খেলাধুলা

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাদের বোলিং লাইনআপ শক্তিশালী ছিল

ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ সেরা বোলিং লাইনআপ! একটি জরিপ করলে দেখা যায় সর্বশেষ তিনটি  বিশ্বকাপ আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে থেকেই কেউ না কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ সেরা বোলিং লাইনআপ

২০১১ বিশ্বকাপ  হোস্ট করেছিল যৌথভাবে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা আর সেই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ২০১৫ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল  অস্ট্রেলিয়া এবং সর্বশেষ ২০১৯  বিশ্বকাপে নিজেদের ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে হোস্ট কান্ট্রি গুলোই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি অ্যাডভান্টেজ পেয়ে থাকে। আর ২০২৩ বিশ্বকাপের আয়োজক যেহেতু ভারত সে হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোই এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। তবে অন্যান্য দলগুলোও খালি হাতে বসে থাকবে না নিশ্চয়ই। কেননা সাপ কন্টিনেন্টাল হিসেবে দলগুলোকে ছোট করার সুযোগ নেই।

আইপিএলের ফলশ্রুতিতে এখন সব দেশে প্লেয়ার রাই ভারতের কন্ডিশন, ভেন্যু এমনকি উইকেট সম্পর্কে সব ধরনের ধারণা রাখে। তাই সেসব বাদ দিলে বিশ্বকাপের ভালো করার মূলমন্ত্র স্ট্রং ব্যাটিং এর পাশাপাশি দরকার শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাক। তাই আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা মূলত বিশ্বকাপের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপ নিয়ে আলোচনা করব। আসন্ন ২০২৩ বিশ্বকাপে কোন দলের বোলিং এটাক সবচেয়ে সেরা চলুন জেনে নেই বাকি আলোচনা থেকে।

ভারত

ভারতকে নিয়েই প্রথমে শুরু করা যাক। রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বে ঘরের মাঠে সবচেয়ে সেরা সুযোগ থাকবে ভারতের। ভারতের শক্তি-মোক্তার দিক দিয়ে ব্যাটিং লাইন আপের পাশাপাশি বোলিং অ্যাটাকও দুর্দান্ত। আর বিশেষ করে ঘরের মাঠে বলাররা তো আরো বেশি শক্তিশালী। সর্বশেষ দুইটি বড় আসোর মিস করা পেজ ইউনিটের সেরা নাম ভুমরাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও আইপিএল মিস করানো হয়েছে শুধুমাত্র বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য। তবে এতদিন বিশ্রামে থাকার পর কতটা স্ট্রং কাম ব্যাক করতে পারে সেটাই ভাবার বিষয়। তাই ভুমরার ওপর খুব একটা আশা করা ঠিক হবে না।

তবে দলটির পেজ ইউনিটের সবচেয়ে সেরা দুই অস্ত্র মোহাম্মদ সামি ও মোহাম্মদ সিরাজ ফর্মে থাকা দুইজন ২০২৩ সালের সেরা উইকেটটেকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও পান্ডিয়া ভুবনেশ্বর কুমার মালিকদের নিয়ে শক্তিশালী বোলিং  অ্যাটাক ভারতের। বিশ্বকাপ যেহেতু এশিয়ায় তাই স্পিনাররাও দারুন ভূমিকা রাখবে এই হিসেবে জাদেজা চাহাল কিংবা কুলদীপরাও প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক তৈরি করবে। ভারতের এই বোলিং এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে রেটিংকরলে ১০ এর মধ্যে ৮.৫ আর হোমগ্রাউন্ডের রেটিং করলে ১০ এর  মধ্যে ১০ই দেওয়া যায়।

ইংল্যান্ড

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটি বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে ফেভারিট হিসেবে থাকে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দুর্দান্ত ব্যালেন্স ও পারফেক্ট টীম ইংল্যান্ড। তার উপর ২০১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ও ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।পরপর দুটি বিশ্বকাপ জিতে ২০২৩ বিশ্বকাপে কনফিডেন্স লেভেল সেই পর্যায়ে রয়েছে। ইংল্যান্ডের যেমন আছে ব্যাটিং লাইনআপ তেমন রয়েছে এটাকিং বোলিং লাইন অফ। যদি পেজ ইউনিটের কথা বলা হয় তাহলে স্পেশালি মারকুড ও জোবরা আরচার এর কথা বলতে হয়। দুইজনে মিনিমাম ১৫০ প্লাস গতিতে বল করে থাকে।

যদিও দুর্ভাগ্যবশত এই মুহূর্তে দুজনেই ইনজুট। তবে আশা করা যায় বিশ্বকাপের আগেই তারা দুজনেই ফিট হয়ে যাবে। খেলাটা যেহেতু ইন্ডিয়ায় তাই স্বাভাবিক ভাবেই একটু স্লো উইকেট হবে। সে ক্ষেত্রে বলা যায় স্পিনাররাও দারুন ভূমিকা রাখবে। ইংল্যান্ডের কাছে রয়েছে দুই অভিজ্ঞ স্পিনার আদিল রশিদ ও মঈন আলী। তাই বলা যায় মারকুড ও জোবরা আরচার ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসলে ইংল্যান্ডের বোলিং অ্যাটাক হবে দুর্দান্ত। তাই তাদেরকে রেটিং দেওয়া যায় ১০ এর  মধ্যে ৮।

নিউজিল্যান্ড

এই একটি মাত্র দল যারা সব সময় ভালো খেলেও শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়। আইসিসির সবচেয়ে বড় বড় ইভেনগুলোতে বেশি সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে হোঁচট খাওয়া আনলাকি একমাত্র দল নিউজিল্যান্ড। তবে দলটির আসল শক্তিমত্তার দিক ছিল দলটির ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন। যার ক্যাপ্টেন্সি ও ব্যাটিং এ ভর করে দলটি সবসময় ভালো খেলে থাকে। তবে এবার আর সেটি হচ্ছে না কারণ আইপিএল চলাকালীন ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে সিটকে পরেন তিনি। দলটির বোলিং ইউনিট সব সময় বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ। টিম সাউদির সঙ্গে রয়েছে ট্রেনবোল্ট।

গতি আর সুইম দিয়ে যারা ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে থাকেন। ট্রেনবোল্টের সঙ্গে বোর্ডের ঝামেলায় বিশ্বকাপ ভাগ্য এখনো ঝুলে রয়েছে। তবে বোল্টকে ছাড়াও রয়েছে লুকি ফারগুছন অ্যাডাম মিল্কের মত গতিময় বলার। আর স্পিনারদের মধ্যে রয়েছে মিসেল সাটনার, মাইকেল ব্রেস ওয়েল এর মত বলার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ক্যান উইলিয়ামসনের অভাবে পূরণ করতে পারবে না দলটি। তাই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের জন্য রেটিং থাকবে ৭.৫।

অস্ট্রেলিয়া

ইয়োলো আর্মিরা বিশ্বকাপে  সব সময়  চমক দেখিয়ে থাকে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল এই দলটি এবারও থাকবে ফেভারিটদের কাতারে। আর দলটির বোলিং এটাকের কথা বলতে গেলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও গতি সম্পন্ন আর আতঙ্কিত বলার রয়েছে দলটিতে। মিশেল স্টার্ক, প্যাড কামিঞ্ছ ও জসহাসলিউট। নতুন বলে তারা কতটা ভয়ংকর তা সকলেরই জানা। স্পেশালি মিসেল স্টার্ক এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপের কথা। যেখানে ২০১৫ এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের সেরা উইকেট টেকার বোলার ছিলেন বা হাতি এই স্পিড গান খাটো খ্যাত বলার।  মিসেল স্টার্ক একদিকে যেমন তার ১৫০ প্লাস গতি তেমন রয়েছে ভয়ংকর ইয়োকার আর রয়েছে লো সুইম ডেলিভারি।

এছারা দলটিতে ফার্স্ট বলারদের পাশাপাশি স্পিনাররাও রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। অ্যাডাম জাম্পার লেক স্পিন এর সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের ঘূর্ণি। তবে তাদের অভিজ্ঞতার দিক যদি বিবেচনা করা হয় তবে মিসেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জজ হাসলিউট, প্যাট কামিঞ্ছ কিংবা ম্যাক্সওয়েলদের নিয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বলিং এটাক হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার। যা অন্য কোন দলের বোলারদের এত বেশি এক্সপেরিয়েন্স নেই। তাই এই দলের বোলারদের সক্ষমতার জন্য রেটিং দেওয়া যায় ১০ এর মধ্যে ৯.৫।

পাকিস্তান

এই দলটাকে শুরু থেকেই সবাই জানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বোলিং এটাকের দল হিসেবে সেই সময়ের ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আক্তার থেকে শুরু করে উমারগুল কিংবা মোহাম্মদ আমির যাদের বোলিং তান্ডবে ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম হতো। আর সেই ধারাবাহিগতায় এখনো যেন সেই আগের রেশ ধরে আছে এশিয়ার শক্তিশালী এই দলটি। তবে আগে শুধু বোলিং অ্যাটাক এর জন্য সেরা মনে করলেও এখন সব বিভাগেই একটা ব্যালেন্স টিম পাকিস্তান। আর তাদের বোলিংয়ের সামর্থ্য নিয়ে নিশ্চয়ই কারো কোন দ্বিধা নেই। দলটির বোলিং এর প্রধান অস্ত্র বাহাতি স্পেশালিস্ট শাহিনসা আফ্রিদি তার পাশাপাশি সঙ্গ দিবেন নাসিম শাহ।

লেফট রাইট দারুণ কম্বিনেশনে অ্যাটাক করবে শুরু থেকেই। অন্যদিকে হারিস রফ মোঃ ওয়াসিম জুনিয়রের সাথে এসিনুল্লার মতো পেসের অ্যাটাক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা অনুমান করার বাইরে। আর স্পিন অ্যাটাকে থাকবে সাদাফ খান। যার বোলিং এশিয়ার উইকেট গুলোতে কতটা ভয়ংকর তা সবাই জানে। পাশাপাশি মুহাম্মদ নাওয়াত ও অন্যান্য স্পিনাররা তো থাকছেনই। তবে এত কিছুর পরেও তাদের বোলিং লাইনআপে অভিজ্ঞতা খুবই কম। তাই দলটির জন্য রেটিং থাকবে ১০ এর মধ্যে ৯।

বাংলাদেশ

দুর্দান্ত দল নিয়ে এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে যাবে বাংলাদেশ। যেখানে এই বিশ্বকাপকেই সেরা সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতে চায় দলটি। আর খেলাটা যেহেতু ভারতের মাটিতে তাই বলা যায় এটাই হতে পারে সেরা সুযোগ। অভিজ্ঞগোতার বিচারে গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার একটু কমতি হলেও তরুণ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে দারুন কম্বিনেশনে আছে দলটি। তবে আশার আলো হচ্ছে এই যে, তরুণরাও এখন দায়িত্ব নিতে শুরু করেছে। এক সাকিবের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতায় ছাপিয়ে যায় সবকিছু। বোলিং এর কথা যদি বলতে হয় তাহলে পেজ আক্রমণে থাকবে তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরিফুল, হাসান ও ইবাদতরা যাদের সাম্প্রতিক ফরম বিবেচনায় অসাধারণ।

পেস ইউনিটের খুব একটা অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই পেজ অ্যাটাকটাই বাংলাদেশের সেরা আক্রমণ হবে। আর স্পিনারদের কথা বলতে গেলে একদিকে অভিজ্ঞ সাকিব অন্যদিকে মেহেদী মিরাজের দুর্দান্ত অফ স্প্রিং যা এশিয়ার মাটিতে ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো ভোগাবে। একমাত্র সাকিব ছাড়া অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশের রেটিং থাকবে ১০ এর মধ্যে ৭।

আসন্ন বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ছয় দলের বোলিং লাইনাপ অনুযায়ী সেরাদের রেসে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ডরা সবচেয়ে এগিয়ে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান ও কোয়ালিফাই করা দলগুলোকে অবশ্যই ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রটিয়াদের হাতে রয়েছে যেমন দারুন পেজ ইউনিট তেমন আফগানদের হাতে রয়েছে বিশ্বসেরা স্পিন অ্যাটাক। আর কোয়ালিফাই করলে শ্রীলঙ্কাও হবে দুর্দান্ত বোলিং অ্যাটাকের কারিশমা। কারণ বিশ্বকাপজয়ী এই দলটির কাছে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ক্লাস বোলার। তাই বিশ্বকাপে সেই আসল রহস্য দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।

বন্ধুরা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সেরা বোলিং লাইনআপ নিয়ে আমাদের এই পোস্টটি আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের সাইট ভিজিট করুন এবং কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার অজানা বিষয় ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।