বিশ্বের সেরা ধনী কোম্পানি কোনটি! আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবথেকে ধনী কোম্পানি কোনটি তাহলে হয়তো আপনি বলতে পারবেন না।
বর্তমান পৃথিবীতে এমন কিছু কোম্পানি রয়েছে যাদের প্রতিবছরের ইনকাম ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। বর্তমান পৃথিবী কাঁপানো এই কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র একটি আইডিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল এবং বর্তমানে এই সকল কোম্পানি পুরো পৃথিবীর শীর্ষে অবস্থান করছে। পৃথিবীর সবথেকে স্কিল এমপ্লয়ি এবং সবথেকে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা এই সকল কোম্পানিতে জীবনে একবার হলেও চাকরি করার স্বপ্ন দেখে।
এই সকল কোম্পানিতে চাকরি করা মানে আপনি একটি উন্নত জীবন যাপন লিড করতে পারবেন। এই সকল কোম্পানির বেতন ১০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। তো আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো বর্তমান পৃথিবীর সবথেকে ধনী দশটি কোম্পানি সম্পর্কে।
১/ amazon.com
পৃথিবীর সব থেকে ধনী কম্পানি বলা হয় amazon.com কে। এটি হচ্ছে একটি ই-কমার্স কোম্পানি। এই কোম্পানির মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ অনলাইন শপিং করে থাকে। এই কোম্পানির ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরে বসে থেকেই অনলাইন শপিং করতে পারছে। ১৯৯৪ সালে জেববেজস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে এই কোম্পানি বার্ষিক ৫১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৫০ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। এই পরিমাণ টাকার কথা আমার উচ্চারণ করতেই যেন কিরকম লাগছে।
২/ অ্যাপেল
এটি একটি আমেরিকান কোম্পানী। যেটি মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ তৈরি করার জন্য পুরো পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত। পৃথিবীতে যত ধনী ব্যক্তিরা রয়েছে তাদের কাছে অ্যাপলের আইফোন পাবেন।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে অ্যাপেলের কোম্পানি রয়েছে। অ্যাপেল ফোন জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে iphone সবথেকে ভালো নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। অ্যাপেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বর্তমানে এর হেড কোয়ার্টার আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত। অ্যাপেল কোম্পানির বার্ষিক আয় শুনলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। অ্যাপেল কোম্পানির রেভিনিউ হচ্ছে ৩৯৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার যা বাংলা টাকায় মোটামুটি ৪০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
৩/ google
গুগল একটি মাল্টিন্যাশনাল টেকনোলজিক্যাল কোম্পানি। এই কোম্পানি ইন্টারনেট রিলেটেড সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট তৈরি করে থাকে। পৃথিবীর সবথেকে বড় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে গুগল। গুগলের পরিষেবার মধ্যে অনেক সেক্টর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুগল এড। এছাড়াও অনেক ধরনের সার্ভিস সফটওয়্যার রয়েছে।
তাছাড়া আপনারা তো জানেন পৃথিবীর বিখ্যাত কোম্পানি গুগল ইউটিউবকে কিনে নিয়েছে এবং গুগলের একটি অংশ হচ্ছে ইউটিউব। প্রথমবারের মতো গুগল কোম্পানি তৈরি করা হয় ১৯৯৬ সালে। এই কোম্পানির নাম গুগল রাখা হয়েছিল তার কারণ এটি উচ্চারণ করতে এবং মনে রাখতে অনেক সহজ।
বর্তমান পৃথিবীতে গুগল এমন একটি নাম যেটি বাচ্চারাও জানে। অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে google এর বার্ষিক আয় ২৭৯. ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলা টাকায় ২৭ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। ২৭ লক্ষ টাকা কতগুলো তা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না। মনে হচ্ছে এটি একটি সংখ্যামাত্র কিন্তু না এই টাকাগুলো একটি ফুটবল মাঠ কে কভার করে নিতে পারবে।
৪/ বাকশায়ার হাতড়ে
এটি হচ্ছে আমেরিকার একটি ফাউন্ডিং কোম্পানি। পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি যেমন অ্যাপেল কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে রেখেছে এই ফাউন্ডিং কোম্পানি। এই কোম্পানির হেডকোয়ার্টার ইউনাইটেড স্টেজে অবস্থিত।
এই কোম্পানির মালিকের নাম ওয়ারেন বফেট। বর্তমান পৃথিবীর সব থেকে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন তাকে বলা হয় আমেরিকান ধনকুপ। যখন তিনি কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন তখন ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। এই কোম্পানি অদ্ভুত এক্টিভিটিস করে থাকে। যেই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অনেক কম এবং লসে চলছে সেই কোম্পানিগুলো কিনে নেয় এবং তাদের শেয়ারের ভ্যালু বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে এই কোম্পানি পৃথিবীর সব থেকে ধনী কোম্পানির মধ্যে একটি হলেও এই কোম্পানির অবস্থা একসময় খুবই খারাপ ছিল। অনেক প্রচেষ্টা করার পর এই কোম্পানি আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। বর্তমানে এই কোম্পানির টোটাল রেভিনিউ ২৫৩. ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকার উপরে ।
৫/ মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফট এমন একটি কোম্পানি যেটি পৃথিবীর সবথেকে বেশি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট পিক্সেল সহ আরো বহু অ্যাপস। যখন থেকে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত কোম্পানির প্রতি বছর রেভিনিউ বাড়তেই আছে।
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষজন মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া আমাদের ছোটখাটো কাজের জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড তো রয়েছেই। বর্তমানে মাইক্রোসফটের হেডকোয়ার্টার আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিটতে রয়েছে। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে পৃথিবীর একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পরিণত হয়।
পৃথিবীর ১০০ টির বেশি দেশে শাখা রয়েছে মাইক্রোসফট কোম্পানির। কোম্পানিটির যে অপারেটিং সিস্টেমটি সবচেয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। অবাক করার বিষয়টি হচ্ছে ২০২২ সালে এই কোম্পানির টোটাল রেভিনিউ ছিল ২০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০ লক্ষ কোটি টাকার উপরে।
৬/ এরামকো
এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অয়েল কোম্পানি এবং এই কোম্পানির ৯০ শতাংশ মালিক হচ্ছে সৌদি আরব সরকার। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত করতে আমেরিকা সৌদি আরবকে সহায়তা করেছিল। এই জন্য এই কোম্পানির নাম হচ্ছে এরাবিয়ান আমেরিকান অয়েল কোম্পানি।
পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে সৌদি আরব সরকার কোম্পানিটিকে পুরোপুরি কিনে নেয়। এরপর থেকে এই কোম্পানির নাম হচ্ছে সৌদি আরামকো। বর্তমানে এই কোম্পানি গ্যাস এবং অয়েল সেক্টরে কাজ করছে। এই কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ৬৬ হাজার ৮শ। প্রথমবার সৌদি আরব তাদের দেশে তেল খুঁজে পেয়েছিল ১৯৩৮ সালে। এরপর থেকে সৌদি আরবকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। তেলের খনি খুঁজে পাওয়ার পর থেকে সৌদি আরবের অর্থনীতি আস্তে আস্তে উন্নত হতে থাকে।
শুধুমাত্র এই তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০.২ ট্রিলিয়ন ইউ এস ডলারের উপরে। এই পরিমাণ সম্পত্তি নিয়ে পৃথিবীর সবথেকে ধনী পরিবার হচ্ছে সৌদি আরব পরিবার। এর প্রত্যেক মেম্বার এর কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে তেল রপ্তানি করে থাকে সৌদি আরব এর মধ্যে বেশিরভাগ দেশে এশিয়ার। ২০২২ সালে এই কোম্পানির মোট রেভিনিউ জেনারেট করেছিল ১৩০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বা ১৩ লক্ষ কোটি টাকার উপরে।
৭/ মেটা ফেসবুক
মেটা ফেসবুক পৃথিবীর এমন একটি কোম্পানি যেটা facebook, whatsapp এবং instagram কন্ট্রোল করে থাকে। মেটা শুধুমাত্র একটি কোম্পানি নয় মানুষের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এবং স্টাগ্রাম।বর্তমানে এই কোম্পানির মালিকের নাম হচ্ছে মার্ক জুকারবার্গ। দিন দিন এই কোম্পানির রেভিনিউ বেড়েই চলেছে এবং শুধুমাত্র এক বছরে এই কোম্পানির আয় ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । বুঝতেই পারছেন এই কোম্পানি প্রতিবছর ১১ লক্ষ কোটি টাকার উপরে ইনকাম করে থাকে।
৮/ জনসন অ্যান্ড জনসন
পৃথিবীর সব থেকে ধনী ১০ টি কোম্পানির লিস্টের আট নম্বরে থাকবে জনসন অ্যান্ড জনসন। বর্তমানে এই কোম্পানির সিও হচ্ছেন জ্যা কুইন ডাউটো। বর্তমানে এই কোম্পানির ইমপ্লয়ার এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৪ হাজারের বেশি। বিশেষ করে বেবি প্রোডাক্ট এর জন্য এই কোম্পানি পুরো পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয়। অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে শুধুমাত্র ২০২২ সালে এই কোম্পানির টোটাল রেভিনিউ ছিল ৯৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৯ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
৯/ টেন সেন্ট
পৃথিবীর সব থেকে ধনী দশটি কোম্পানির নয় নাম্বারে থাকবে টেন সেন্ট। এটি হচ্ছে একটি চাইনিজ কোম্পানি আর চায়নার সব থেকে বড় কোম্পানির মধ্যে একটি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে।
কোম্পানিটির মেইন উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট রিলেটেড সার্ভিস দেওয়া। বর্তমানে এই কোম্পানি শুধুমাত্র ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে থাকে না। এই কোম্পানি বর্তমানে এন্টারটেইনমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং টেকনোলজির ফিল্ডে কাজ করছে।
পৃথিবীর যে কোম্পানিগুলো বছরে সবথেকে বেশি আয় করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম স্থানে থাকবে টেন সেন্ট। পৃথিবীর পপুলার গেম এই টেনসেন্ট কোম্পানি রিলিজ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে পাবজি মোবাইল। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে উই চেট। বর্তমানে এই কোম্পানির টোটাল ভ্যালু ৮৩.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে।
১০/ টেসলা
পৃথিবীর সবথেকে ধনী ১০ টি কোম্পানির লিস্টে ১০ নাম্বারে থাকবে ইলন ম্যাক্সের প্রতিষ্ঠান টেসলা। বর্তমান পৃথিবীর একটি ডমিনেটিং কোম্পানি হচ্ছে টেসলা। টেসলা এমন একটি নাম যেটা সবাই এক নামে চিনে ফেলে। পৃথিবীর সবথেকে বেস্ট ইলেকট্রনিক কার তৈরি করে থাকে এই কোম্পানি।
তাছাড়া বর্তমানে সবথেকে উন্নত মানের ব্যাটারি তৈরি করে থাকে তারা। ২০০৮ সালে টেসলা তার প্রথম ইলেকট্রিক কার বাজারে এনেছিল। এইরকম ইলেকট্রিক সুপার কার তৈরি করার জন্য টেসলা কোম্পানি বিশ্ব মিডিয়ায় হেডলাইন হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ইলেকট্রিক কার বিক্রি হয়ে থাকে টেসলা কোম্পানির।
পশ্চিমা দেশের সবথেকে বেশি ইলেকট্রিক কার শুধুমাত্র টেসলা কোম্পানির। টেসলা কোম্পানি মার্কেটে এসেছিল ২০০৩ সালে এবং কোম্পানির টোটাল রেভিনিউ এর কথা বললে ২০২২ সালে টোটাল রেভিনিউ হচ্ছে ৮১. ৪৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।বাংলাদেশী টাকায় যা মোটামুটি ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
পৃথিবীর সবথেকে ধনী কম্পানি কোনগুলো তা তো আপনার জানতেই পেলেন। এর মধ্যে কোন কোম্পানি আপনার সব থেকে বেশি ভালো লাগে এবং কোন কোম্পানিতে আপনি চাকরি করতে চান তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এরকম ইন্টারেস্টিং ও আকর্ষণীয় তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি ফলো করে সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।