গরম পানির সেটিং ব্যবহার না করলে বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে।
৬. বিদ্যুতের সীমিত ধাপের মধ্যে থাকা বিদ্যুতের ব্যবহার অনুযায়ী, একেকটি ধাপে একেক রকম বিল আসে। যেমন ডিপিডিসি বা ডেসকোর ট্যারিফ অনুসারে, কারো যদি বিদ্যুতের ব্যবহার ৭৫ ইউনিটের মধ্যে সীমিত থাকে, তাহলে বিল আসবে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা হারে।
কিন্তু ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিল আসবে ৪.৪৫ টাকা হারে। তৃতীয় ধাপ ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে বিল আসবে ৫.৭০ টাকা হারে। ৩০১ ইউনিট থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিল আসবে প্রতি ইউনিট ৬.০২ টাকা হারে। ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিলের হার ৯ টাকা ৩০ পয়সা। এর বেশি হলে ইউনিট প্রতি বিল হবে ১০ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুতের ব্যবহার কম ধাপের মধ্যে সীমিত রাখতে পারলে বিলও কম আসবে।
৭. প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার এখন বহুতল ভবনে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো।যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বা বেশি লোডশেডিং হয়, তারাও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন।(বিদ্যুৎ বিল চেক)