যেসব প্রাণীর দোয়া আল্লাহ কবুল করেন! আমাদের চারপাশে অবস্থান করা পাঁচটি প্রাণীর দোয়া আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গেই কবুল করেন। কখনোই তাদেরকে কষ্ট দেবেন না। যদি এই পাঁচটি প্রাণীকে কষ্ট দেন তা তাহলে তাদের বদদোয়াও আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করবেন। এমনকি আপনি ধ্বংস হয়ে যেতে পারেন।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম প্রাণীদের ভাষা বুঝতেন। তিনি চাইলেই যে কোন প্রাণীর সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন সুলাইমান শুনতে পায় পিপড়া দের রানী কি বলেছিল। সেই সুলাইমান আলাইহিস সালাম পাঁচটি প্রাণীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং তিনি বলেছেন এই পাঁচটি প্রাণীর দোয়া আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন। এমনকি তাদের বদদোয়াও আল্লাহ কবুল করেন। আপনার চার পাশে থাকা এই পাঁচটি প্রাণী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পরুন।
একদিন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর কাছে খবর এলো এক ব্যক্তি একটি কুকুরকে বিষ পান করিয়ে মেরে ফেলেছেন। খবর শুনে সুলাইমান তৎক্ষণাৎ সেই ব্যক্তির বাড়িতে উপস্থিত হলেন। যখন সেই ব্যক্তি পুরো বিশ্বের সকল মানব দানবের বাদশা আল্লাহর প্রেরিত নবী হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লামকে নিজের ঘরে দেখতে পেলেন তখন সেই ব্যক্তি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর খেদমতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
উল্লেখ্য হযরত সুলাইমান আলাইহিস সাল্লাম পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং শক্তিশালী বাদশা ছিলেন। যাকে সাধারণ মানুষ দেখে কখনো ভয় পেত না। শুধুমাত্র অপরাধীরাই ভয় পেত। কেননা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন ন্যায় বিচারক। কিন্তু এর আগে পৃথিবীর বুকে যত বড় বাদশা ছিল এদেরকে দেখে সাধারণ মানুষ ভয় পেত।
তো সেই ব্যক্তি তখন হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর নবী আপনি কেন অযথা কষ্ট করে আমার বাড়িতে আসতে গেলেন আপনি আমাকে হুকুম করতেন আমি নিজেই আপনার বাড়িতে হাজির হতাম। হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লাম সেই ব্যক্তিকে বলল তুমি তোমার পুরো গ্রামবাসীকে এখানে একত্রিত কর।
কারন আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। যদি আমার কথার উপর আমল করতে পারো তাহলে তোমার পরবর্তী বংশধর অভিশাপের হাত থেকে বেঁচে যাবে। যদি তুমি আমার কথার উপর আমল না করো তাহলে তুমি এবং তোমার পরবর্তী বংশধর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আল্লাহর অভিশাপে। এরপর সেই ব্যক্তিটি পুরো গ্রামবাসীকে একত্রিত করল।
যখন সবাই একত্রিত হল তখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন পাঁচটি এমন জানোয়ার এবং পাখি রয়েছে আল্লাহ তাআলা এদের দোয়া এবং বদদোয়া সঙ্গে সঙ্গেই কবুল করে নেন। যদি কোনভাবে তুমি অন্যায় ভাবে এদের গায়ে হাত তুলো, কষ্ট দেও, হত্যা করো তাহলে এদের বদদোয়া আল্লাহ পাক সঙ্গে সঙ্গেই কবুল করবেন এবং তুমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারো। এছাড়াও এই পাঁচটি প্রাণীকে তুমি যদি সন্তুষ্ট করতে পারো এদের দোয়াও কিন্তু আল্লাহ কবুল করবেন এবং এর বিনিময়ে অনেক মানুষ এমনকি পাপাচারি ব্যক্তিরাও জান্নাতবাসী হয়েছে।
১/ কবুতর
কবুতর এমন একটি প্রাণী যে কিনা পৃথিবীর বুকে থাকা অন্য সকল প্রাণীর চেয়ে নবীদেরকে বেশি মহব্বত করেন। এবং অন্যান্য পাখিদের তুলনায় কবুতর আল্লাহ তায়ালার এবাদত এবং জিকির সবচেয়ে বেশি করে।
বলা হয়ে থাকে কবুতর যতক্ষণ জাগ্রত অবস্থায় থাকে সর্বদা আল্লাহ আল্লাহ জিকির করতে থাকে। দিনরাত আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল থাকে। কবুতর অন্যান্য পাখিদের তুলনায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় আকাশে উড়তে পারে। কবুতর আকাশের অনেক উঁচুতে উড়তে পারে।
এমনকি যখন কোন ঈগল পাখি কবুতরকে ধরার জন্য তারা করে তখন কবুতর ঈগলকে ছারিয়ে আকাশের আরও অনেক উঁচুতে উঠে যায় যে উচ্চতায় ঈগলও উঠতে পারে না। এভাবে কবুতর নিজেকে ঈগলের হাত থেকে বাঁচাতে সফল হয়। আর কবুতর মনে করে আমি যতটা উপরে উঠতে পারব আল্লাহ তাআলার ততই কাছে পৌঁছাতে পারবেন। অলৌকিকভাবে আল্লাহতালা এই পাখিকে সবচেয়ে উঁচুতে উড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন।
২/ বিড়াল
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বলেন আমি অনেক পরহেজগারী মানুষকে দেখেছি যারা আল্লাহ তায়ালার স্মরণে ও এবাদতে নিজেদের দিন এবং রাত্রি অতিবাহিত করত। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা এই ব্যক্তিদের দোয়াও ততটা দ্রুত কবুল করেন না যতটা দ্রুত আল্লাহতালা বেড়ালের দোয়া কবুল করেন।
বিড়ালের দোয়া এবং বদদোয়া খুব দ্রুত কবুল হয়ে যায়। বিড়ালের দোয়ার প্রচন্ড প্রভাব রয়েছে। বিড়াল যার জন্য দোয়া করে সে খুব দ্রুত সকল সফলতা পায়। পাশাপাশি বিড়ালের বদদোয়াও খুব খারাপ হয়ে থাকে। বিড়াল যাকে বদদোয়া করবে সেই ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখিরাতে বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর একটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এক মহিলাকে জাহান্নামের আগুনে মিরাজের রাত্রিতে জলতে দেখেছি। সেই মহিলা একটি বিড়ালকে তার ঘরের মধ্যে এমন ভাবে বেঁধে রেখেছিল যে তাকে কোন খাবার বা পানি দেয়নি। আর বিড়ালটিকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজেই নিজের খাবার সংগ্রহ করতে পারে। অতঃপর এইভাবে ক্ষুধা এবং যন্ত্রণায় বিড়ালটি মৃত্যুবরণ করে। ফলে সেই ব্যক্তির যাবতীয় ভালো আমল আল্লাহতালা নষ্ট করে দেন এবং অভিশপ্ত অবস্থায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।
৩/ চড়ুই পাখি
চড়ুই হচ্ছে এমন এক পাখি যাকে আল্লাহতালা অনেক বেশি পছন্দ করেন এবং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম চড়ুই পাখির তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
সর্বপ্রথম চড়ুই পাখি যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন সবার আগে আল্লাহ তায়ালার জিকির করে। দুই নাম্বারে চড়ুই অত্যন্ত নিষ্পাপ একটি পাখি এটির মধ্যে কোন চতুরতা পাওয়া যায় না। তিন নাম্বারে চড়ুই পাখি আল্লাহ তায়ালার উপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করে। চড়ুই পাখি যেখানেই কোন খাবার খায় সেখানকার খাবার খেয়ে পেট ভরার পরে সেখান থেকে এক্সট্রা কোন খাদ্য নিয়ে যায় না। বাকি খাবার অন্য পাখিদের জন্য রেখে চলে যায়।
সে পরের দিনের জন্য আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে। সে বিশ্বাস করে যে আল্লাহতালা পরের দিনও তাকে একইভাবে রিজিক দান করবে। আর সে মনে মনে বলে আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ আমার রিজিকদাতা। প্রত্যেকটি চড়ুই পাখি এই দোয়াটি পড়ে এবং তারা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতের জন্য কোন কিছু জমা করার প্রয়োজন নেই। কেননা জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে। সুতরাং রিজিকও আল্লাহই পাঠাবেন।
৪/ কুকুর
হযরত সুলাইমান আলাই সালাম বলেন মানুষেরা বলে কুকুর একটি নাপাকি প্রাণী। আর এ কারণে মানুষ কুকুরকে হত্যা করে থাকে। মানুষ মনে করে কুকুরকে মারলে বা হত্যা করলে কোন পাপ হয় না। নাউজুবিল্লাহ।
এটি অত্যন্ত ভ্রান্ত একটি ধারণা। ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, কুকুরকে মারার কারণে, কষ্ট দেওয়ার কারণে কুকুরের বদদোয়ায় অনেক মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে। একইভাবে একজন চরিত্রহীন নারী ঈমান ও একটিমাত্র নেক আমলের বদৌলতে আল্লাহপাক তার অতীত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন।
কুরআনুল কারীমেরও কুকুরের ব্যাপারে বর্ণনা রয়েছে। কুরআনুল কারীমের সূরা কাহাফ এর মধ্যে আসাফে কাহাপের সেই যুবকদের সঙ্গী এক কুকুরের কথা আল্লাহতালা বর্ণনা করেছেন। যে কুকুরটি আল্লাহ তায়ালার সেই নেক বান্দাদের প্রতি মহব্বত থাকার কারণে জান্নাতে যাবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কুকুরকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করাতে নিষেধ করেছেন।
অনেকে মনে করে থাকেন কুকুর পালন করা হারাম। আসলে বিষয়টি তা নয়। কুকুরকে আপনি ঘরে স্থান দিতে পারবেন না, আপনার সন্তানদের সাথে সে চলাফেরা করতে পারবেনা।
কিন্তু আপনি ঘরবাড়ি, আবাসস্থল, কৃষি খামার পাহারা দেওয়ার জন্য কুকুর পালন করতে পারবেন। কেননা কুকুর প্রভুভক্ত এবং বিশ্বস্ত প্রাণী। যেহেতু কুকুরের মুখের লালা নাপাক তাই কোনভাবে কুকুরকে নিজের বসবাসের ঘরে স্থান দেওয়া যাবে না এর আরেকটি কারণ কুকুর ঘেউ ঘেউ করলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে না। কুকুর পালনের সীমা রাখা সম্পর্কে না জানার কারণে কুকুর সম্পর্কে আমাদের অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
৫/ পিপড়া
সুলাইমান আলাইহিস সালাম বলেন,পিপড়া এটিকে সামান্য ক্ষুদ্র প্রাণী মনে করো না। আমরা কেউ যদি পায়ের তলায় পিপড়া পিষে মেরে ফেলি তাহলে এটাকে অনেকে সাধারণ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু মানুষ যদি পিপড়া মর্যাদা সম্পর্কে জানতে পারতো তাহলে ভুলেও কখনো নিষ্পাপ পিঁপড়াদের ক্ষতি করত না।
পবিত্র কুরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা রয়েছে যার নাম সূরা আন নামল। নাহল শব্দের অর্থ পিপড়া। এই সূরাতে আল্লাহতালা পুরোটাই পিঁপড়ার আলোচনা করেছেন। কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার একজন প্রেরিত নবী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে পুরো পৃথিবীর বাদশাহী দান করেছিলেন। একবার সুলাইমান আলাইহিস সাল্লাম তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এমন একটি এলাকা অতিক্রম করছিলেন যেখানে পিঁপড়াদের বসবাস ছিল।
তখন পিঁপড়াদের যে রাজা ছিল সে হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লাম এর বাহিনীকে আসতে দেখে সকল পিঁপড়াদের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো। হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লাম তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসছে তোমরা যে যেখানে আছো নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করো।
না হলে সুলাইমান আলাই সাল্লাম এর সৈন্যবাহিনীর পায়ের তলে পিষে মারা যাবে। তখন হযরত সুলাইমান আলাই সাল্লাম পিঁপড়ার বাদশার এ আহ্বান শুনে হেসে দিলেন। এখানে একটি বিষয় জানা দরকার পিঁপড়েরা মানুষের মতই তাদের নিজ বাস স্থানে অবস্থান করে বসবাস করে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও পিঁপড়েদের বসবাস
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান এটি প্রমাণ করেছে যে, পিঁপড়া মানুষের মতই বসবাস করে। মানুষেরা যেরকম তাদের বাসস্থানের জন্য নিজেরা ঘর তৈরি করে এবং পরিবার স্বজন নিয়ে বসবাস করে।
ঠিক একই ভাবে পিঁপড়েরাও নিজেরা পরিশ্রম করে তাদের বসতি স্থাপন করে এবং একত্রে বসবাস করে। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বলেন যারা পিপড়াকে স্ইবচ্ছায় হত্যা করবে তাদের কাছ থেকে আল্লাহতালা রিজিক তুলে নিবেন। তবে মানুষের অজান্তে যদি পিঁপড়া তাদের পায়ের তলে পিষ্ট হয়ে মারা যায় তাহলে এর জন্য মানুষের কোন গুনাহ হবে না।
তবে জেনে বুঝে স্ব ইচ্ছায় যদি আপনি কোন পিপড়াকে পিস্ট করে হত্যা করেন তাহলে অবশ্যই পাপের ভাগী হতে হবে এবং আল্লাহ আপনার রিজিক তুলে নিবেন।
যদি কারো হাত থেকে কোন খাবার পড়ে যায় অথবা যদি কেউ পিঁপড়েকে স্বইচ্ছায় খাদ্য দিয়ে থাকে তাহলে পিঁপড়েরা ঐ ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ এই দোয়ার বরকতে সেই ব্যক্তির রিযিক আরো বৃদ্ধি করে দেন। ইসলামিক স্কলারশিপরা বলেন, যে পিপড়া গুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর অর্থাৎ মানুষকে কামড়ালে জ্বালা যন্ত্রণা বা ব্যথার অনুভব হয় ঐ পিঁপড়ে গুলোকে হত্যা করলে কোন পাপ হবে না।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এই পাঁচটি প্রাণী সম্পর্কে অবগত করার পর সকল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেন। তিনি বলেন পৃথিবীতে সৃষ্টি আল্লাহর সকল প্রাণীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি দেখানো উচিদ। কেননা তারাও আল্লাহর সৃষ্টি একটি মাখলুকাত।
তারাও প্রতিনিয়ত আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকে। এজন্য আমাদের সার্ধ মতো তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা অথবা খাদ্য প্রদান করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি কাজ। তাই আমরা আল্লাহর সৃষ্টি সকল প্রাণী বা জীবকে ভালোবাসবো এবং তাদেরকে কখনোই কষ্ট দিব না।