শরীর সুস্থ রাখার নিয়ম! বন্ধুরা আজকের কথা বলবো শরীর সুস্থ রাখার সহজ ৭টি উপায় নিয়ে। বন্ধুরা বর্তমান সময়ে মানুষের খুব তাড়াতাড়ি বয়স বেড়ে যাচ্ছে, এক জন মানুষের ৩০ বছর, সে ৫০ বছর বয়সীদের মতো করে আচরণ করছে। তাই মানুষের শরীরে সুস্থ রাখার প্রয়োজন।
শরীরস্বাস্থ্য ভালো থাকে তার জন্য জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করা যেতে পারে
আজকাল বয়স নয়, সুগার, প্রেশার, দেহের নানান জায়গায় ব্যথা এই সমস্ত রোগগুলি শরীরে বাসা বাঁধে অনেক ক্ষেত্রেই জীবনযাপনের ধরনের কারণে।
তাই কম বয়স থেকে বেশি বয়স সকলের মধ্যেই এই সব রোগ নিয়ে খুবই সমস্যা থেকে যায়। এই সমস্ত রোগ এমনই বালাই, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মের মধ্যে থাকলে নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ম ভাঙলেই মাথা চাগাড় দিয়ে ওঠে।তবে শুধু এই রোগ নয়।
যে কোনো রকম রোগই যাতে প্রাথমিক ভাবে ঠেকানো যায়, শরীরস্বাস্থ্য ভালো থাকে তার জন্য জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করা যেতে পারে। তার জন্য রয়েছে কয়েকটি স্বাস্থ্য সম্মত টিপস, তাতে করে সুস্থ জীবন যেমন লাভ করা যায়, তেমনই মনও থাকে সতেজ ও ফুরফুরে।
১। নানান রকম ফল-সবজি খেতে হবে-লন্ডন কিংস কলেজের গবেষক ডাঃ মেগান রসির মতে, কেবলমাত্র বেশি বেশি করে সবজি ও ফল ইত্যাদি খেলেই হবে না।
তার মধ্যে আনতে হবে রকমফের। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে সব ধরন মিলিয়ে যদি কম করে ৩০ রকমের সবজি ও ফল খাওয়া যায় তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
২। উপযুক্ত পরিমাণ জল খাওয়া –-সারা দিন উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেমন দরকার, তেমনই দরকার পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানীয় জল পান করাও। কারণ পানীয় জল শুধু যে তেষ্টা মেটায় তাই নয়, শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখে, শরীরের অন্তরীণ জলের চাহিদা পূরণ করে সঙ্গে আরও একাধিক কাজ করে গোটা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে জল। ফলে জল পরিমাণ মতো জল খাওয়াটা খুবই দরকার।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম-বর্তমান পরিস্থিতিতে সময়ের বড়ো অভাব। ফলে ঘুমের সময় কাটছাঁট কম বেশি সকলেরই হয়। তবে একটা কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেমালুম আমরা ভুলে যাই যে, শরীর একটি যন্ত্রের মতো।
তাই তাকে যেমন কাজ করানো যায়, তেমনই দরকার তার বিশ্রামও। তার থেকেও বেশি ঘুম শুধু শরীরকে বিশ্রাম দেয় না। বিশ্রাম দেয় মাথাকেও। ফলে এই বিশ্রাম শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। তাই প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিন রাতে কম পক্ষে আট থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানো আবশ্যক।
কারণ তা না হলে ঘুমের ঘাটতি দেখা যায়। শরীরকে দুর্বল করে। তাই পরিমাণ মতো ঘুমলে শরীর সার্বিক ভাবে বিশ্রাম পায়, নতুন উদ্যম গড়ে ওঠে, ক্লান্তি বোধ দূর হয়। পাশাপাশি সব ঠিক থাকলে শরীরে অসুখের উপদ্রবও কম হয়।
এক্সেটার ইউনিভার্সিটির স্পোর্ট অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ডা. গেভিন বাকিংহামের মতে, ঘুম কম হলে মানুষের কগনিটিভ ফাংশন বা নতুন জিনিস শেখার ক্ষমতা কমে যায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও কমে যায়, মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।
৪। নিজের মনের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া-খাবার, জল, ঘুমের পর যে বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয় তা হল, নিজের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া। অনেকেই আছেন পারিপার্শ্বিকের চাপে নিজের মনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে।
ভালো লাগা, খারাপ লাগাকে দাবিয়ে রেখে ভেতরে ভেতরে গুমরে থাকে। তবে একটি জরুরি কথা কী মনের মধ্যে নিজের সাধ, ইচ্ছে ইত্যাদিকে চেপে রেখে আর যাই হোক শারীরিক আর মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায় না। তাই নিজেকে, নিজের ইচ্ছেকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
শরীর সুস্থ রাখতে কোলেস্টেরল সম্পর্কে সচেতন হন দূরে রাখুন এই রোগগুলি
ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ও এক্সারসাইজ বিষয়ক শিক্ষক ডাঃ নেডাইন স্যামির মতে, নিজেদের মনের ওপরে বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার।
আত্ম সচেতনতা বাড়িয়ে মনের ওপরে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো সম্ভব। এই আত্ম সচেতনতা এমন এক বিষয় যা মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ইচ্ছে, অনিচ্ছা ইত্যাদিকে অনেক ভালো ভাবে চিনতে সাহায্য করে। এই চেনার মাধ্যমে নিজের অনুভূতিকে চেনা যায়। মনের দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠা যায়। যা পরোক্ষও প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাস্থ্যর উন্নতিতে প্রভাব ফেলে।(শরীর সুস্থ রাখার নিয়ম)
১। ব্যায়াম করা-শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই নিয়ম করে হাঁটা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। যদি সম্ভব হয় জিমও করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়ম করে মর্নিংওয়াক বা ইভিনিং ওয়াক তো আছেই। এই কাজগুলি শরীরকে সচল করে। এতে করে বাড়তি মেদ জমে শরীরকে অসুস্থ হওয়ার থেকে রক্ষা করা যায়। তাই কম করে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট এই কাজ করতে পারলে খুবই ভালো।
২। পোষ্য রাখা যেতে পারে-আবেরিস্টওয়াইথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক ডা. রিস থেচারের মতে, জিম যাওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে যদি পোষ্য কুকুর থাকে তা হলে খুবই উপকার হয়।
কারণ হিসাবে তিনি বলছেন, কুকুরকে যদি দিনে দু’বার অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটাতে হয় তা হলে বাধ্য হয়েই নিজেকেও হাঁটতে হবে ওই সময়টা। ফলে নিজের জন্য আলাদা করে সময় বের করতে না পারা বা কোনো কোনো দিন হাঁটা বন্ধ যাওয়ার আর ভয় থাকে না। এ ভাবেই রোজকার হাঁটার কাজটা হয়ে যায়।
৩। মন খুলে বেশি করে হাসা-হাসি একটি খুব ভালো ব্যায়াম বা ওষুধ বলা যেতে পারে শরীর ও মনের সুস্বাস্থ্যের জন্য। লোক মুখে ফেরে মন খুলে জোড়ে জোড়ে হাসলে হৃদয় ভালো থাকে।
ডাঃ জেমস গিল বলছেন, মানুষের উচিত খুশি থাকার চেষ্টা করা। তা হলেই সুস্থ থাকবে শরীরও। তার জন্য তিনি বেশি বেশি করে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন-
স্বাস্থ্যকর খাবার খান-সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। কারণ আপনার গ্রহণকৃত খাবার থেকেই শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর সুস্থ থাকে। অপরদিকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাবার খেলে তা ডেকে আনে নানা অসুখ।
সকালে পেটপুরে খাবার খান। দুপুরে খান ভারী ও হালকার মাঝামাঝি। আর রাতের খাবার খান একদমই হালকা। তিনবেলা মূল খাবারের বাইরে খেতে পারেন স্বাস্থ্যকর নাস্তা ও মৌসুমী ফলমূল। বাড়িতে রান্না করা খাবার খান। রান্নার পদ্ধতি যেন স্বাস্থ্যকর হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মানসিক চাপ নেবেন না-জীবন সব সময় একইভাবে মসৃণ চলবে না। কখনো আনন্দ, কখনো বেদনা আসবেই। তাই সত্যিকে সহজে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলুন।
কোনো বিষয়ে আশানুরূপ ফল না হলে ভেঙে পড়বেন না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানসিক চাপ বাড়াবেন না। বরং হাশিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। মানসিক চাপ আরও অনেক অসুস্থতার কারণ। তাই মানসিক চাপ বাড়তে দেবেন না। মন ভালো রাখে এমন সব কাজ করুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন-স্বাস্থ্যকর খাবারের মতোই আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করা। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন শরীরচর্চায় মন দিন।
এতে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটাই সতেজ অনুভব করবেন। জিমে গিয়ে ভারী শরীরচর্চা করা সম্ভব না হলে বাড়িতেও করতে পারেন। সেইসঙ্গে ধরে রাখুন হাঁটাহাঁটির অভ্যাস।
মন ভালো রাখুন-মনের প্রতি যত্নশীল হোন। মন কী চায় তা ভেবে দেখুন। মনের বিরুদ্ধে কাজ করতে যাবেন না। তবে অনেক সময় মন অযৌক্তিক কিংবা অবাস্তব কিছু চাইতে পারে।
তখন মনকে বোঝান। আবেগ এবং বিবেকের সমন্বয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন। মন ভালো থাকলে তা আপনার শরীর ভালো রাখতেও সাহায্য করবে।(শরীর সুস্থ রাখার নিয়ম)