ট্রাভেল

বিমান উড়ানোর রাস্তা কিভাবে আবিষ্কার হরা হলো

বিমান কিভাবে আকাশে উড়ে! বন্ধুরা আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব বিমানে রাস্তা কে আবিষ্কার করেছেন।

বিমান কিভাবে আকাশে উড়ে

আর বিমান কেনই বা একটি নির্দিষ্ট পথে যাতায়াত করে থাকে। আমাদের প্রতিদিনকার কর্মক্ষেত্রে বহু জায়গায় আমাদেরকে যাতায়াত করতে হয়। এজন্য যেরকম বিভিন্ন ধরনের বাস, রেল, মাইক্রো, মোটরসাইকেল আবিষ্কার করা হয়েছে দ্রুত কোন স্থানে যাওয়ার জন্য। সে রকম ভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে উড়োজাহাজ।

যার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই একদেশ থেকে অন্য দেশে যাতাযাতা করতে পারি। কিন্তু একটি প্রশ্ন বিমান কিভাবে আকাশে তার গতিপথ চিহ্নিত করে? আর কেন বা বিমান কখনো মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না? এই সম্পর্কে জানতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই পুরো পোস্টটি করতে হবে। তাহলে বন্ধুরা চলুন শুরু করি বিমানের নির্দিষ্ট যাতায়াত পথ নিয়ে আজকের আলোচনা। আশা করি পোস্ট স্ক্রিপ্ট না করে পুরোটাই পড়বেন।

প্রতিদিন আমেরিকা থেকে ইউরোপে যায় প্রায় দেড় হাজার বিমান। আটলান্টিক মহাসাগরের উপর বিমান গুলোকে সবসময়ই এই পথেই চলাচল করতে দেখা যায়। এটি উড়োজাহাজের জন্য একরকম অদৃশ্য হাইওয়ের মত। যেখানে প্রত্যেকটা এরোপ্লেন একটি অপরটার কাছ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করে। আবার একটি থেকে অন্যটি ১ হাজার ফুট উঁচুতে থাকে। প্রশ্ন হল পুরো আকাশ খালি পড়ে থাকার পরেও কেন একটা নির্দিষ্ট পথে এই বিমানগুলোকে আসা যাওয়া করতে হয়।

বিজ্ঞানী ওয়াসিবোরো ঐশী

জেনে অবাক হবেন উড়োজাহাজের এই অদৃশ্য পথ ১০০ বছর আগেই আবিষ্কার করা হয়। আবিষ্কারক ছিলেন একজন জাপানি বিজ্ঞানী ওয়াসিবোরো ঐশী। তিনি একজন আবহাওয়াবিদ ছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি বেলুন ব্যবহার করে খুব সতর্কতার সঙ্গে কিছু পরীক্ষা চালায় এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ মাইল উপরে ঘন্টায় প্রায় ১৫০ মাইলের তীব্র বায়ু প্রবাহ দেখতে পান। যে বায়ু প্রবাহ বেলুনকে পূর্ব দিকে ঠেলতে থাকে। কিন্তু তার এমন আবিষ্কার দুনিয়ার কাছে অজানাই থেকে যায়।

তবে ২৫ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার এই আবিষ্কার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। ১৯৪৫ সাল যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন তরুণ বনভূজের জন্য একটি রাজ্যে গিয়েছিল। সেখানে জঙ্গলে তারা একটি বড় বেলুন দেখতে পায়। এ দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠে তরুণরা। কিন্তু হঠাৎ কাছে জেতেই বেলুনের মাঝে থাকা বোমা বিসফরিত হয় আর তরুণরা সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। তখন পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই এমন আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। তদন্তে বেরিয়ে এলো ১০ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ জাপান থেকে এই বেলুন বোমা গুলো ছাড়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ৯ হাজার বেলুন বোমা নিক্ষেপ করে। যার মধ্যে মাত্র ৩শটি বেলুল জাপানের সেট করা গন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়।

বিমানের ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

জাপান ওয়াসিবোরো ঐশীর আবিষ্কার করা বায়ু প্রবাহকেই ব্যবহার করেছিল। তীব্র বায়ু প্রবাহই বেলুন গুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার ফুট  উচ্চতার এই তীব্র বায়ু প্রবাহ কেই জেট স্টিম বা জেট বায়ু প্রবাহ বলা হয়। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে এই বায়ু পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ঠিক নলের মতই। যার দৈর্ঘ্য কয়েকশো কিলোমিটার এবং যার পুরুত্ব ৪ কিলোমিটার। পৃথিবীর সম্পূর্ণ জেট বায়ু প্রবাহ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু জেট বায়ু কেন পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকেই প্রবাহিত হয়?

আমাদের পৃথিবী ঘন্টায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরছে। অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে জেড স্ট্রিম পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। প্রশ্ন হল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের পথে বিমানগুলো কেন একটি নির্দিষ্ট পথ ব্যবহার করে? আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে আকাশ পথে রয়েছে জেট স্ট্রিম। তাই প্লেন চালানোর সময় পাইলটরা জেনেশুনেই তীব্র গতির বায়ু প্রবাহর মাঝেই বিমানকে নিয়ে যান। কারণ ঘন্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের এই বায়ু প্রবাহ উড়োজাহাজকে সামনের দিকে নিয়ে যায়। এটা অনেকটা স্রোতের অনুকূলে নৌকা চালানোর মতো। এর ফলে প্লেনের গতি বেড়ে যায় এবং জ্বালানির সাশ্রয় হয়। অদৃশ্য এই হাইওয়ে কেবলই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কিন্তু কোনো বিমান যখন ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাবে তখন সেটি জেট স্ট্রিম এড়িয়ে যায়। কারণ এক্ষেত্রে এটা স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালানোর মত কাজ করবে। অর্থাৎ বিমানের সামনে চলার পথে বাধার সৃষ্টি করবে প্রবল বায়ু প্রবাহ। রাডারের সাহায্যে জেট স্ট্রিম খুঁজে বের করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ যাওয়ার সময় ৬টা পথ ঠিক করে দেওয়া হয়। বলা যেতে পারে সেই প্রথম আসলে কেউ যথাযথভাবে কোন জেড স্ট্রিম মেপে দেখেছিল।

তাহলে বন্ধুরা আমরা বুঝতে পারলাম জাপানি বিজ্ঞানী প্রথম স্ট্রিম বায়ুর স্তর নির্ণয় করেন।যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রীকে ঘায়েল করার জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল এবং সেই সূত্র ধরেই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে যাওয়ার জন্য এই আবিষ্কারকে ব্যবহার করা হয়। বন্ধুরা আশা করি পোস্টটি ভালো লেগেছে। একটি বিমান যখন আকাশে উড্ডয়ন করে তখন থেকে শুরু করে নিচে নামা পর্যন্ত সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হয় বিমানের ব্লাক বক্স নামক একটি স্থানে। আপনারা যদি এই ব্লাক বক্স সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।