তথ্য ও প্রযুক্তি

সর্বপ্রথম ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে কেন ৮ ঘণ্টা লাগত জানেন কি

ক্যামেরা তৈরির ইতিহাস

ক্যামেরা তৈরির ইতিহাস! আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কোন ছবি তুলতে আমাদের স্টুডিওতে যেতে হতো বা অনেক টাকা খরচ করে আমাদের একটি ক্যামেরা কিনতে হতো।

কিন্তু বর্তমানে এই ছবি তোলা অত্যন্ত সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর স্মার্টফোন আসার পর এই ব্যাপারটিকে আরো সহজ করে দিয়েছে। কেননা আপনি চাইলেই আপনার কোন পছন্দের মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন পৃথিবীতে যখন  প্রথম ক্যামেরাটি আবিষ্কার হয়েছিল তা দিয়ে একটি ছবি তুলতে প্রায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় লাগতো।

আর ক্যামেরা আবিষ্কারের আগে ছিল পেইন্টিং এর প্রচলন। যেখানে কয়েকদিন ধরে একজন ব্যক্তি পোস্ট দিত আর একজন পেইন্টার তার ছবি আঁকতো। ফলে ক্যামেরার আবিষ্কার মানবজাতির ইতিহাসকেই অনেকটা বদলে দিয়েছে। বন্ধুরা আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো camera আবিষ্কারের দীর্ঘ ইতিহাস এবং ক্যামেরার বিভিন্ন ব্যবহারের দিক সম্পর্কে তাই পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরোটি পড়ার অনুরোধ রইল।

ক্যামেরা অফ স্কুরা

পৃথিবীতে কোন কিছুর আবিষ্কার একদিনের সম্ভব হয়নি। তাই একটি আবিষ্কারের পিছনে বহু বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম যুক্ত রয়েছে। ১৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইরাকি বিজ্ঞানী আলহাজেন তিনি একটি নতুন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যার নাম দেন ক্যামেরা অফ স্কুরা।

আলহাজেন লক্ষ্য করেন যদি একটি অন্ধকার ঘরের দেওয়ালে একটি ছিদ্র করে দেওয়া হয় তাহলে সেই ছিদ্র দিয়ে অন্য পাশের ঘরের দেওয়ালে বাইরের কোন জিনিসের ছবি এসে প্রদর্শিত হয়। তখন তিনি এরকম অন্ধকার ঘরের নাম রাখেন ক্যামেরা অফ স্কুরা যার বাংলা অর্থ অন্ধকার ঘর। আর বলা হয়ে থাকে এই ক্যামেরা অফ স্কুরার ধারণা থেকেই বর্তমানের ক্যামেরা তৈরি করা হয়েছে।

এরপর ১৪৫২ সালে মহান বিজ্ঞানী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এই ক্যামেরা অফ স্কুরার ব্যবহার করে পেন্টিং করেন। আর এর পর থেকেই ক্যামেরা অফ স্কুরা পেন্টিং এর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর সাহায্যে যে ব্যক্তি বা বস্তুর পেইন্টিং করা হতো তা একদমই নিখুঁত ছিল।

ফটোগ্রাফির জনক

তবে ক্যামেরা অফ স্কুরার মধ্যে একটি ত্রুটি ছিল এটি হলো এটির মধ্যে যে প্রতিবিম্ব তৈরি হতো তা উল্টো ছিল। এরপর কিছু পেইন্টার এই ক্যামেরা অফ স্কুরাতে কাঁচের টুকরা ব্যবহার করেন এবং ছবিটিকে সোজা করেন।

এরপর ১৮২৬ সালে জোসেস দেখেন সিলভার ক্লোরাইড এর উপর যখন আলো পরে তখন সেটি আস্তে আস্তে কালো হতে শুরু করে। তখন জুসেস ক্যামেরা অফ স্কুরার আকার ছোট করে একটি বাক্সের আকারে নিয়ে আসেন। তিনি এই যন্ত্রটির নাম রাখেন পিনহোল ক্যামেরা।

এবার তিনি সিলভার ক্লোরাইডের একটি মিশ্রণ নিয়ে একটি কাগজে তার প্রলেপ লাগিয়ে দেন। আর সেই কাগজটিকে তিনি একটি পিনহোল ক্যামেরার মধ্যে লাগিয়ে দেন।

এরপর বেশ কয়েক ঘন্টা অবস্থান করার পর তিনি যখন সেই কাগজটিকে বাইরে নিয়ে আসেন তখন তিন লক্ষ করেন বাইরের দৃশ্যের মতো অনুরূপ একটি সাদা কালো ছবি সেই কাগজের মধ্যে তৈরি হয়েছে। আর এভাবেই জোসেস নাইস ফোর। পৃথিবীর প্রথম অটোমেটিক ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। যেখানে ছবি কোন প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করা হতো। আর এ কারণে জোসেফ নাইস ফোরকে ফটোগ্রাফির জনক বলা হয়।

জোসেস নাইস ফোরের ক্যামেরার সমস্যা

তবে জোসেস নাইস ফোরের ক্যামেরায় দুটি সমস্যা ছিল। এই ক্যামেরা দিয়ে একটি ছবি তুলতে প্রায় আট ঘন্টা সময় লাগতো। অর্থাৎ কেউ যদি এই ক্যামেরা দিয়ে একটি ছবি তুলতে চায় তাহলে টানা ৮ ঘণ্টা এই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো।

আরেকটি সমস্যা ছিল এই ক্যামেরা থেকে তুলা ছবি খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেত। যখন ছবির কাগজটিকে বাইরে বের করা হতো তখন তার ওপর সরাসরি আলো পড়তো আর সিলভার ক্লোরাইড এই আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করতো। তখন এই সমস্যা দূর করতে জোসেস নাইস ফোর এবং তার সহযোগী বিজ্ঞানী লুইস দুজনে মিলে একটি উপায় খুঁজে বের করেন।

তারা কাগজে সিলভার ক্লোরাইড এর পরিবর্তে বিটুমিন নামের একটি পদার্থ ব্যবহার করেন। এতে ছবি মিশে যাওয়ার সমস্যা দূর হয় ঠিকই কিন্তু তখনও ছবি তোলার জন্য প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগতো।

আর এ কারণেই আগেরকার দিনে ছবিতে ব্যক্তিরা হাসতো না। কারণ তাদেরকে একাধারে ৮ ঘন্টা ক্যামেরার সামনে বসে থাকতে হতো। এমনকি তারা নড়াচড়া করতে পারত না। তখন দুজন বিজ্ঞানী সিলভার ক্লোরাইডের পরিবর্তে বিটুমিন ব্যবহার করেন। তখন ঐ ছবি তোলার সময় ৮ ঘন্টা থেকে ৩০ মিনিটে দাঁড়ায়।

কোডাক কোম্পানির ইতিহাস

এর পরপরই পিনহল ক্যামেরা ব্যাপক হারে বিক্রি হতে থাকে। তখন একজন সাধারণ মানুষ চাইলেই ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে পারতো। ১৮৮৮ সালে নিউইয়র্কের একজন ব্যবসায়ী জোস ইজ ম্যান একটি ড্রাইভ লেট আবিষ্কার করেন। যার সাহায্যে তিনি একটি মজবুত নেগেটিভ ফটো প্রিন্ট তৈরি করেন।

এরপর সেই ব্যবসায়ী ১৮৯৩ সালে একটি ক্যামেরা কোম্পানি খুলেন নাম ছিল কোডাক ক্যামেরা কোম্পানি। ১৯০০ সালের দিকে এই কোম্পানি তাদের নিজস্ব মডেলের ক্যামেরা মার্কেটে নিয়ে আসে। আর এতে তখন ১৭০ টি ফ্লিম ছিল। আর এটিই ছিল তখনকার সময়ে সবচেয়ে সস্তা ক্যামেরা।

তখন এটির দাম ছিল মাত্র এক ডলার যা বর্তমানে ৩১ ডলারের সমান। যেটা সেই সময়কার যে কোন সাধারণ ব্যক্তি চাইলেই কিনতে পারতো। আর সেই সময় কোডাক কোম্পানির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।ফলে খুব তাড়াতাড়ি কোডাক কোম্পানি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

রঙিন ক্যামেরা

 মার্কেটে যে ক্যামেরাগুলো চলছিল সেগুলো সবগুলোই ছিল ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট।তখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি রঙিন ক্যামেরা বানানোর আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। শেষে ১৯০৭ সালে আগার লুইস ব্রাদার অটো ক্রমের সাহায্যে একটি রঙিন ক্যামেরা বানিয়ে ফেলেন। যেটি দিয়ে রঙিন ছবি তোলা যেত।

এরপর দীর্ঘ সময় পার করে ১৯৪৮ সালে একজন অ্যামেরিকান আবিষ্কারক যার নাম এডউইন ল্যান্ড তিনি সর্বপ্রথম একটি ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। যা দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ছবি তুলে সেটিকে বের করা যেত।

 ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কারের ইতিহাস

১৯৭৫ সালে কোডাক কোম্পানিতে কাজ করা একজন ইঞ্জিনিয়ার হলেন স্টিভেন আসোন্স। তিনি পৃথিবীতে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। যে ক্যামেরায় কোন রিল বা ফিল্ম লাগানো হতো না।

এই ডিজিটাল ক্যামেরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কোন ব্যক্তি বা বস্তুর ছবি তুলে সেটিকে একটি মেমোরি কার্ডের মধ্যে সেভ করতে পারতো। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ডিজিটাল ক্যামেরাকে আরো আপগ্রেড করে তৈরি করা হয়। এরপর স্যামসাং কোম্পানি ২০০০ সালে ক্যামেরা মোবাইল প্রথমবারের মতো লঞ্চ করে। আর এর সঙ্গেই প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোনের সঙ্গে ক্যামেরার ব্যবহার শুরু হয়।

বন্ধুরা ক্যামেরা আবিষ্কারের ইতিহাস নিয়ে আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। এরকমই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক নিত্য নতুন পোস্ট পেতে চাইলে আমাদের সাইটের সঙ্গেই থাকুন।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।