ট্রাভেল

পৃথিবীতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল

পৃথিবীতে বর্তমান জনসংখ্যা কত ২০২৪! পুরো বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানে ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের বাজারে এই আটশ এর মধ্যে ৩০০ কোটি মানুষের আয় দিনে ২০০ টাকারও কম।

পৃথিবীতে বর্তমান জনসংখ্যা কত ২০২৪

বেকারের সংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। প্রতি ১২ বছরে এই পৃথিবীতে ১০০ কোটি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ। গবেষণা বলছে ২০৮০ এর মাঝামাঝি বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে ২০২৩ সালের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ আজ থেকে ৫০ বছর আগে যা ছিল ৩ এঁর ঘরে। তবে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের দিকে নজর দিলে জনসংখ্যা এখনো বিরাট একটি সমস্যা। জনবহুল রাষ্ট্রের মধ্যে চীনেই ১৪৫ কোটি মানুষের বাস।

আবার পৃথিবীতে নাউরু ও ট্রভালুর মতো রাষ্ট্র রয়েছে তাদের জনসংখ্যা মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার। বিশ্বের এই বাড়তি জনসংখ্যা প্রকৃতি থেকে শুরু করে পাল্টে দিচ্ছে আমাদের জনজীবন। শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন পেশা। ফলে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি চাকা পরিবর্তন করে দিচ্ছে এই বাড়তি জনসংখ্যা। বিশ্বে প্রযুক্তির বাজার থেকে শুরু করে জ্বালানি শক্তির চাহিদা মানুষের আয় ব্যয় তথা গোটা অর্থনীতির পরিবর্তনে জনসংখ্যার বৃদ্ধি কতটা দায়ী?

পৃথিবীতে জনবহুল রাষ্ট্রগুলো

বিশ্বের জনবহুল রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৫ কোটি চীনের অবস্থান প্রথম। এর পরেই ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ,পাকিস্তান। যাদের জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৪২ ৩৩, ২৮ ও ২৩ কোটির বেশি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৫% বাস করে শুধু চীন ও ভারতে। মহাদেশ বিবেচনায় এশিয়া মোট জনসংখ্যার প্রায় ষাট শতাংশ দখল করে রয়েছে। মজার বিষয় হলো ফেসবুকে গড়ে প্রতি মাসে লগইন করে ১৪৯ কোটি মানুষ ফেসবুক কোন রাষ্ট্র হলে চীন ও ভারতের পরই হতো তার অবস্থান।

এতসবের পরও বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে নিম্নগামী। অনুমান করা হয় অতীতের থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০০ কোটি মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করেছে। বর্তমানে এর প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ বাস করে। এই সাড়ে সাত শতাংশ প্রায় ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের হিসাব করলে বিশ্বের তিনটি জনবহুল রাষ্ট্র অর্থাৎ চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার উপরে।

তিনটি রাষ্ট্রের সম্মিলিত গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ২৩ হাজার ৬৫৫ মিলিয়নটন যা মোট নিঃসরণের প্রায় অর্ধেক। বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী ১৩ হাজার ৬০১ কোটি মেগাওয়াট ঘন্টা জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এই তালিকাতেও প্রথম পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবার ওপরে। চীন ৩৬২ কোটি ঘন্টা মেগাওয়াট জ্বালানি ব্যবহার করে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে ৩৩৭ মেগাওয়াট ঘন্টা এবং ৫৬৩ মেগাওয়াট ঘন্টা।

ধনী গরিবের বৈষম্য

জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে বিশ্বের ধনীর সংখ্যা। ১০% জনসংখ্যা বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৬ শতাংশের মালিক। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ও স্নাতক পর্যায়কে  টার্সিয়ারী স্তর বলা হয়। চীনে মোট জনসংখ্যার ২.৭১ শতাংশ ও ভারতে ৪.৮৫% এই টার্সিয়ারী স্তর সম্পূর্ণ করেছে। ভর্তি হিসেবে এই পর্যায়ে চীন ও ভারত যথাক্রমে ৪৩.৪ ও ২৬.৯ শতাংশ ফলে এই বৈষম্য উচ্চতর শিক্ষাতেও প্রভাব ফেলছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এর মতে ২০২৭ সাল নাগাদ ক্লাট, হিসাবরক্ষক, ডাটা এন্ট্রি সহ প্রায় ২৩ শতাংশ পেসা পরিবর্তিত হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট দিয়ে প্রযুক্তি স্থাপিত হতে পারে ৩০ লাখ চাকরির। পেশায় ৫৭ শতাংশ মানুষ বিপরীতে থাকবে ৪৩ শতাংশ মেশিনের অবদান অর্থাৎ চাকরির বাজারে ধনী রাষ্ট্র ও উচ্চতর শিক্ষার যোগ্যতা সম্পন্নদের কর্মসংস্থানেই তৈরি হতে যাচ্ছে বলা যায়।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থান

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক রাষ্ট্রই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল বললে ভুল হবে না। কারন ১৯৭০ এর দশকে যখন জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ২ এর বেশি তখন ধাতব মুদ্রার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বার্তা দেয় বাংলাদেশ সরকার। মা বাবা একটি ছেলে ও একটি মেয়ে অঙ্কিত এই মুদ্রার স্লোগান ছিল পরিকল্পিত পরিবার ও শোবার জন্য খাদ্য। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রায় সারে ৪৯ কোটি এই মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন ও জাপানেও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর মধ্যে চীনের বহু সমালোচিত ১ শিশু নীতি অন্যতম। কঠোর এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলে বর্তমানে দেশটিতে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের বয়স ছিল ৬০ এর বেশি। এর মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষ। যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। জাপানের গড় আয়ু প্রায় ৮৫ বছর রাষ্ট্রের প্রায় ৩০% মানুষের বয়স ৬৫ বছরের উপরে।

অধিক জনসংখ্যা যেমন পরিবেশ ও জনজীবনের উপর বিরূপ প্রভাব রাখে কম জনসংখ্যা অপরদিকে একটি রাষ্ট্রের কর্মক্ষমতা কমিয়ে আনতে পারে। তাই মূলত শিক্ষা, জেন্ডার সমতায়ন দারিদ্র দূরীকরণ ও সম্পদের পরিমিত ব্যবহারে জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।

বন্ধুরা যখন বিশ্বে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আপনাকে কতটুকু ভালো লেগেছে তা নিয়ে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর বাংলাদেশ নিয়ে এরকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।