রাজনীতি

মোসাদকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে বিপুল অস্ত্রের সমাহার ঘটিয়েছে হামাস

হামাস এত অস্ত্র কোথায় পেল

হামাস এত অস্ত্র কোথায় পেল! গত শনিবার ইসরাইলের স্থাপনা লক্ষ্য করে ২০ মিনিটে প্রায় ৭ হাজারের বেশি রকেট ছুরে হামাস। ইসরাইলের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলি ভূখণ্ডে গিয়ে পড়ে অনেক রকেট।

এরপর থেকে হামাস কিভাবে ইসরাইলের গর্বের প্রতীক আয়রন ড্রোনকে ভেদ করে ইসরাইলে হামলা চালালো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে হামাসের মতো এরকম একটি সংগঠন এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কোথায় পেল তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্নে।

হামাসের মতো সংগঠনের অস্ত্রের উৎস কি, কারা এই সংগঠনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে, হামাসের কাছে কি কি অস্ত্র সরঞ্জাম রয়েছে এবং সেই অস্ত্র সরঞ্জাম কতটুকু শক্তিশালী এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের এই পোস্টটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আশা করি পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরটি পরবেন।

হামাস সম্পর্কে কিছু কথা

ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা কামী সংগঠন হামাদ ফিলিস্তিনের পশ্চিমটির এবং গাঁজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলের কাছ থেকে মুক্ত করার দাবিতে ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরু হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে ইমাম শেখ ইয়াসিন ও তার সহযোগী আব্দুল আজিজ এর হাত ধরে গঠিত হয়।

হামাসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত একক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় হামাস। এ ছাড়া ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করার পাশাপাশি বিশেষ করে ইজরাইলি দখলদারীদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন তৈরি করা এবং ইজইলিদের আক্রমণের শিকার পরিবার বা ব্যক্তিবর্গদের সহায়তা করা হামাসের লক্ষ্য।

২০০৭ সাল থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা হামাসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।যাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সংগঠনটি কখনোই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ইজরাইলের স্বীকারোক্তি মানেনি। ১৯৯০ এর দশকে ইজরাইল ও ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলও অস্ত্র শান্তি চুক্তি নাকোস করে দেয় হামাস।

২০২১ সালে ১১ দিন হামাস ও ইজরাইলি বাহিনীর মধ্যে চলা যুদ্ধের পর অনেকেই ভেবেছিল হামাস হয়তো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আর হামাসের এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে টানা তিন বছর ইজরাইল তাদের দখলদারিত্ব বৃদ্ধি করেছে এবং ফিলিস্তিনের বহু অঞ্চল দখল করেছে এবং নতুন বসতি স্থাপন করে সেখানে ইজরাইলিদের স্থানান্তর করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছে ধারাবাহিক ইজরাইলের এ বর্বরতা অব্যাহত রাখার কারণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে এই সংগঠনটির। যার কারণে পূর্ণ শক্তি নিয়ে হামলা শুরু করেছে হামাস।

হামাসের অস্ত্রের উৎস

কয়েক হাজার রকেট লঞ্চার সহ অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইজরাইলের মাটিতে হামলা চালায় হামাস ।অথচ এই হামলা সম্পর্কে বিশ্বের অন্যতম চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ আগে থেকে কোন কিছুই বুঝতে পারেনি।

এরপর থেকেই বিশ্লেষকদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে এত কোরা নিরাপত্তার মাঝেও হামাস কিভাবে এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র যোগাড় করতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম গুলো বলছে ২০০৫ সাল থেকে ইজরাইলি বাহিনী মিশরের কাছ থেকে দখলের ৩৮ বছর পর ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে গাঁজা অঞ্চলটি হস্তান্তর করে।

এরপর থেকেই এই অঞ্চলে বড় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে হামাসের অস্ত্র চালানের গোপন পথ রয়েছে। ২০০৫ সালে ইরান এবং সিরিয়ার কাছ থেকেও অস্ত্র পেতে একাধিক সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে একটি গোপন সরবরাহ লাইন তৈরি করতে সক্ষম হয় এই সংগঠনটি। এই লাইনের মাধ্যমে ইরান এবং সিরিয়া থেকে রকেট লঞ্চারের বিশাল বড় চালান নিয়ে আসতো হামাস।

 এই গোপন সুরঙ্গটি মিশরের কাছে গাজা উপত্যকায় নির্মাণ করা হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। ২০০৭ সালে ইজরাইল বাহিনী ইরানের নির্মিত ফজর ৫ রকেট লঞ্চারের একটি বিশাল চালান আটক করেন। হামাসের যোদ্ধাদের জন্যই ঐ চালানটি ফিলিস্তিনে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইজরাইলি গোয়েন্দাদের করা নিরাপত্তার মধ্যেও জাহাজ থেকে উপকূলে চোরাচালান এবং কালোবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ রকেট লঞ্চার সংগ্রহ করে হামাস। ঐতিহাসিকভাবেই এই সংগঠনের কাছে অস্ত্র পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ রোড হিসেবে কাজ করে সমুদ্র পথ।

এছাড়া বিদেশি অনেক উৎস থেকেও এই সংগঠনটি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে বলে ধারণা করা হয়। যেমন ইরান এবং সিরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও বিদেশি আরও বেশ কয়েকটি উৎস থেকে ফজর ৩, ফজর ৫ এবং  টেন থ্রি জিরো টু এর মত বিভিন্ন অস্ত্র সংগ্রহ করে হামাস।

হামাসের কাছে কি ধরনের অস্ত্র রয়েছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ অস্ত্রই হামাস নিজেই উৎপন্ন করে থাকে। সংগঠনটি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং পানির নিচে নিয়ন্ত্রণের জন্য যন্ত্র সাইবার ওয়ারফেয়ার সহ বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম তৈরির পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমে অনেক বেশি প্রসার ঘটিয়েছে।

হামাসের সবচেয়ে বেশি কার্যকারী অস্ত্র হলো রকেট লঞ্চার। এই অস্ত্রটির দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি ব্যবহার করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া যায়। ২০১৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রকেট ছুড়েছিল হামাস এবং ছয়টি আত্মঘাতী ড্রোন ছুরে ছিল এই সংগঠন।

ইসরাইলের বড় পদের কর্মকর্তারা নিজেরাই স্বীকার করেন যে হামাসের কাছে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার এর বেশি রকেট লাঞ্চার রয়েছে। যেগুলো বেশিরভাগই স্বল্প পাল্লার এবং ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

পাশাপাশি দূরপাল্লার অনেক বড় একটি অস্ত্রের সংগ্রহ আছে বলে ধারণা করা হয়। যে রকেটগুলো ইজরাইলের জনবহুল অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রতিরক্ষা এবং ওপেন সোর্স গোয়েন্দা সংস্থা এর তথ্য মতে গত শনিবার হামাস ইজরাইলে যে অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে সেখানে নতুন এক ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে যা রাজুং নামে পরিচিত।

এমনকি অনেক ছোট আকারের ড্রোন ব্যবহার করেছিল এই হামলায়। যেগুলো অধিকাংশই ইরানের ডিজাইন করা বলে দাবি করে ঐ সংস্থাটি। হামাসের একটি নিজস্ব সামরিক শাখা রয়েছে যা কাশেম ব্রিগেড নামে পরিচিত। হামাস এত অস্ত্র কোথায় পেল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইজরাইলের তুলনায় হামাসের অস্ত্রের ভান্ডার তত বেশি শক্তিশালী নয়। কিন্তু হামাস যেভাবে ইজরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে হামলা চালিয়েছে এতে করে সংগঠনটিকে হালকা করে নেবার কোন যৌক্তিকতা নেই।

বন্ধুরা, ইজরাইলের উপর হামাসের এই আক্রমণকে আপনি কতটুকু সমর্থন করেন তা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিন এবং ইজরাইল ও ফিলিস্তিনের যুদ্ধ সম্পর্কে সর্বশেষ জানতে আমাদের সাইটের সঙ্গেই থাকুন।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।