হামাসের ইতিহাস! জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের রোষানলে পরে একটি দেশ কিভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় তা সিরিয়াকে না দেখলে বুঝা যায় না।
যেখানে আট বছর ধরে যুদ্ধ চলছে ইরাক লিবিয়া সহ অন্যান্য দেশে আর এই একই পথ ধরে সিরিয়ার মাটিতে অকাতরে নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরছে। এরকমই আরেকটি নির্যাতিত দেশ হচ্ছে ফিলিস্তিন।
যেখানে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীরা প্রতিনিয়ত নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সম্পর্কে। কেননা তারাই শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এখন পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে দুটি দল বেশ সক্রিয়। একটি হচ্ছে হামাস অপরটি হচ্ছে ফাতাহ। এর মধ্যে হামাসের দখলে রয়েছে গাঁজা উপত্যকা। ২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যুর পর হামাস ও ফাতাহ এই দুটি সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয় এবং সেটা চরম আকার ধারণ করে ২০০৬ সালের নির্বাচনে।
ঐ নির্বাচনে হামাস জয়ী হয় এবং এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ ফিলিস্তিনে সাহায্য কমিয়ে দেয়। এরপর ২০০৭ সালে হামাস ফাতাহর তত্ত্বাবধানে থাকা গাঁজা দখলে নিয়ে নেয়। আর তখন থেকে গাঁজা শাসন করে আসছে হামাস।
হামাসের ইতিহাস
ফিলিস্তিনে যে কয়েকটি কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম হল হামাস। ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর এবং গাঁজা থেকে ইসরাইলি দখলদারদের অবসানের দাবিতে ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে হামাস গঠন করা হয়।
সংগঠনটির সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ। আর এই সংগঠনটির চাওয়া হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে বর্তমানে ইজরাইল, গাঁজা এবং পশ্চিম তীর নিয়ে একক ইসলামিক রাষ্ট্র।
রক্তক্ষয় গৃহযুদ্ধের একপক্ষে রয়েছে সিরিয়ায় ৪০ বছর ধরে শাসনকারী আল ওয়াইট গোত্রের নেতৃত্বাধীন বাদ পার্টি ওমানরা। আর অন্যদিকে রয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা যাদের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার ৬০% সুন্নি জনগোষ্ঠী। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ইরান সব বিষয়ে বাসার আল আসাদ সরকারের পক্ষে থাকছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার অন্যান্য মিত্ররা থাকছেন বিপক্ষে। জাতিসংঘে উপস্থাপিত সিরিয়ার বিরুদ্ধে সকল বিষয়ে ভেটো ক্ষমতা প্রদান করেছেন এই রাষ্ট্রগুলো।
আর অপরদিকে আরব লীগ শুরু থেকেই দোটানা অবস্থার মধ্যে। সিরিয়ার নাগরিকদের মধ্যে ৬০শতাংশ সুন্নি মুসলমান এর মধ্যে কুর্দি ৯ শতাংশ আর বাকিরা আরবীয়।
হামাসের উদ্দেশ্য
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি সময় ধরে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধ বিরোধী এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সিরিয়ার সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে শান্তি আলোচনার শুরু থেকেই হচ্ছে হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন করা হয়।
প্রথমত এর সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডস এর মাধ্যমে ইসরাইলের মধ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। কট্টর ইসরাইল বিরোধী নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে আব্দুল আজিজ হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালে মার্চ মাসে গাজায় ইজরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রে নিহত হন আহমদ ইয়াসিন। পরের মাসেই আরেক হামলায় নিহত হন আব্দুল আজিজ। এই সংগঠনের বর্তমান প্রধান খালেদ মিশাল।
হামাস শুধু পশ্চিম তীর শাসন করে কেন
ইজরাইল বিরোধী কট্টর অবস্থান রকেট হামলা চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস। এই অবস্থান থেকে সরে না আসার দৃঢ় ঘোষণার কারণে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অনেক দেশ উল্লেখ করে থাকে। এই তালিকায় রয়েছে ইজরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরের বছরই ফিলিস্তিনি আইন পরিষদে পি এল সি নির্বাচনে জয়ী হন হামাস। এরপর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ সংগঠনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০০৭ সালের জুন মাসে গাজায় হামাস এবং ফাতাহ সংগঠনের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। এরপর হামাস গাঁজায় সরকার গঠন করে আর বর্তমান পর্যন্ত গাজার শাসন ক্ষমতা এই সংগঠনটি কয়েছে। আর অপরদিকে পশ্চিম তীরে শাসনব্যবস্থা ফাতাহ সংগঠনের কাছে।
গাজা থেকে ইসরাইলে হামলা চালানো বন্ধের কথা বললেই ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি বড় অভিযান পরিচালনা করে ইসরাইল। গতবছর জুলাইয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের পরাজয় হলে প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে যায় কট্টরপন্থী এই সংগঠনটি। তবে ইরানের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সহযোগিতা পায় বলে ধারণা করা হয়।
তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী সমর্থন করায় হামাসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইরান। এমনকি সিরিয়াকে নিয়ে অনেকেই বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করে থাকেন।
তবে এই আশঙ্কা সত্যিই রূপ নেবে না বলে বিশ্বাস করা হয়। কেননা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া দু পক্ষেই জানে যুদ্ধের ভয়াবহতা কত বেশি। ফলে এই দুই দেশ সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সহযোগীদের দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এটাই স্বাভাবিক।