ক্রিপ্টোকারেন্সি

বিটকয়েন কি হালাল এ বিষয়ে কি বলা হয়েছে ইসলামে

বিটকয়েন হালাল নাকি হারাম! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। যখন একটি বিটকয়েনের মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা এবং প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইলেকট্রিক মুদ্রার চাহিদা তখন এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে বিটকয়েন হালাল না হারাম।

বিটকয়েন হালাল নাকি হারাম

বিটকয়েন কি হারাম ইসলামী বিশ্লেষকরা এরকম কারেন্সি বা মুদ্রা সম্পর্কে কি বলেছেন বা তাদের মতাম কি? বন্ধুরা আজকের পোস্টটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন হালাল নাকি হারাম এবং ধর্মীও মতামত কি বলে। তাহলে চলুন শুরু করি আজকের পোস্টটি,,,,

আজকের পোস্টটের মাধ্যমে আমরা যেসব বিষয় জানতে পারবো

১/ বিটকয়েন কি

২/ বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে

৩/ বিটকয়েন কি হারাম ইসলামী স্কলারদের অভিমত

১/ বিটকয়েন কি

বিটকয়েন হলো একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির মুদ্রা যার মানে হল ইলেকট্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থা এবং এটি গোপন কোডের মাধ্যমে লেনদেন সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। বিটকয়েন ২০০৯ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানতে পারব বিটকয়েন কি এটা কিভাবে কজাকরে। তো বিটকয়েন সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ সহকারে জানতে চাইলে পোস্টটি স্ক্রিপ না করে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে

বিটকয়েন একাউন্টে কারেন্সি সিস্টেমে মূলত ব্লক চেনের মাধ্যমে চালিত হয়। ব্লক চেঞ্জ হলো মূলত কতগুলো ব্লক একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পৃক্ত থাকে। তাই একটি অ্যাকাউন্টে কোন ট্রানজেকশন হলে অন্যগুলোও এই ট্রানজেকশনের সঙ্গে সঙ্গে আপডেট হয়ে যায়। বিটকয়েন ইদানিং বড় বড় সুপার শপ নিয়ে শুরু করে রেস্তোরা বড় বড় হোটেল সকল প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি ভাবে একসেপ্ট করে নিয়েছি।

তাই বর্তমানে এর দ্বারা প্রায় সকল কাজেই করা সম্ভব। তবে বাংলাদেশ সরকার বিটকয়েন কে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি এই কয়েন দ্বারা লেনদেন কারি ব্যক্তির জেল বা জরিমানা উভয় হতে পারে।

বিট কয়েন কি হারাম

ইসলামে স্বর্ণ বা রূপ্যকে মূল মুদ্রার বিপরীতে বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই ইসলামে মুদ্রা ব্যবস্থা বলতে স্বর্ণ কিংবা রূপ্য মুদ্রাকে বুঝিয়ে থাকে। ইসলামের সূচনা থেকে শুরু করে নিয়ে সব খলিফা ও সুলতানদের আমলে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন ছিল সবচেয়ে বেশি।

কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থা আসার আগ পর্যন্ত স্বর্ণের বা রুপার কয়েন ছিল সকল মুসলিমের মুদ্রা। কাগজের মুদ্রার প্রচলন হওয়ার পর থেকে সেটা আর থাকে নি। আর কাগজের মুদ্রা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পেছনে কারণটি হল গ্রাহকের হাতে থাকা কাগজের মুদ্রাটি কেবল মূল স্বর্ণ বা রুপার এভিডেন্স। এর অর্থ হল গ্রাহকের হাতে থাকা কাগজের মুদ্রার বিপরীতে জাতীয় ব্যাংকে স্বর্ণ বা রুপা গচ্ছিত রয়েছে। প্রমাণ হিসেবে গ্রাহক কেবল কাগজের এই নোটগুলো বহন করছে। এজন্যই কাগজের নোটের মধ্যে লেখা থাকে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।

সেই সাথে মূল মুদ্রা দ্বারা যেসব কাজ করা যেত এই কাগজের মুদ্রা দ্বারা সেই সব কাজ করার এক্তিয়ার দিয়ে রেখেছে সরকার। চোর ডাকাত ছিনতাইকারীর হাত থেকে নিজের অর্থ গুলো রক্ষা করার একটি কার্যকারী উপায় হয়ে ওঠে কাগজের মুদ্রা। তাই সকলে এটি গ্রহণ করে নেয়।

যেসব কারণে বিটকয়েন হারাম

১/ আমরা যদি বিটকয়েনের দিকটি লক্ষ্য করি তাহলে দেখব এর বিপরীতে কোন ব্যাংকে কোন ব্যক্তির   স্বর্ণ গচ্ছিত নেই। এটি কেবল একটি ইলেকট্রিক ডিভাইসে প্রদর্শিত কিছু সংখ্যা ও তার দ্বারা লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে মাত্র।

২/ পৃথিবীতে প্রচলিত কাগজের সকল মুদ্রার মূল্য সব সময় একই থাকে। কিন্তু বিটকয়েন তার পুরোপুরি বিপরীত। তার মূল্য প্রতি সেকেন্ডে আপ ডাউন হতে থাকে। এজন্য গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত রয়েছে এমন কোন পন্থাকে বা ব্যবস্থাকে সাপোর্ট করে না।

৩/ বিটকয়েনের জামানত গ্রহণকারী কোন ব্যাংক নেই তাই এই কয়েনটির অপ্রত্যাশিত ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কেউ থাকেনা।

৪/ বিটকয়েন কারা উদ্ভাবন করেছে সেটা এখনো অজানা। মানুষের অর্থ-সম্পদের ঠিকাদার কারা সেটাই যদি জানা না থাকে তবে ধোকা খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর ইসলাম ধোঁকা খাওয়া বা ধোঁকা দেওয়া থেকে দূরে থাকতে বলেছে বা নিষেধ করেছে।

৫/ বিটকয়েন দ্বারা কে কোথা থেকে ট্রানজেকশন করছে সেটা জানা যায় না। তাই এর দ্বারা সহজেই অপরাধ সংঘটিত করা যায়।

৬/ বিটকয়েন দ্বারা ধোকা খাওয়া ও ধোকা দেওয়া সহজ তাই এই কয়েন দ্বারা লেনদেনে ধোকা দেওয়ার দুয়ার খুলে দেয়।

বিটকয়েনের বিষয় ইতিমধ্যে আলোচিত সব কয়টি পয়েন্ট সহ আরো অনেক কারণ রয়েছে যা এই কয়েনটিকে হারাম হওয়ার দাবি করে। তাছাড়া বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশ এটিকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এদিক থেকে বিটকয়েনের লেনদেন অবশ্যই একটি অপরাধ।

ইসলামী স্কলারদের অভিমত বিটকয়েন কে বিশ্বের প্রসিদ্ধ বেশ কয়েকটি দারুল ইত্তা নিষিদ্ধ করেছে মুফতি তাকি উসমানী তাদের মধ্যে মিশর সৌদি আরব ও দারুল উলুম দেওবন্দ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া শায়েখ ইউসুফ আল কারদাবি, শায়খ সালেহ আল ফাওদান ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বিটকয়েন নিয়ে সংখা প্রকাশ করেছেন।

সব মিলিয়ে আমরা দেখতে পাই ইসলামের মুদ্রা ব্যবস্থা ভিত্তি হল হুবহু স্বর্ণ বা রুপার মুদ্রা হওয়া অথবা তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া। কিন্তু বিটকয়েন স্বর্ণ বা রুপার বিপরীত মুদ্রা হতে পারবেনা এবং তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে না তাই এটি বৈধ বা হালাল হতে পারে না। একইভাবে ইসলামের কারেন্সি ব্যবস্থা সকলের কাছে সমানভাবে প্রসিদ্ধ হওয়া বা প্রসিদ্ধ থাকা দরকার। কিন্তু বিটকয়েন এদিক থেকে বিশ্বের সকল দেশের সকল মানুষের কাছে এখনো পরিচিত লাভ করতে পারেনি।

অন্যদিকে এটি দ্বারা লেনদেন করা সবার দ্বারা সম্ভব নয়। কেননা অনেক দেশে বহু মানুষের ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করা ও বিটকয়েন লেনদেনের মতো শিক্ষা নেই। তাই এই কয়েনটি সম্পূর্ণ সবার কাছে সমান তালে ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতায় সমান হতে পারেনি এই জন্যই এই কয়েনটি হারাম। মোট কথা বিটকয়েন হারাম হওয়ার কারণ অনেক সবকটি কারণ ও দিক বিবেচনা করে বিটকয়েন হারাম।

বিটকয়েন ও শেষ কথা

বিটকয়েনের আলোচনা থেকে আমরা জেনে এসেছি যে এই কয়েকটি হারাম। কিন্তু আমাদের বোঝা দরকার এটি আসলে সত্যাগত দিক দিয়ে হারাম নয়। যেমন মদ বা শুয়োরের মাংস বরং এই কয়টি  খাদ্য সত্যাগতভাবে হালাল রয়েছে কিন্তু প্রাসঙ্গিক কারণে হারাম হয়েছে।

যদি কোন সময় এমন হয় যে বিশ্ব ব্যাংক কয়েনটিকে গ্রহণ করে নেয় এবং তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটার ক্ষতিপূরণ বিশ্ব ব্যাংক দিবে এই কথা স্বীকার করে এবং অন্যান্য যে অসংগতি গুলো রয়েছে তা দূর করা হয় তবে সেটা আর হারাম থাকবে না। ইমাম মালিক রাহিমাতুল্লা বলেছেন যে, মানুষ যে জিনিসকেই সম্মিলিতভাবে তাদের মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে নেবে সেটি তাদের মুদ্রা বলে পরিগণিত হবে। তাই সেটা চামড়া হোক না কেন, তার উপর যাকাত ফরজ হবে এবং হজ ওয়াজিব হবে।

এটি থেকে বোঝা যায় যদি মানুষ বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমকে তাদের কারেন্সি হিসেবে গ্রহণ করে নেয় এবং তার জটিলতা দূর করা হয় তবে সেটা হালাল হবে। একই সাথে এর উপর যাকাত ও হজ ফরজ হবে এবং সেটা ঠিকঠাক ভাবেই আদায় করতে হবে। কেননা যদিও ইসলামের স্বর্ণ বা রূপ্য মুদ্রা কে মূল মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মূল মুদ্রা কারো হাতে গচ্ছিত রেখে তার ডকুমেন্ট দ্বারা লেনদেন করা বৈধতা রয়েছে। যেমনটা টাকা যদিও মূলমুদ্রা নয় কিন্তু মূল মুদ্রার ডকুমেন্ট এটার দ্বারা লেনদেন করা হালাল।

সর্বশেষ উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই বিষয়টি বুঝতে পারলাম যে। যদি বিশ্ব ব্যাংক এই মুদ্রাটিকে বা বিটকয়েনকে বিশ্ব অর্থনৈতিক লেনদেনে বৈধতা প্রদান করে এবং এটির দ্বারা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মতি প্রদান করে। তবেই বিটকয়েন কে ইসলামের দিক দিয়ে হালাল বলে গণ্য করা যেতে পারে।

বন্ধুরা আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ইসলাম সম্পর্কে এরকম আরো অজানা বিষয় জানার জন্য আমাদের সাইটে দেওয়া পোস্ট গুলো দেখতে পারেন এবং ইসলাম বিষয়ে অজানা সকল বিষয় জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।