ভ্রমন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০ লাখ যাত্রী পাবে উন্নত মানের সেবা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর! হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে মূল টার্মিনালের ভবনটি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ধারণার চেয়ে সুন্দর হয়ে উঠছে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি। এরই মধ্যে টার্মিনালটির ভেতরে নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা খুব দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে টার্মিনালটির ভেতরে ছিলিং এর কাজ প্রায় শেষ। মেঝের টাইলস লাগানোর কাজ চলছে পাশাপাশি যন্ত্রপাতি লাগানোর কাজ জোরেসোরেই এগিয়ে চলছে।

প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মী ডে নাইট শিফটে কাজ করছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলা যায় বেশ দ্রুততার সাথে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট রাত। ৮০ দশকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কিছু সংখ্যক পরিবর্তন হলেও সক্ষমতা বাড়াতে বড় ধরনের কোন প্রকল্প নেওয়া হয়নি এই বিমানবন্দরে। বর্তমানে বিমানবন্দরে রয়েছে দুটি টার্মিনাল যা বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা আছে। এই বন্দরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রীর চাপ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই চাপ সামাল দিতেই নির্মিত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল।

বিমানবন্দরের সাজসজ্জা

বিমানবন্দর এলাকায় ভারী যন্ত্র দিয়ে চলছে টারমিনালের নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে পুরো টার্মিনাল ভবনটি। নান্দনিক স্থাপত্যের ভিত্তিতে নির্মাণাধীন এই টার্মিনালের ভিতরে ভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা, ডুক্তেই যাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে না হয় সেজন্য থাকতেছে ১১৫ টি চেকিং কাউন্টার। চেকিং পর্ব শেষ করা হলেই ইমিগ্রেশন পর্ব তাই টার্মিনাল এ নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে বারোটি বডিং ব্রিজ। যেটি সংযুক্ত থাকবে উড়োজাহাজের সঙ্গে। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে ৬৪ টি। আর আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৪ টি। লাগেজ ব্যাগ টানার জন্য নির্মিত হচ্ছে ১৬ টি কনভেয়ার ব্যাল্ড।

বিমানবন্দরের অর্থায়ন

তিন তলা বিশিষ্ট এই স্থাপত্যটি নান্দনিক সুন্দর। এই বিমানবন্দরের নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাবিদ রুহানি বাহারি।  প্রকল্পটিতে সব মিলিয়ে ২,১৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয় করা ছচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫,২৫৮ কোটি ৩ লাখ  ৮৮ হাজার টাকা বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জায়কা। নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনালটি হস্তান্তর করতে চায় নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান। জাপানের অর্থায়নেই টার্মিনালটি নির্মাণ করছেন জাপানি প্রতিষ্ঠান।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সূত্র অনুযায়ী বর্তমান থার্ড টার্মিনানের কাজ ৭৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরে অক্টোবরে এ প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধনের সফট প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ করা হবে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের অক্টোবরই উদ্বোধন করা হবে এই টার্মিনালটি। তবে শুরুতে আংশিক চালু করা হবে এবং আগামী বছর পুরোপুরি চালু করা হবে এই টার্মিনালটি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এটি চালুর পর বিমানবন্দর পরিচালনা এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেল লিংকের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী জাপান। এ বিষয়ে ইতিবাচক রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে বিমান বাংলাদেশ বিদেশিদের কাছে এই দায়িত্ব দিতে রাজি নয়। এই নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এবং সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের জায়গা মিনালে একসঙ্গে ৩৭ টি প্লেন রাখার বা প্লেন পার্ক করার জায়গা হব। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।

বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখনো প্রতিদিন ৩০ টির বেশি বিমান সংস্থার ১২০ থেকে ১৩০ টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব বিমানের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করে । হজ্জ ও বিশেষ সময় যাত্রীর চাপ আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে বছরে প্রায় ৭০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরো এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, বিল্ডিং, রাস্তা, কার পার্কিং সহ আরো থাকছে অনেক সুযোগ-সুবিধা। টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে বেবি কেয়ার লাউঞ্চ। এই লাউঞ্চ এর ভিতর মায়েদের বেস্ট ফিটিং বুট একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে। এছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার দোলনা সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকছে।

প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফাস্ট এইট রুম অন্যান্য রোগীর জন্য টেস্টিং সেন্টার, আইসোলেশন এরিয়া থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালটি নকশায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ক্লেটার সাব স্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকবে রাডার কন্ট্রোল টাওয়ার অপারেশন ভবন বহুতল কার পার্কিং যা এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। তিন তলা বিশিষ্ট এই টার্মিনাল ভবনে স্থাপত্য রীতিতে আনা হচ্ছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনালের বহিঃ বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।

মেট্রোরেল সংযোগ

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল ১ তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে করে নিজ গন্তব্যে যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকায় যেকোন স্টেশন থেকে মেট্রো রেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে। এই টার্মিনালটির সাথে যুক্ত হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেস বইয়ের উড়াল সড়ক এবং তৃতীয় টার্মিনাল সংযোগ এরিয়া এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার জন্য নান্দনিক আন্ডার পাস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। আর এটি ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে দ্রুত সময়ে বের হতে পারবে। আবার যানজট এড়িয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবেন খুব সহজে।

বন্ধুরা বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পর্কে আপনার বক্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। এই বিমান বন্দরটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানুষের জনজীবনে কি অবদান রাখতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন ধন্যবাদ

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।