শিক্ষা

সর্বশেষ যে পাপি ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে

সর্বশেষ কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে

সর্বশেষ কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে! বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে  আমরা শুধুমাত্র আলোচনা করব একটিমাত্র হাদিস নিয়ে। হাদিসটি একজন মানুষকে নিয়ে।

যিনি সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। হাদিসটি একটু লম্বা এবং এই হাদিসটি অনেকেই বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি সহি বুখারী এবং সহি মুসলিমে রয়েছে।সহি মুসলিমে হযরত ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা বর্ণিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন,”” সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে জাহান্নামে থাকবে সে এক কদম হাঁটবে আর এক কদম মুখ থুবরে পরবে।

আর জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে। প্রচন্ড যন্ত্রণা আর জাহান্নামের আগুন  তাকে গ্রাস করবে। সহ্য করতে না পারে সে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, হে আমার প্রতিপালক আমাকে এই আগুন থেকে মুক্ত করুন। এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে আর এর ধোয়া আমার শ্বাস রোধ করছে।

তখন সৃষ্টিকর্তা বলবে আমি যদি তোমাকে এই আগুন থেকে মুক্ত করি তুমি কি আমাকে কথা দিচ্ছো আর কিছু চাইবে না। তখন সেই লোকটি প্রতি উত্তরে বলবে হে আল্লাহ আমি আপনার সম্মানের কসম করে বলছি, আমাকে এই আগুন থেকে মুক্ত করুন আমি আর কিছুই চাইবো না।

তখন আল্লাহতালা তার রহমত গুনে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের দরজার বাইরে নিয়ে আসবে। সেই বাইরে এসে বলবে, যিনি আমাকে এই আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন তিনি মহিমান্বিত এবং বলতে থাকবেন আমার মত সম্মানিত আর কেউ নেই। অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে বের হয়ে তার মনে হবে এর চেয়ে সুখের বা শান্তির স্থান আর নেই।

 এরপর আল্লাহ তাআলার হুকুমে তার সামনে একটি গাছ এবং পানির নহর প্রবাহিত হতে থাকবে। জাহান্নামে কোন পানি নেই। আর যখন সে এই পানি দেখবে তখন তার মন পুনরায় সেই পানির দিকে আকৃষ্ট হবে। সে বলতে থাকবে ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ সেই পানির কাছে যেতে চাইবে।

কিন্তু আবার আল্লাহর কাছে সে বলতেও পারবেনা। কারণ সে ওয়াদা করেছে আর কিছু চাইবে না। অবশেষে আর থাকতে না পেরে সে বলবে হে আল্লাহ আমাকে ঐ গাছের নিচে নিয়ে যান। যেন আমি সেই গাছের নিচে বসতে পারি এবং সেই নহর থেকে পানি পান করতে পারি।

তখন আল্লাহ তাআলা বলবে হে আদম সন্তান তুমি কিভাবে তোমার ওয়াদা ভাঙ্গলে। তুমি কি আমাকে বলনি, যে তুমি আর কিছুই চাইবে না। লোকটি তখন বলবে হে আমার সৃষ্টিকর্তা আমি ওয়াদা করছি, তাই এটাই আমার শেষ চাওয়া। আমি আর আপনার কাছে কিছুই চাইবো না।  আল্লাহ তখন তাকে সেই গাছের নিচে নিয়ে যাবেন এবং নহর থেকে পানি পান করার অনুমতি দিবেন। কারণ আল্লাহ তা’আলা জানেন কোন মানুষ এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক থাখতে পারবেনা।

এরপর আল্লাহর হুকুমে কিছু দূরে জান্নাতের দরজার সামনে আরো একটি গাছ জন্ম নেবে। সেই গাছটি হবে আগের চেয়েও আরও একটু বড়। আর গাছটির পাশ দিয়ে বয়ে যাবে ঠান্ডা পানি নহর।

এটি দেখার পর তার আবারও ইচ্ছা জাগবে ঐ গাছটির নিচে যাওয়ার। কিন্তু লজ্জায় সে আল্লাহর কাছে কিছুই বলতে পারবে না। কারণ সে ওয়াদা করেছে আর কিছুই চাইবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে তিনি আল্লাহকে বলবেন, ইয়া রব আমাকে ওই গাছের নিচে নিয়ে যান যেন আমি সেই গাছের ছায়ায় বসতে পারি এবং সেই নহর থেকে পানি পান করতে পারি। তখন আল্লাহ বলবেন হে আদম সন্তান তুমি কিভাবে পুনরায় তোমার ওয়াদা ভাঙলে, তুমি কি আমাকে বলনি যে তুমি আর কিছুই চাইবেনা।

 লোকটি বলবে হে আমার রব আমি ওয়াদা করছি এটাই শেষ আমি এরপর আর কিছুই চাইব না। এরপর আল্লাহ আবারও তাঁর রহমত দেখাবেন। আর সেই লোককে জান্নাতের দরজার পাশে সেই গাছটির নিচে নিয়ে যাবেন। লোকটি পুনরায় সেই গাছের ছায়ায় বসবে এবং নহর থেকে ঠান্ডা পানি পান করবে।

এরপর সে তাকিয়ে দেখবে জান্নাতে দরজা দিয়ে ভেতরে দেখা যাচ্ছে। আর এমন কেউ নেই যে জান্নাত দেখবে আর তার মধ্যে প্রবেশের ইচ্ছে করবে না। জান্নাতের ভেতরের গাছ, ঘরবাড়ি, নদী সব দেখবে এবং জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে। ফলে সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারবে না। সে আল্লাহর কাছে বলবে, হে আমার রব আমাকে জান্নাতের ভেতরে নিয়ে যান। আল্লাহ পুনরাই বলবেন হে আদম সন্তান, তুমি কিভাবে তোমার ওয়াদা ভাঙলে। তুমি কি আমাকে বলনি, যে তুমি আর কিছুই চাইবে না।

লোকটি তখন আল্লাহকে বলবে, হে আমার রব আমি ওয়াদা করছি এটাই শেষ আমি এরপর আর কিছুই চাইবো না। এরপর আল্লাহ তাকে বলবে জান্নাতে প্রবেশ কর। কিন্তু দেখবে সেখানে কোন জায়গা নেই। সে বলবে হে আল্লাহ এখানে তো কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই।

আমি কোথায় যাব আল্লাহ তখন বলবেন হে আমার বান্দা আমি যদি তোমাকে জান্নাতে একটি দুনিয়ার সমান জায়গা দেই। তখন লোকটি বলবে ইয়ার রব আপনি সবকিছুর মালিক আর আমি সামান্য এক বান্দা অথচ আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন। অর্থাৎ তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তার মত একজন মানুষকে আল্লাহ একটা দুনিয়ার সমান জায়গা দিবেন।

হাদিসটি বর্ণনার এই পর্যায়ে ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হেসে উঠলেন। তখন তাকে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, আমি হাসলাম কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ওই সময়ে হেসেছিলেন এবং আমরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম হে রাসুল আপনি কেন হাসলেন তিনি বলেছিলেন যে আমার আল্লাহ হাসবেন যখন লোকটি এই কথা বলবে।

আল্লাহ ঐ লোকটির কথা শুনে হাসবেন আর বলবেন তোমার জন্য একটা পৃথিবীর সমান জায়গা বরাদ্দ করা হলো এবং এর মত আরও একটা এবং এর মত আরও একটা এবং এর মত আরও একটা এবং এর মত আরও একটা। যখন আল্লাহ পঞ্চম বারের মতো এ কথাটি বলবেন লোকটি তখন চিৎকার করে বলে উঠবেন হে আমার রব আমি সন্তুষ্ট আমি সন্তুষ্ট। অর্থাৎ লোকটি জান্নাতে পাঁচটি দুনিয়ার সমান জায়গা পাবে। কোন কোন বর্ণনায় আছে দশটি দুনিয়ার সমান জায়গা পাবে। তবে সে ব্যাপারে আল্লাই ভালো জানেন।

বন্ধুরা মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। কিন্তু আমরা পৃথিবীতে নানান অপরাধের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাই আসুন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের পাশে দাঁড়াই এবং ইসলামের পথে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেই।

এর বিনিময়ে আল্লাহ পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দিবেন এবং এই বিষয়ে তিনি নিজেই ওয়াদাবদ্ধ করেছেন। ইসলাম সম্পর্কে এরকম ধর্মীয় পোস্ট পেতে চাইলে আমাদের সাইটটি ফলো করে সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।