খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়ন লিগে কতটি দল অংশগ্রহণ করে

চ্যাম্পিয়ন লিগে কতটি দল অংশগ্রহণ করে

চ্যাম্পিয়ন লিগে কতটি দল অংশগ্রহণ করে! ৫৫ টি দেশের ৫৪টি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অংশগ্রহণ করে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। শেষ পর্যন্ত খেলার সুযোগ পায় ৩২ টি ক্লাব। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাই প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। রেংকিং এর শীর্ষ চার অ্যাসোসিয়েশন থেকে সর্বাধিক চারটি ক্লাব সরাসরি খেলে এই আসরের চূড়ান্ত পর্বে। চলুন জেনে নেই কিভাবে কতটি ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একে অপরের লড়াই করে।

৩২ টি ক্লাব নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মূল আসর শুরু হলেও সেখানে ২৬ টি ক্লাব সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাকি ছয়টি স্পটের জন্য বাছাই পর্ব খেলতে হয় অ্যাসোসিয়েশনগুলোর চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ আর তৃতীয় স্থান অধিকারী ৫৫ টি ক্লাবকে।

যেখানে ৪৪টি লিক চ্যাম্পিয়ন এর মধ্য থেকে ৪টি আর ১১ টি রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ক্লাব থেকে ২টি দল সুযোগ পায় মূল পর্বে। এই ৫৫ টি দলের লড়াই শুরু হয় মৌসুমের শুরুতে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে অফের মাধ্যমে। পিলিমিনারি রাউন্ডে ফিফা রেংকিংয়ে ৫২ থেকে ৫৫ নাম্বারে থাকা ৪ টি দেশর লিক চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি হয়। যেখান থেকে শেষ পর্যন্ত ১টি দল জায়গা করে নেয় প্রথম বাছাই পর্বে। প্রথম বাছাই পর্বে এই ক্লাব যোগ দেয় আরো ২৯ টি লিগ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে।

 আগেই জানিয়েছি ৫৫ টি দেশের ৫৪ টি অ্যাসোসিয়েশন এই লীগে অংশগ্রহণ করে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে অন্য একটি এসোসিয়েশন কোথায়। যে দেশ থেকে কোন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কখনো অংশগ্রহণ করতে পারে না সেটি হল লিক টেন্স টাইন। ফিফা রেংকিং এ ১৯৯ তম দল হিসেবে লিক টেন্স টাইম আছে উয়েফা রেংকিংও।

নিয়মিত অংশ নেয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন শিপ, নেশন লীগ সহ ইউরোপের বিভিন্ন জাতীয় টুর্নামেন্টে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কখনোই খেলা হয় না তাদের ক্লাবের। কারণ ইউরোপের সবচেয়ে ছোট এই দেশের নেই নিজস্ব কোন ঘরোয়া লিগ। দেশটিতে ক্লাব আছে মাত্র ৮টি তাও সে সমস্ত ক্লাবগুলো খেলে সুইস লিগে। তাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা থেকে যায় দর্শকের ভূমিকায়।

২০২১ সাল থেকে আরও একটি অ্যাসোসিয়েশন বাইরে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের। ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা ও ওয়েফা। ফলে তাদের দেশ থেকে কোন ক্লাব গেল ২ আসর সহ এবারও অংশ নিতে পারছে না চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।

প্রথম বাছাই পর্বের ঐ ক্লাবের সাথে যোগ হয়  রেংকিংয়ে ২২ থেকে ৫০ নাম্বারে থাকা অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ২৯ টি চ্যাম্পিয়ন দল। প্রথম বাছাই পড়বে এই ৩০ টি ক্লাবের মধ্যে হেড টু হেডে বাদ পড়ে যায় ১৫ টি ক্লাব। দ্বিতীয় বাছাই পর্ব হয় ২৪ টি ক্লাব নিয়ে। এখানে ঐ১৫ টি ক্লাবের সাথে সরাসরি যোগ দেয় ১৭ থেকে ২১ নাম্বারে থাকা পাঁচ দেশের লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাব। যেখানে হেট টু হেড লড়াইয়ের মাধ্যমে পরের পর্বে যাবে দশটি ক্লাব। এই পর্ব থেকে শুরু হয় ঘরোয়া লিগ চ্যাম্পিয়ন বাদে বাকি ক্লাবগুলোর জায়গা করে নেবার লড়াই।

এখানে সামিল হয় রেংকিংয়ে ১০ থেকে ১৫ নাম্বারে থাকা অ্যাসোসিয়েশনগুলোর রানার্সআপ ক্লাবগুলো। তবে তাদের লড়াইটা ভিন্ন। বাছাই পর্বে কোন লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাব রানার্সআপ বা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ক্লাবের সাথে খেলে না। রানার্সআপ ৬টি ক্লাব আলাদাভাবে লড়াই করে নিজেদের মধ্যে।

যেখান থেকে তৃতীয় বাছাই পর্বে  জায়গা করে নেয় ৩টি বিজয়ী ক্লাব। তৃতীয় বাছাই পর্বের লড়াই হয় ২০টি ক্লাবের মধ্যে। দ্বিতীয় বাছাই পর্ব থেকে উঠে আসা ১০ চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের সাথে যোগ দেয় র‍্যাংকিংয়ে ১৫ ও ১৬ নাম্বারে থাকা ২ অ্যাসোসিয়েশনের লিখ চ্যাম্পিয়ন। এই ১২ ক্লাব থেকে ৬ ক্লাব যাবে পরের পর্বে।

এই রাউন্ডে রানার্সআপ ক্লাবের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় তৃতীয় স্থান অধিকারী ক্লাবগুলোর। ৭,৮,৯ নাম্বার অ্যাসোসিয়েশনের রানার্স এবং ৫ ও ৬ নাম্বার অ্যাসোসিয়েশনের তৃতীয় স্থান পাওয়া ক্লাব যোগ দেয়। লড়াইয়ে এই ৫ক্লাব যোগ দেয় আগের পর্বে উঠে আসা ৩ রানার্সআপ ক্লাবের সঙ্গে। ৮টি ক্লাব থেকে পরের পর্বে উঠে ৪টি ক্লাব।

সবশেষ প্লে অফ। এখানে অংশ নেয় মোট ১২ টি ক্লাব। যেখানে চ্যাম্পিয়নদের বিভাগে আগের পর্বের ৬ বিজয়ী ক্লাবের সঙ্গে যোগ দেয় ১১ ও ১২ নাম্বার অ্যাসোসিয়েশনের ২ লীগ চ্যাম্পিয়ন। এই ৮টি চ্যাম্পিয়ন ক্লাব থেকে ৪টি বিজয়ী ক্লাব জায়গা করে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মূল পর্বে। আর রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ৪টি ক্লাব লড়াই করে একে অপরের সঙ্গে। যেখান থেকে ২টি ক্লাব চূড়ান্ত পর্বে ওঠে।

এটা গেল বাছাই পর্বের সমীকরণ। ৫৫টি  ক্লাবের কঠিন বাছাই পর্ব শেষ করার পর ৬টি ক্লাব জায়গা করে নেয় মূল পর্বে। লীগে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় ২৬ টি ক্লাব। এই ২৬ টি ক্লাব নির্ধারিত হয় তাদের লীগের পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে।

প্রথমেই আসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান শিরোপাধারীর জায়গা। এর সাথে যোগ দেয় ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন। এরপর আসে ১ থেকে ১০ নম্বরে থাকা অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ১০ লীগ চ্যাম্পিয়ন। এর সাথে ১থেকে ৬ নাম্বারে থাকা অ্যাসোসিয়েশনের ৬ রানারআপ ক্লাবও সরাসরি খেলার সুযোগ পায় মূল আসরে।

সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় শীর্ষ ৪ র‍্যাংগধারী অ্যাসোসিয়েশন। এখান থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকারকারী ৪টি করে ক্লাব মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায়। ফলে এই চার স্থান ধরে রাখতে ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে চলে লড়াই। এখানেই বাছাই পর্বের প্রক্রিয়া শেষ নয়। প্রতি আসরে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়ন সরাসরি খেলে মূল পর্বে তাহলে একই বছর যদি তারা নিজেদের লীগের সেরা চারে থাকেন সেক্ষেত্রে সমীকরণ টাকি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরপাধারি ক্লাব যদি লীগের মাধ্যমেও কোয়ালিফাই করে তাহলে সুযোগ বাড়বে ১১ তম অ্যাসোসিয়েশন লিগ চ্যাম্পিয়নদের। তারা প্লে অফে না খেলে সরাসরি খেলবে মূল পড়বে। একইভাবে ১১ তম অ্যাসোসিয়েশনের জায়গা পূরণ করতে তৃতীয় বাছাই পর্ব থেকে প্লে অফ হয়ে উঠে আসবে ১৩ তম অ্যাসোসিয়েশনের লীগ চ্যাম্পিয়ন। এভাবেই এক ধাপ করে উপরে উঠে আসবে আগের পর্বের একটি করে ক্লাব।

একই নিয়ম ইউরোপিয়া চ্যাম্পিয়ন লিগের খেলাতেও। কিন্তু এখানে সুবিধা পায় রানার্সআপ ক্লাবগুলি। একই ক্লাব যদি ইউরোপিয়ার পাশাপাশি ঘরোয়া লিগগুলোর মাধ্যমে মূল পর্বে উত্তীর্ণ হয়। তাহলে সুযোগ পাবে পঞ্চম অ্যাসোসিয়েশনের তৃতীয় স্থান অধিকারী ক্লাব। তারা সরাসরি চলে যাবে গ্রুপ পর্বে এবং পদোন্নতি বাড়বে আগের পর্বের একটি করে রানার্সআপ ক্লাবের।

এখন শেষ প্রশ্ন উঠতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কি একই অ্যাসোসিয়েশন থেকে ৫টি ক্লাব খেলতে পারে। হ্যাঁ পারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ইউরোপা লিগের শিরোপাধারী যদি একই অ্যাসোসিয়েশনের হয় এবং তারা যদি পরবর্তী মৌসুমে নিজেদের ঘরোয়া লীগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চারের বাইরে থেকে লিক শেষ করে তাহলে দুই শিরোপাধারিদের সাথে শীর্ষ ৩টি ক্লাব খেলবে মূল পর্বে আর চতুর্থ ক্লাবকে তখন নেমে যেতে হবে ইউরোপা লিগে।

বন্ধুরা ২০২৩-২৪ চ্যাম্পিয়নস লিগের ৩২ টি দলের ম্যাচ, ভ্যেনু, সিডিউল ও অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।