লাইফস্টাইল

কিডনি ভাল রাখতে জেনে নিন কার্যকারী ১০টি উপায়

কিডনি ভালো রাখার নিয়ম

কিডনি ভালো রাখার নিয়ম! বন্ধুরা আপনারা জানেন কি কিডনি আমাদের শরীরের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কেনো? আপনার আরো জানেন কি কিডনি আমাদের শরীরের কিভাবে কাজ করে? তাছাড়াও কিডনি কিভাবে রোগ মুক্ত রাখা যায় এবং কি কি খাবার খাওয়া আমাদের উচিত? এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এই পোস্টটিতে। তাহলে চলুন বন্ধুরা কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-

মানব দেহের ৫টি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গের হলো কিডনি। মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে। কিডনি শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন ধরনের দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই কিডনি বিকল হলে বা ঠিকমত কাজ না করলে ঘটতে পারে নানা বিপত্তি। কিডনির যেকোন রোগ নীরব ঘাতক। এই ধরণের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।

চলুন কিডনি ভালো রাখার নিয়ম জেনে নেই-

১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে- কিডনি ভালো রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

২. লবণ কম খেতে হবে- খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করতে হবে।

৩. অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে- গরুর মাংস বা এই ধরনের প্রাণিজ আমিষ খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে খাবার তালিকায় ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখতে হবে। এছাড়া মাছ খাওয়া যেতে পারে।

৪. রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে- রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরী।

৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

৬. ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে- কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য সব সময়ই হুমকিস্বরূপ। নিয়ম না জেনে বা নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে অজান্তেই কিডনির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।

৭. প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে না- মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।

৮. কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে- অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন।

৯. ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে- ধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই এগুলোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

১০. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

কিডনি ভালো রাখতে ডাক্তারের কিছু পরামর্শ নিন

কিডনি ভালো রাখতে সবারই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। এই পানি অবশ্যই হতে হবে নিরাপদ। অসুস্থতায় (জ্বর, ডায়রিয়া, বমি প্রভৃতি) এবং ব্যায়ামের পর পানির চাহিদা বাড়ে। বিশেষত ডায়রিয়া বা বমি হলে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে অবশ্যই। গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়ের জন্যও পানির চাহিদা বেশি। আবহাওয়ার পরিবর্তনে পানির চাহিদা কমবেশি হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন (রোজ না পারলেও সপ্তাহের অধিকাংশ দিন)। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম ভালো।ধূমপান, পান-জর্দা, অ্যালকোহল বর্জনীয়। ধূমপায়ীর কিডনিতে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যায়। ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।পর্যাপ্ত ঘুম চাই রোজ। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করাই ভালো। বিশেষত ব্যথানাশক সেবন করা একেবারেই উচিত নয়। ৪০ বছর বয়স পেরোনোর পর কোনো সমস্যা না থাকলেও সবারই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি এবং প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করানো উচিত (প্রস্রাবে প্রোটিন এবং সুগারের উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য)।

এ ছাড়া কিডনির কর্মক্ষমতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ৩২ শতাংশ জানেনই না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আবার জানা থাকার পরও অর্ধেক মানুষেরই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। শেষ পর্যন্ত মোট রোগীর মাত্র ২৫ শতাংশ পারছেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে।

একই ধরনের কথা ডায়াবেটিসের জন্যও প্রযোজ্য। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগগুলো থাকার কারণে রোগীর কিডনি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে নীরবে।

ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকলে কিংবা রক্তের চর্বি বেড়ে থাকলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিডনি বিকলের প্রধান কারণ এগুলোই।কিডনির রোগের লক্ষণগুলোকে জানুন। ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, প্রস্রাব কম হওয়া, পায়ে পানি আসা প্রভৃতি হতে পারে কিডনি রোগের লক্ষণ। লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসা নিন।

যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলো এবং রোগের জটিলতার লক্ষণ সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। রোগীর পরিবার কিংবা রোগীর সেবা দেন যিনি, তাঁদেরও বিষয়গুলো জানতে হবে।তো বন্ধুরা আজকের পোস্টটি এতোটুকুই। কালকে আরেকটি পোস্টের সাথে দেখা হচ্ছে। সবাইকে ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।