তথ্য ও প্রযুক্তি

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আসল রহস্য ফাঁস

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য কি

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য কি! একটি ত্রিভুজের মধ্যে এমন কি রহস্য আছে যার ভিতরে বড় ছোট সব ধরনের জাহাজ বা বিমান গায়েব হয়ে যায়। কি এমন আছে যার উপর দিয়ে গেলে দিক নির্দেশনার কম্পাস অকেজো হয়ে যায়। বিষয়টা কি লজিকাল নাকি ভৌতিক। আসলে আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি তা হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল।

এটি পৃথিবীর অন্যতম রহস্য যার সমাধান এখনো কেউ করতে পারেনি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে এমনই কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য জানাবো আজকের  এই পোস্টটির মাধ্যমে। যারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য সম্পর্কে জানতে চান আশা করি তাদের জন্য আজকের পোস্টটি হতে পারে অত্যান্ত আকর্ষণীয়। তাহলে চলুন শুরু করি।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কিন্তু সাধারন একটা নাম নায়। এর নামের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা আছে এমন কিছু রহস্য যা কখনো সমাধান করা যায়নি। যা পুরো পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামটি থেকে বুঝতে পারছেন যে দুটি শব্দ বারমুডা এবং ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে নিয়ে শব্দটি গঠিত।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কিভাবে এই নামকরণ করা হলো

বারমুডা হল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি  ৫৩.২ কিলোমিটার বর্গীয় ব্রিটিশ দ্বীপ অঞ্চল। দ্বীপটির আশেপাশের এলাকায় এরকম অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। আপনি যদি বারমুডার আশেপাশের যেসব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে তার একটি কাল্পনিক রূপ দেন তাহলে সম্পূর্ণ ক্ষেত্রটির ত্রিকণাকার বা ত্রিভুজ আকৃতির হবে।

তাই সঙ্গত কারণে জায়গাটির নাম রাখা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। আমি এতক্ষণ ধরে বললাম যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে ঘিরে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এরকম কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার কথা।

ঘটনার নাম্বার ১

এলেন অস্টিন ২১০ ফুট লম্বা জাহাজটি লন্ডন এবং নিউইয়র্কের মধ্যেই যাতায়াত করতে থাকতো।  আর তার যাত্রাপদ ছিল উত্তর আটলান্টিক সাগর আর বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মাঝামাঝি। ১৮৮১ সালে লন্ডনে এক যাত্রার সময় অন্য এক অজ্ঞাত জাহাজের সঙ্গে এলেনের দেখা হয়। জাহাজটি উদ্দেশ্যহীন ভাবে এলোমেলো হয়ে ভাসছিল।

কিন্তু সবচেয়ে আজব বিষয় হচ্ছে জাহাজটির ভেতরে কোন মানুষ ছিল না। তাহলে ভেবে দেখুন তো জাহাজটি চালক ছাড়া কিভাবে চলছিল। এলেন অস্টিনের ক্যাপ্টেন জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য একজন  ক্রকে পাঠায়। তিনি যখন জাহাজের ভেতরে যান তখন তিন এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে জাহাজের ভিতরে কেউ নেই। এমনকি জাহাজটিতে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিল না। জানা যায় জাহাজের ভিতরে যাত্রীদের নির্দিষ্ট মালামাল আবার সুরক্ষিত ছিল। অথচ অদ্ভুদ এই জাহাজটির নেমপ্লেট খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাহাজটিতে মেহেগুনির কাঠ বোঝাই একটি কার্গো ছিল।

এলিন অস্টিনের ক্যাপ্টেন একজন ক্রুকে জাহাজটিকে গাইড করে নিউইয়র্কের দিকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর দুইদিন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন ঝড় উঠে আর দুটি জাহাজ একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনেকদিন পর যখন জাহাজটিকে খুঁজে পাওয়া যায় তখন দেখা যায় জাহাজটি অক্ষুন্ন আছে। ঠিক আগের মতই। কিন্তু এলেন অস্টিনে পাঠানো সম্পূর্ণ ক্র গায়েব। আর জাহাজের ভিতর জিনিসপত্র সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আছে।

ঘটনার নাম্বার ২

 এর পরের ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে। পাঁচটি বোমা নিক্ষিপ্ত টরপেটো বিমান এক সাথে হারিয়ে যায়। ফ্লোরিডা থেকে বিমানগুলো  যাত্রা শুরুর আগে নিশ্চিত ছিল যে অন্যান্য সব দিনের মত এবারও তাদের তিন ঘণ্টার মহড়া শেষ করে তারা আবার নিশ্চিতভাবে ফিরে আসবে। রেপ্লিকা বোমাগুলো ফেলে দেওয়ার পর যখন পাইলট তার বিমান বহর নিয়ে ফিরে আসবেন ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি। এমনও না যে সেদিন খারাপ আবহাওয়া ছিল। দিনটি ছিল খুবই শান্ত এবং রুদ্র উজ্জ্বল। এবং বিমানের পাইলটরা ছিল খুবই অভিজ্ঞ।

তাই পাইলটদের পক্ষ থেকে ভুল হওয়া নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন উঠাইনি। পাইলটের পক্ষ থেকে শেষ রেডিও বার্তা আসে সন্ধ্যা সাতটা চার মিনিটে। তখন পাইলট জানায় তাদের কম্পাস ঠিকমতো কাজ করছে না। তারা ভুল দিকে উড়ছে। ঠিক তার পরপরি পাঁচটি বিমান একসঙ্গে বারমুন্ডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। যখন বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে ফ্লাইট ১৯ হারিয়ে গেছে। তখন সেই ফ্লাইটকে খুঁজতে ১৩ পাইলটের সঙ্গে আরও একটি ফ্লাইট পাঠানো হয়। কিন্তু আগের মতোই এই ফ্লাইটও অদৃশ্য হয়ে যায়।

ঘটনার নাম্বার ৩

 যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ এই অভিশপ্ত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে নৌবাহিনীর জ্বালানি জাহাজ লু এস এস সাইপ্লস নিখোঁজ হয়ে যায়। বিশাল জাহাজটি প্রায় ৩০৯ জন ক্র সদস্য সহ ১০৮০০ টন ম্যাঙ্গানিজ আক্রিক নিয়ে বারমুডা হয়ে ব্রাজিল থেকে বালতি মরে যাত্রা শুরু করেছিল।

জাহাজটি থেকে মাত্র একটি বার্তা আসে আর যে বার্তায় কোন সমস্যার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুঁজি পরও কোন কিছুর কোন নিশানা পাওয়া যায়নি। ৩০৯ জন মানুষের দেহের কোন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। নৌ অনুসন্ধানকারীরা একটি নির্দিষ্ট কারণও খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে কিছু তত্ত

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে এতক্ষণ যে কাহিনীগুলো বললাম সেগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে । কিন্তু এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করা আসলেই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এগুলো আজ থেকে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার বছর আগের গল্প। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ঘটনার পেছনের কারণ কি তা নিয়ে অনেক তত্ত তৈরি করা হয়েছে।

কিছু লোক এলিয়েনদের দোষ দিয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে এলিয়েনরা এসেই এই জাহাজগুলো নিয়ে গেছে। কিছু লোক আসলে সমুদ্রের নিচে থাকা সামুদ্রিক দানগুলোকে বিশ্বাস করে। তবে এই সমস্ত কিছুই কিন্তু খুবই অযৌক্তিক এবং শিশুসুলভ শুনায়।

কিছু নতুন তথ্য অনুসারে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপরের মেঘগুলো এয়ার বোমার মত। যা জাহাজ এবং বিমান ধ্বংসের কারণ। অদ্ভুত স্বরভুজ আকৃতির মেঘগুলো রাডার স্যাটেলাইট ইমিজুয়েলি ব্যবহার করে আবিষ্কৃত হয়েছিল। যেগুলো ২০ থেকে ৫০ মাইল প্রজন্ত প্রশস্ত ছিল। এই স্বরভুজ মেঘগুলো প্রথম শনি গ্রহের উপর দেখা গিয়েছিল। এছাড়াযও এই সামুদ্রিক এলাকার নিচে ছোট বড় অনেক পাহাড় রয়েছে। যেগুলো জাহাজ ধ্বংসের কারণ হতে পারে। যদিও এগুলো আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক তত্ত্ব তারপরও এখন পর্যন্ত কোন জাহাজ বা বিমানের একটি অংশও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

 আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে আমি অনেককেই বলতে শুনেছি সুযোগ পেলেই তারা নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এক্সপ্লোর করতে যেতে চায় । আপনাদের যদি সুযোগ দেওয়া হয় আপনারা কি যাবেন এমন এক জায়গায় যেখানে আপনার জীবন নিয়ে ফিরে আসার অনিশ্চয়তা রয়েছে। ভাবতে থাকুন। আবার ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে ততদিনে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং সঙ্গে থাকুন All Info 360 র।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।