হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো কি কি! বন্ধুরা আশা করি সকলে ভাল আছেন। আজকে আমরা জানবো হার্ট অ্যাটাকের কারণ গুলো কি কি অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে আমাদের কি কি করনীয় সে বিষয় সম্পর্কে। খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগের আশঙ্কাটা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
আবার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো হার্টের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে এবং জটিল শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক খাবারের মধ্যে ডিমের কুসুম এবং লাল মাংসে কোলেস্টেরল উচ্চমাত্রায় থাকে।
উদ্ভিদ জাতীয় খাবারে কোলেস্টেরল থাকে না। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোন একটি নালীর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্তনালীর গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালী শুরু হয়ে যায়। সেই শুরু নালীতে ধীরে ধীরে রক্ত জমার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
তাই হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুকি কমাতে আপনার খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে দশটি খাবার। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই দশটি ঝুঁকিপূর্ণ খাবার সম্পর্কে যে খাবারগুলো খেলে আপনার ১০০% হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১/ কলিজা, মগজ, হাড়ের মোজ্জা
কলিজা, মগজ, হাড়ের মোজ্জা বা নেহারি এই খাবারগুলোতে বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি থাকে। তাই যারা হার্টের রোগী তাদের জন্য কলিজা মগজ হাড়ের মোজ্জা বা নেহারি যুক্ত খাবার অবশ্যই বর্জন করা উচিত।
২/ চিংড়ি
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো কি কি হৃদ রোগীদের জন্য আরেকটি বর্জনীয় খাবার হল চিংড়ি। স্বাভাবিক মাছের খাবারের মধ্যে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকলেও চিংড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি।
সাড়ে তিন আউন্স ওজনের রান্না করা সাধারণ মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে সেখানে একই পরিমাণে চিংড়ি মাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিলিগ্রাম কোলেস্টরেল। তাহলে এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে হার্টের রোগীর জন্য অবশ্যই চিংড়ি মাছ বর্জন করতে হবে। কেননা এটি হার্টের রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অতএব হার্টের রোগীদের জন্য চিংড়ি মাছ খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
৩/মাছের মাথা এবং ডিম
রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো সেই ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের উৎসই হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম। অতএব হার্টের রোগীদের মাছের মাথা ও মাছের ডিম খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
৪/ ফাস্ট ফুট
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল এর একটি রিপোর্টে দেখা গেছে প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে যারা ফাস্টফুড খায় তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার অন্যান্য ব্যক্তিদের চেয়ে ২০% বেশি। আর যারা সপ্তাহে একের অধিক অর্থাৎ দুই থেকে তিনবার ফাস্টফুট খায় তাদের মৃত্যুর হার আরো অনেক বেশি অর্থাৎ ৫০% এর সমান। শুধু তাই নয় সপ্তাহে যারা চার থেকে পাঁচ বারের অধিক ফাস্টফুট খাবার খায় তাদের ক্ষেত্রে এই হার ৮০% এরও বেশি।
৫/ ডিমের কুসুম
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও যারা হৃদরোগী রয়েছে তাদের জন্য ডিমের কুসুম না খাওয়াটাই সবচেয়ে উত্তম বলে বিবেচনা করা হয়। কেননা ডিমের কুসুমে রয়েছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল।
দেখা গেছে একটি বড় মাপের মুরগির ডিমে ১৬০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে তার পুরোটাই আছে ডিমের কুসুমে। আর জন্যই হৃদ রোগীর জন্য দিনে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডিমের কুসুম বর্জন করে চলা সবচেয়ে উত্তম উপায়।
৬/ ঘি, মাখন, ডালডা
অভিজাত খাবার তালিকায় ঘি মাখন এর অবস্থান থাকলেও এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় সেটিরেটেড ফ্যাট। সেই সাথে রয়েছে পালমিটিক এসিড যা হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হতে পারে বলেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ বিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি। এর বদলে অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার এই জাতীয় খাবার আপনি খেতে পারেন।
৭/ নারিকেল
হংকং এবং সিঙ্গাপুরের দুটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যত লোক হংকংয়ে মারা গেছে তার অন্তত তিনগুণ বেশি মারা গেছে সিঙ্গাপুরে। গবেষকদের মতে এর একটি প্রধান কারণ হলো সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের খাবারে নারিকেল ও পাম তেল ব্যবহারের অধিক প্রবণতা।
নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো সেটুরেটেড ফ্যাট যা হৃদরোগীদের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। তাই হৃদরোগীদের জন্য নারিকেল এবং পাম তেল খাওয়া থেকে দূরে থাকাটাই উত্তম।
৮/অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
ডিপ ফ্রাই খাবারগুলো মুখরোচক এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি খাবারকে যত বেশি ভাজা হয় তার মধ্যে খাদ্যমান তত কমে যায় এবং ঠিক তত বেশি সেই খাবারে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট।
এমনো দেখা গেছে একটি পর্যায়ে গিয়ে খাবারে আর কোন ক্যালরি অবশিষ্ট থাকেনা। যেমন মাংস বা কোন কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বুদবুদ উপরে ভাসে। এটির মূল কারণ হলো খাবারের মধ্যে যে পানির পরিমাণ টুকু থাকে তা তেলে ভাজার ফলে বেরিয়ে আসে এবং তেলের তাপ এবং চাপে তা শুকাতে শুরু করে।
ডিপ ফ্রাই হতে হতে পানি যখন একেবারেই শুকিয়ে যায় বুদবুদ তখন বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক তখন থেকে খাবারের ভিতরে পানির বদলে ঢুকতে থাকে তেল।
আমরা সকলেই জানি মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে সেটুরেটেট ফ্যাট থাকে। তার উপরে বাইরে থেকে আবার তেল ভিতরে প্রবেশ করায় তার ফ্যাটের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। তাই যারা হার্টের রোগী রয়েছে তাদের জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত ভাঁজা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
৯/ রেড রেডমিক
অতিমাত্রায় রেডমিক হৃদরোগের কারণ এটি কোন নতুন তথ্য নয়। তবে সেটা যে শুধু রেডমিকের ফ্যাট বা কোলেস্টেরলের কারণে হয় তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে রেডমিক ভেঙে cart9 নামে একটি যৌগ মানবদেহে তৈরি হয় যা হার্টের আটারিতে ব্লক সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আর এজন্য অবশ্যই রেডমিক খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
১০/ কেক, প্রেস্টি, পুডিং, আইসক্রিম
এসব প্রতিটি খাবারই পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। আর আমরা সকলেই জানি চিনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এমনকি মানুষটি দেখতে যদি মোটা না হয় জার্নাল অফ মেডিকেল এসোসিয়েশন এর একটি রিপোর্টে বলা হয়।
হৃদরোগের সঙ্গে চিনির সম্পর্কটা ঠিক কোথায় তা বোঝা না গেলেও এটা দেখা গেছে যে মিষ্টি জাতীয় পানীয় ব্লাড প্রেসারকে বাড়িয়ে দেয় এবং বাড়িয়ে দেয় লিভারের তৎপরতা। যা রক্তের ক্ষতিকার ফ্যাট নিঃসরণ করে। আর এ দুটি কারণে হৃদ রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে দেয়। তাই চিনিযুক্ত সকল খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। যেসব প্রাণীর দেহে বেশি পরিমাণে পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এসব প্রাণী থেকে তৈরীকৃত খাদ্য আহার তালিকা থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই খাবারের গুনাগুন সম্পর্কে জানতে হবে এবং উপরোক্ত খাবারগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।