ভারতের সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি! পানির তান্ডবে থরথরিয়ে কাঁদছে দিল্লি। পুরো শহরকেই গিলে খেতে চায় ভয়াবহ এই প্লাবন।
আগেই ছুয়েছিল লালকেল্লা। এবার সুপ্রিম কোর্টের দোড়গোড়ায় যমুনার পানি। ডুবে গেল রাজঘাট এলাকাও উদ্বিগ্ন দিল্লির প্রশাসন । সরকারি কর্মকর্তারা জানান দিল্লির সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের যন্ত্রাংশ বিপর্যয়ের কারণে শহরের দিকে ধেয়ে আসছে যমুনার পানি। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে সুপিয় পানির সংকট হবে প্রকট। বিচ্ছিন্ন হতে পারে বহু এলাকা। পানি আটকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এরই মধ্যে ভেসে গেছে দিল্লির বহু বাড়িঘর, বাজার, রাস্তাঘাট, পর্যটন কেন্দ্র। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাজধানীর কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত আবার কোথাও বুক পর্যন্ত পানি।
বন্ধ হয়ে গেছে জান চলাচল। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাধের পানি নিঃসরণ বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন অরবিন্দ কেসরিওয়ালের সরকার। যদিও কেন্দ্র বলেছে বাঁধ থেকে ছেড়ে দিতে হবে অতিরিক্ত পানি। হিমাচল প্রদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বাঁধের অবস্থা বেহাল। প্লাবিত হয়েছে সিভিল লাইন এলাকার রিং রোড। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেসরিওয়ালের বাসভবন এলাকাতেও ঢুকে পড়েছে বানের পানি।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শ্মশান এলাকার। এই এলাকা ব্যবহার না করতে জনগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ১২ টি দল। বন্যা পরিস্থিতির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। দিল্লির বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গতদের ভোগান্তির চিত্র দেখতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন একজন জনপ্রতিনিধি। কয়েকদিন ধরে বন্যা চললেও দেরি করে খোঁজ নিতে যাওয়ায় তাকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এরই মাঝে খুব্ধ এক নারী থাপ্পর বসিয়ে দেন ওই জনপ্রতিনিধির গালে। গেল বুধবার নিজের বিধানসভা আসনের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার হন হরিয়ানার জনতা পার্টির বিধায়ক ঈশ্বর সিংহ। যদিও এই ঘটনায় কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে চান না বিধায়ক।
ভারতের ইতিহাসে এমন পানি কেউ দেখেনি
সাধারণ বর্ষা মৌসুমের চেয়ে এবার দিল্লিতে ৯১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে ভারতের যমুনা নদীর পানি। দিল্লি শহরের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় বন্যার পানি বের করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শত শত মানুষকে নদীর তীর আর শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বন্যার পানির তোরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় ভেসে গেছে পানিতে। ভূমিদস আর বন্যায় হাজারের বেশি রাস্তাঘাট বন্ধ রয়েছে হিমাচল প্রদেশে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক পর্যটন স্থান। এই অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে হাজারো পর্যটককে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছরে বেশ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতের বর্ষা মুসলমান।
হিমাচল প্রদেশ কর্তৃপক্ষ বলছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ৩,৭৩৮ কোটি রুপি। পাঞ্জাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর ফসলি জমি। আর হিমাচল প্রদেশে ভয়াবহ বৃষ্টি আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এখন পর্যন্ত বাতিল হয়েছে ১৩শোর বেশি ট্রেনের যাত্রা।
মৃত্যুর সংখ্যা
ভয়াবহ বন্যার কারণে যেরকম ভাবে প্রতিটি প্রদেশের ক্ষতি হয়েছে তেমনভাবে মানুষ অসুস্থ ও খাওয়া না পাওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভারতে বন্যার কারণে প্রায় ১৪৫ থেকে ১৫০ জনের মত মৃত্যুবরণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলে বা উন্নতি হলে এই মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অবস্থাতে সবাইকেই শান্ত থাকতে বলেছে এবং তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং এখন পর্যন্ত যে সকল ব্যক্তি, পরিবার বন্যার পানিতে আটকে পড়েছেন তাদেরকে শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তা
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে এই বন্যা পরিস্থিতি আগামী আরও বেশ কয়েকদিন স্থায়ীভাবে থাকতে পারে। এরপরে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করবে। এছাড়া আরো বলেছে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত সকল ব্যক্তিবর্গ পরিবার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্যত্র সড়িয়ে যাওয়ার জন্য। কেননা হড়কাবানের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সমস্ত পাহাড়ি এলাকায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ধুরা ভারতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার বক্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং ভারতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ খবরা খবর পেতে আমাদের পেজটি ফলো করুন ধন্যবাদ।