রাজনীতি

দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কিভাবে বিশ্ব অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জীবনী

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জীবনী! মানবতা বিরোধী অপরাধে ডন্দিত জামায়েত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা যান।

২০১৩ সালে মিস্টার সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদন্ডে দণ্ডিত করার পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জেলখানায় অবরুদ্ধ ছিলেন। আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানবো কিভাবে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার শৈশব ও কৈশোর কিভাবে পার করেছেন।

আর তিনি কি আসলেই যুদ্ধ অপরাধীর ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে। আপনি যদি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সম্পর্কে এসব বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরোটি পড়ার অনুরোধ রইল।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পরিচিতি

সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ২০১০ সালে গ্রেফতারের পর থেকেই কারাগারে ছিলেন। জামায়েতে ইসলামীর হয়ে দুইবার সংসদ সদস্য নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে এর আগে থেকেই ধর্মীয় বক্তা হিসেবে তার বেশ পরিচিতি ছিল। জিয়া নগরের সাইথ খালি গ্রাম আগে পরিচিত ছিল সাউথখালী নামে।

এখনো অনেকেই সেই আগের নামেই চিনে থাকেন। তবে সেই সাউথখালী নামের বিকাশ ঘটেছে এই গ্রামেরই একজন বিখ্যাত এবং বিতর্কিত মানুষ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ঘিরে। এই গ্রামেই ১৯৪০ সালে জন্ম নেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঠিক কি ঘটেছিল তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বিতর্ক চলছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ঘিরে। যিনি ধর্মীয় জলসার জনপ্রিয় বক্তা থেকে পরিণত হয়েছিলেন জামাত ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায়।

সাঈদী উপাধী কিভাবে পেলেন

 ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় অবশ্য নিজ গ্রামের খুবই অল্প সংখ্যক মানুষেই তাকে চিনতেন।  জন্মের পর তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন দেলোয়ার শিকদার নামে।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের যে ওয়ার্ডটির অধীনে সাইথ খালি গ্রাম সেই ওয়ার্ডের একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এই তথ্যটি জানিয়েছিলেন। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পরিবার থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে সিকদার কখনো তার পারিবারিক উপাধি ছিল না। তার ছেলে মাসুদ সাঈদী তখন বলেছিলেন সাঈদী তাদের পরিবারের উপাধি।

স্থানীয় সাংবাদিক নাসির উদ্দিন তখন বলেছিলেন সাউথখালী গ্রামকে এখন সাইথখালি বলা হচ্ছে সাইদির নামের সঙ্গে মিলিয়ে। বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেছেন, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বাবা ছিলেন গ্রামের অত্যন্ত সাধারণ একজন ব্যক্তি। তিনি বলেছেন মিস্টার সাঈদী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদিও অনেক তবে তত বেশি নামকরা পরিবার তারা ছিল না। উনার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। গ্রামে কিছু জমি জায়গা ছিল।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পড়াশোনা

পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া জীবন বৃত্তান্ত অনুযায়ী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পড়াশোনা করেছেন গ্রামের একটি মক্তব্যে। এরপর শশীরার পীর নামে পরিচিত একটি আলিয়া মাদ্রাসায়, বারুইপাড়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা এবং খুলনা  আলিয়া মাদ্রাসায়।

স্থানীয় সাংবাদিক নাসির উদ্দিন জানান পড়াশোনা শেষে তিনি গ্রামের কাছে একটি বাজারে কিছুদিন ব্যবসা করেছিল বলে তিনি জানান। তবে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলে এই তথ্যটি সঠিক নয়। তিনি পারের হাটে কখনো ব্যবসা করেননি। তিনি ব্যবসা করেছিলেন খুলনায়।

মাসুদ সাঈদীর বক্তব্য অনুযায়ী তার বাবা মূলত একজন লেখক ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তিনি ব্যবসা মূলত শুরু করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে যখন খুলনার যশরে বসবাস করতেন  তখন। এরপর তিনি লেখালেখি করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোরআনের দাওয়াত দেওয়াটা ছিল তার লক্ষ্য। এমনটিই বলেছেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর প্রথম ওয়াজমাহফিল

 বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পরিচিতি পান মূলত আশির দশকের শুরু থেকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তখন তিনি ওয়াজ মাহফিল নামে পরিচিত ধর্মীয় সমাবেশ গুলোতে একজন বক্তা হিসেবে হাজির হতে শুরু করেন।

পিরোজপুরের বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালে তিনি প্রথম দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখেন তাদের এলাকায় এক ওয়াজ মাহফিলে। এর আগে কখনো সাঈদী সাহেবকে ওয়াজ মাহফিলে দেখা গেছে কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না মিস্টার রহমান।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলেন ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে তেনার বাবা দেশ জুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীর তথ্য অনুযায়ী ১৯৭২ সালে তিনি প্রথম পিরোজপুরে মাহফিল করেন।

আর তারপর একের পর এক দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাহফিল করতে থাকেন। আশির দশকে শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী একজন সুবক্তা হিসেবে খুব দ্রুত পরিচিত লাভ করেন। তার ধর্মীয় সমাবেশ গুলোতে জনসমাগম বাড়তে থাকে। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের মানুষের একটি অংশের কাছে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। কারণ তার নানান রাজনৈতিক বক্তব্য এবং জামায়েতে ইসলামীর সাথে ঘনিষ্ঠ  সম্পর্ক প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর।

প্রথম সংসদ সদস্য হন ১৯৯৬ সালে

ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছদ্দ্য আবরণে জামায়েতে ইসলামি এবং এর ছাত্র সংগঠনের পক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করছেন বলে অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জীবনের যে অধ্যায়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী কয়েক বছর।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিরুদ্ধে মোট ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করা। অভিযোগে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি আধা মিলিসিয়া রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীতে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। তবে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলের মাসুদ সাঈদীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি ২০১৩ সালে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন।

১৯৭১ সালে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পিরোজপুরেই ছিলেন না। তার ভাষ্যমতে ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি যশোরের নিউমার্কেট এলাকায় এ ব্লকের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। শুরুতে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিতে দৃশ্যমান না থাকলেও তিনি যে এই রাজনীতির সক্রিয় সমর্থক সেটি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কখনোই গোপন করেননি। এরপর অবশ্য তিনি প্রকাশ্যেই জামাতি ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে টানা ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি

যুদ্ধ অপরাধিনের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন তখন জামাতের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাকেউ বিচারের কাঠগড়ায় দার কোরানর প্রক্রিয়া শুর হয়। মিস্টার সাঈদী ২০০৯ সালে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি ব্যর্থ হয়। ২০১০ সালের ২৯  জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন।

পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইবুনাল। যে ২০টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তার মধ্যে ৮টি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এর মধ্যে দুটি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় তবে পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে আপিল বিভাগ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত কারগন্ড দেয়

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।