তথ্য ও প্রযুক্তি

মানুষ বসবাস যোগ্য ২৪টি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা

মানুষের বসবাসযোগ্য গ্রহ কয়টি! প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে চেয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে খানিকটা এ তৃষ্ণা মিটলোও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় তা অতি সামান্য।

মানুষের বসবাসযোগ্য গ্রহ কয়টি

সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন সেই বিশালতার মাঝে বসবাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান মিলেছে। এতে যেন ভিনগ্রহের প্রাণী ও ভিনগ্রহে বসবাস স্থাপন নিয়ে যুগের পর যুগ ঘুরপাক খেতে থাকা  কৌতূহলের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র হল সূর্য। আলো,  তাপ সহ সব ধরনের যোগান দিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রেখেছে নক্ষত্রটি। ধারণা করা হয় ৪৬০ কোটি বছর আগে সূর্যের সৃষ্টি। নক্ষত্রটিতে পারমাণবিক ফিউশনে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিবর্তিত হয়ে শক্তি উৎপাদন করে।

৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি বছরের মধ্যে মৃত্যু নক্ষত্রের পরিণত হবে সূর্য

জ্যোতির বিজ্ঞানীদের ধারণা সূর্যের প্রায় অর্ধেক জ্বালানি  ইতো মধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য সম্পূর্ণই একটি মৃত্যু নক্ষত্রের পরিণত হবে। এই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সূর্য গ্রাস করবে পৃথিবী সহ কয়েকটি গ্রহকে। বিলুপ্ত হবে আমাদের সৌরজগৎও। শত বছর আগে বিজ্ঞানীর  নতুন সৌরজগতের সন্ধান শুরু করলেও বলার মতো সাফল্য দেখা দেয় ১৯৯৫ সালে। সে বছর প্রায় ৫০ আলোকবর্ষ দুরে ৫১ প্যাঁগাছি নামক একটি নক্ষত্রের সন্ধান মেলে।

যাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা প্রথম এক্সোপলানেট ৫১ প্যাঁগাছি B এর খোঁজ পাওয়া যায়। সুইচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মিসেল মেওর এবং দিদি এর ইউলোজ রেডিয়াল ভেলোসিটি পদ্ধতিটি ব্যবহার করে নতুন সৌরজগতটি আবিষ্কার করেন। তারপর থেকে ৫৩৪৭ টি এক্সপ্লানেট আবিষ্কৃত হয়েছে। যেগুলো আমাদের সৌরজগতের গ্রহের মত অন্য কোন নক্ষত্র কে আবর্তন করছে।

বসবাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান

২০২০ ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডক সুলস মাকুরসের একটি গবেষণা এক্সটো বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণাটিতে তিনি এবং তার দল এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এক্সোপলানেট গুলো পর্যবেক্ষণ করে সর্বমোট ২৪ টি  বসবাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। গ্রহ গুলোকে তারা সুপার হেভি টেবল বা চমৎকার বসবাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া না গেলেও গ্রহ গুলোতে টিকে থাকার মত অবস্থা রয়েছে বলে গবেষকদের ধারণা।

কোনো গ্রহ সুপার হেভিটেবল হতে গেলে তাকে নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘুতে হবে। গ্রহটির স্থলভাগ পৃথিবীর মতো পাথরের হতে হবে। থাকতে হবে পানি ও বায়ুমণ্ডল। একই সাথে গ্রহ গুলোর অবস্থান হবে নক্ষত্রটির হেভিটেবল জনে যেমন করে আমাদের পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে । এজন্য গবেষকরা অধিকতর শীতল এবং কম ভর যুক্ত নক্ষত্রের সন্ধান করে থাকেন। যাদের আয়ুষ্কাল ২০ থেকে ৭০ বিলিয়ন বছর প্রযন্ত।

KOI 5715.01 গ্রহ

সুল মেকুজ দাবি করেন বাছাইকৃত ২৪ টি এক্সোপলানেট এর মধ্যে একটি KOI 5715.01 গ্রহ। গ্রহটির জীব বিবর্তনের জন্য প্রায় চারটি আদর্শ অনুসরণ করে। এই গ্রহ তার নক্ষত্রের কোল্ডিক জনে অবস্থিত । একটি গ্রহের এই অবস্থান সবচেয়ে উত্তম বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। গ্রহটি বয়স ৫৫০ কোটি বছর যা আমাদের পৃথিবীর চেয়েও ১০০ কোটি বছর বেশি। তাই বিবর্তন কাল অতিক্রম করে গ্রহটি প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য আদর্শ সময় অতিবাহিত করছে।

KOI 5715.01 ভর পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বেশি অধিক ভরের কারনে গ্রহটির মধ্যাকর্ষণ ভর বেশি। গ্রহটি আকারে পৃথিবী থেকে দশ গুণ বড়। এ জন্য এর ভূখণ্ডও বেশি। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পৃথিবীর চেয়ে ৫ গুণ বেশি। কিন্ত আকারে পৃথিবীর থেকে বর হওয়ায় এ তাপমাত্রা সহনশীল হবে। সবমিলে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল জীবন বিকাশের জন্য বেশি উপযোগী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই গ্রহটির দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০০০ হাজার আলোক বর্ষ দুরে।

কেপলার 609 C গ্রহ

কেপলার 609 C গ্রহটির একটি সুপার আর্ট। পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহের বয়স ৩৫০ কোটি বছর। এটি কেবল কেপলার 609 নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই গ্রহটি ও প্রাণীর বসবাসযোগ্য বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। কারণ গ্রহটির অবস্থান এর মাতৃ নক্ষত্রের বসবাসযোগ্য অঞ্চলের ভেতরের প্রান্তের বাহিরে। শক্তিশালী মহাকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে এক্সোপ্লানেট  গুলোর অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রহগুলোর দেওয়া সকল তথ্যই গাণিতিক হিসাব-নিকাশ আর অনুমান নির্ভর। অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তির আরও অধিকতর বিকাশ ঘটলে মানুষ হয়তো আরো নিখুঁত ধারণা পাবে। খুঁজে পাবে পৃথিবীর বাইরে বসবাসযোগ্য অন্য কোন আদর্শ গ্রহের সন্ধান।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।