মঙ্গল গ্রহে প্রথম কে যাবে! বন্ধুরা, এবারে পৃথিবীকে বিদায় জানালো এলিসা। চিরতরের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে মঙ্গল গ্রহে। হয়তো আর কখনো এলিসা কার্সনের এই পৃথিবীতে ফিরে আসা হবে না।
বন্ধুরা একবার কল্পনা করুন আপনি পৃথিবী ছেড়ে এমন এক জায়গায় যাচ্ছেন যেখান থেকে আর কোনদিন চাইলেও আপনি ফিরে আসতে পারবেন না। দেখতে পারবেন না আপনার আপনজন বাবা, মা, ভাই, বোন সহ পরিচিত প্রিয় লোকগুলো। চির অন্ধকার এবং নিঃসঙ্গতায় হারিয়ে যাবেন চিরদিনের জন্য।
আর কখনোই হয়তো এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না। এমন একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবলে কেমন যেন গা শিউরে ওঠে। তবে বন্ধুরা এমন এক যাত্রার উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন আমেরিকার ১৮ বছর বয়সি তরুণী এলিসা কার্সন।
মেয়েটি এই প্রথম পৃথিবীর মানুষ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে পা রাখতে চলেছেন। পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহের দূরত্ব এতটাই বেশি যে কোন মহাকাশ যান যদি পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দেয় তাহলে তার জ্বালানি শুধু মঙ্গল গ্রহে যাওয়া পর্যন্তই হবে। অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহে যেতে যেতেই রকেটের সব জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু ফিরে আসার জন্য আর অবশিষ্ট কোন জ্বালানি রকেটের মধ্যে থাকবে না। তার মানে মহাকাশযান নিয়ে যদি কোন ভাবে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানো যায় তাহলে, পৃথিবীতে ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকবে না। এই স্থানে সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্নটা আসবে তা হলো, এই মেয়েটা কি পাগল না অন্য কিছু। কেন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও এত কম বয়সে এই অচেনা মঙ্গল গ্রহের দিকে যেতে হবে।
এত সুন্দর একটি মেয়ে সামনে তার কত সুন্দর ভবিষ্যৎ পরে রয়েছে। সে চাইলেই তো বিয়ে-শাদী করে সংসার করতে পারে। তার কেন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মঙ্গল গ্রহে যেতে হবে। বন্ধুরা আমরা প্রথমেই এই মেয়েটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই। এরপর জানব কবে কোথায় এবং কতদিন পর এবং কোন উদ্দেশ্যে সে মঙ্গল গ্রহে যাত্রা শুরু করবে।
এলিসা কার্সনের জীবনী
বন্ধুরা মঙ্গল গ্রহে যে মেয়েটি যাত্রা শুরু করবে তার নাম এলিসা কার্শন। তার জন্ম ২০০৪ সালের ১০ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে। আমরা ছোট থাকার সময় কম বেশি সবাই কার্টুন দেখতে ভালবাসি। আর এই কার্টুন শিশুমনে যে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই ছোট্ট এলিসা কার্শন।
যখন তার বয়স মাত্র ৩ বছর তখন সে এই অ্যানিমেটেড কার্টুন দেখতে খুব ভালোবাসতো। সে মিশন টু মার্চ নামে একটি কার্টুনে দেখতে পায় যে পাঁচ বন্ধু মিলে কল্পনার মাধ্যমে লোহার পড়তে ঢাকা লালচে শীতল গ্রহ মঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছে। আর এরপর থেকেই এলিসার মনে লাল গ্রহে অর্থাৎ মঙ্গলে যাওয়ার একটা সুপ্ত বাসনার জন্ম হয়। বলতে পারেন এখান থেকেই তার মঙ্গল গ্রহে যাবার একটা মনস্তান্তিক পরিকল্পনা তার মনের মধ্যে সবার অজান্তেই শুরু হয়ে যায়। তার স্বপ্ন সে একদিন সত্যি সত্যি মঙ্গল গ্রহে যাবে।
আর তার স্বপ্নের কথা মেয়েটি যখন তার বাবাকে বলে তার বাবা বেট কার্সন মেয়ের স্বপ্নে সম্মতি দেয় এবং তাকে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। সেই সাথে বিভিন্ন রকম মহাকাশ বিষয়ে বই কিনে দিতেন তাকে। যে বইগুলো সে একে একে সব পরে ফেলে। ফলে ছোট বয়সেই এলিসা মহাকাশ সম্পর্কে একটি বেসিক জ্ঞান নিজের মধ্যে ধারণ করে।
বন্ধুরা আপনারা যারা এই মেয়েটির বয়স দেখে অবাক হচ্ছিলেন তারা হয়তো এখন বুঝতে পারছেন যে, মেয়েটির বয়স কম হলেও সে কিন্তু মহাকাশ বিষয়ে অনেক কিছু জানে এবং মহাকাশ ও মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে সে অনেক বেশি জ্ঞ্যানেও অর্জন করেছে।
এলিসা যেভাবে নাসার সদস্যপদ হয়
একটি প্রবাদ বাক্য আছে রতনে রতন চিনে। আর ঠিক তেমনি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মানুষ চিনতে ভুল করেনি। ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসে এলিসা ডাক পায় ওয়াশিংটন ডিসির নাসা টিভির এম আর টেন প্যানেলে।
ভবিষ্যৎ মার্চ মিশনে যাবার প্রস্তুতির জন্য পরবর্তীতে মঙ্গলে প্রথম মানব হিসেবে পা রাখা নির্বাচনী মিশনে সাত জন ব্যক্তির একজন হিসেবে সে ডাক পেয়েছিল। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো তার সঙ্গে থাকা বাকি সদস্যদের অনেকেই নভোচারী বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে এলিসা ছিল সবচেয়ে কম বয়সি এবং তাদের মধ্যে সেই একমাত্র মেয়ে যে সফল হয়েছিল শুধুমাত্র তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির জন্য। তার কোন ডিগ্রীর প্রয়োজন হয়েছিল না।
২০১৫ সালে অফিশিয়ালি নাসার কাছ থেকে খুদে নবচারি হবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সে। কিন্তু নাসার নিয়ম অনুযায়ী নাসার নভোচারী হতে ১৮ বছর বয়স লাগে। গত বছর মার্চে ১৮ বছর বয়সে পা দিয়ে সে অফিশিয়ালি নাসার নভোচারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তাকে ২০৩৭ সালের আগ পর্যন্ত মহাকাশ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
কোন উদ্দেশ্যে মঙ্গল গ্রহে যাবে এলিসা
২০৩৭ সালে যখন তার বয়স ৩২ বছর পূর্ণ হবে তখন এলিসা পারি জমাবে মঙ্গল গ্রহে। সে এটা দেখতে যাবে যে, সেখানে মানুষ বসবাস করতে পারবে কিনা, সেখানে তাপমাত্রা কত ডিগ্রি।
এছাড়া সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কত রয়েছে তা জানতে। এক্ষেত্রে যদি মার্চ মিশন সফল হয় তবে সেখান থেকে বিভিন্ন ডাটা পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যই তাকে পাঠানো হচ্ছে। এর থেকেও বড় বিষয় হলো এলিসা চায় মঙ্গলের বুকে সর্বপ্রথম কোন মানুষ হিসেবে পা রেখে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখাতে। তবে সামনে মঙ্গল গ্রহের যাত্রা অনেক কঠিন হবে।
এক্ষেত্রে এলিসা প্রস্তুতির কোনো ত্রুটি রাখেনি। সে প্রস্তুত আছে মঙ্গলে যাওয়ার জন্য। তবে তার মনের মধ্যে এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন ভয় নেই যে, সে মঙ্গলের বুকে যাত্রার পর আর ফিরে আসতে পারবে না। অর্থাৎ হারিয়ে যাবে অথবা এটাই তার পৃথিবী থেকে শেষ বিদায় হচ্ছে।
অর্থাৎ তার বাঁচার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট। তবে মেয়েটি জানিয়েছে এসব নিয়ে একদমই ভাবছে না সে। অলরেডি এলিসা নিজেকে মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা ভাবতে শুরু করেছে। আর এজন্য সে নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলছে প্রতিনিয়ত।
এলিসার সঙ্গে নাসার চুক্তি
এলিসা কোন প্রকার যৌনতা, বিয়ে, সন্তান ধারণ অথবা সংসার অথবা প্রেম না যাওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে নাসার কাছে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। অর্থাৎ এলিসা কারসন চাইলেও কারো সাথে বিয়ে অথবা যৌন সম্পর্ক করতে পারবে না। কারণ এখানেই তার বিরাট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমনকি সে বিয়ে সংসার সন্তান জন্মদান অথবা রিলেশন কোন কিছুই করতে পারবে না। এই সব কিছু তার মাথা থেকে বাদ দিতে হয়েছে।
সে শুধু ভাববে সে মঙ্গল এ গিয়ে কিভাবে বসবাস করবে এবং কিভাবে পৃথিবীর মানুষকে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে জানাতে পারবে। তাহলে আপনারাই একবার ভেবে দেখুন এত কম বয়সে তাকে শুধুমাত্র স্বপ্ন পূরণের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। যেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।
এলিসা জানে সে হয়তো আর কোনদিন এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেনা। আর মাত্র ১৪ বছর পরে অর্থাৎ ২০৩৭ সালে সে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে কোটি কোটি মাইল দূরে থাকা লোহার লালচে আবরণে ঢাকা মঙ্গল গ্রহে গিয়ে একা বসবাস করবে। এক্ষেত্রে এলিসা বিন্দুমাত্র ভীত নয়। বরঞ্চ তার কল্পিত স্বপ্ন পূরণের আশায় সে অধির আগ্রহে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত।
মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বন্ধুরা মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আপনাদেরকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখি ।মঙ্গল গ্রহ কিন্তু পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থিত। সেখানে বাতাসের পরিমাণ খুবই কম এবং লালচে ধুলামাটিতে ঘেরা একটি গ্রহ যেখানে পৃথিবীর মতই ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয় এবং সেখানেও পৃথিবীর মত নদ নদী রয়েছে। কিন্তু সেসব নদ নদীতে পানি নেই।
তবে এটা জেনে আপনি অবাক হবেন যে, মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি বরফ আকারে রয়েছে। আর সেই পানি যদি একবার লিকুইটে পরিণত করা যায় তাহলে মঙ্গলে মানুষ বসবাস করা সম্ভব এবং মানুষ চাইলেই কিন্তু টেরা ফার্মিং এর মাধ্যমে মঙ্গলে বসতি স্থাপন করতে পারবে।
বন্ধুরা যারা মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তারা আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন। সেখানে আমরা মঙ্গল গ্রহের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি এবং মঙ্গল গ্রহে কিভাবে টেরা ফার্মিং এর মাধ্যমে মানুষ বসবাস করতে পারে তার একটি বিস্তারিত তথ্য দেওয়া রয়েছে। আপনি চাইলেই সেটি পড়তে পারেন। মহাকাশ সম্পর্কে ও নাসার বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের সাইটটি ফলো করে সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।