উৎসব

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব

ভালোবাসা দিবস ২০২৪

ভালোবাসা দিবস ২০২৪! ভালোবাসা একটি মধুর শব্দ। যেটির মাধ্যমে প্রিয়জনকে আরো অনেক বেশি কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে।

ভালোবাসা দিবস আজ থেকে প্রায় কয়েকশো বছর আগে বর্তমান সময়ের মতো ঘটা করে পালন করা হতো না। এটি মূলত উদ্ভব হয়েছে কিছু জানা অজানা ঘটনা থেকে। আজকে আমরা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের অবগত করব। আর ১৪ ফেব্রুয়ারিতে কেন ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় সেই বিষয়গুলো আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আজকের এই আলোচনাটি আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

১৪ই ফেব্রুয়ারি নিয়ে কিছু কথা

আমরা সকলেই জানি ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। অর্থাৎ এই দিনে প্রেমিক প্রেমিকারা একে অন্যকে ভালবাসার শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে। আর এই শুভেচ্ছা বার্তার মধ্যে তারা বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী আদান প্রদান করে। যেমন এই দিনে অনেকেই রয়েছে প্রিয় জনকে ভালোবাসার বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ড প্রদান করে।

এছাড়াও অনেককে প্রিয়জনকে আবার ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এমনকি নানান রকমের চকলেট দিয়ে থাকে। আর এটির মাধ্যমে মূলত ভালোবাসা দিবসকে উদযাপন করা হয়। আমরা যে শুধু প্রিয় জন বলতে প্রেমিকাকে বা প্রেমিককে বুঝাবো এমনটি নয়। এই দিনটিতে অনেকেই আবার বাবা-মা দাদা-দাদী ভাইবোনদের মাঝেও এ বিষয়গুলো করে থাকে। অর্থাৎ এই দিবসটি পরিবারের সকলকে নিয়েও উদযাপন করা যায়।

যা একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই দিবসটি জমজমাট ভাবে উদযাপন করা হয়। পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবীতে অনুষ্ঠানটি ছড়িয়ে পড়েছে। আর অনুষ্ঠানের এই ব্যাপকতা কে কাজে লাগিয়ে ১৪ ই ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বে প্রায় কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি হয়ে থাকে।

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস

প্রাচীন রোমে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল রোম দেব-দেবীদের রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। আর জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে সকলেই চিনতো এবং বিশ্বাস করত। কেননা এই দেবী ছিল সকল দেবতার এবং দেবীদের ভালবাসার এক মুহূর্ত প্রতিক। তারা মনে করত এই দেবী কখনো তার প্রজাদের দুঃখ দিতে পারে না। তারা যতই খারাপ কাজ করুক না কেন। তাই ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোমরা এই দিনটিকে ছুটির দিন বলে ঘোষণা করে।

আবার অনেকেই মনে করত রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ নিষিদ্ধ করে। আর এই বিবাহ নিষিদ্ধ করার একমাত্র কারণ ছিল পুরুষদেরকে যুদ্ধে ব্যবহার করা। অর্থাৎ তিনি মনে করতেন পুরুষরা শুধু যুদ্ধ করবে তারা বিয়ে করবে কেন। বিয়ে করলে তারা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে আসতে পারে।

তাই তিনি ২০০ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু সেই সময়কার অসীম সাহসী যুবক ভ্যালেন্টাইন্স এ আইনের প্রতিবাদ জানায়। আর ফলস্বরূপ তাকে রাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আর এই মৃত্যুদণ্ডের দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বলা হয়ে থাকে এরপর থেকে প্রতিবছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোমরা ভ্যালেন্টাইন্স এর স্মরণে ভালোবাসা দিবস পালন করতো।

রোম সম্রাজ্যের চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন্স

তবে এটিও কোন বিশ্বস্ত তথ্য নয়। অনেকেই আবার মনে করে রোম সম্রাজ্যে তখনকার সময়ে একজন চিকিৎসক ছিলেন যার নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন্স। তিনি ছিলেন অত্যান্ত দয়ালু চিকিৎসক। তিনি অসুস্থ রোগীদেরকে সুস্থ করার জন্য তেতো ঔষধ খাওয়াতেন। তবে এই তেতো ওষুধ খাওয়ানোর জন্য তিনি ওয়াইন, মধু এবং দুধ ব্যবহার করতেন।

আর তিনি খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তখনকার সময়ে খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাস করা ব্যক্তিদেরকে সমাজে নিকৃষ্ট মনে করা হতো। তাই একথা রাজা জানতে পেরে ভ্যালেন্টাইন্সকে কারাগারে বন্দী করে।  কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় একজন কারারক্ষী তার মেয়েকে নিয়ে এসে বলে তার মেয়ে অন্ধ ভ্যালেন্টাইন্স যেন তাকে চিকিৎসা করে ভালো করে দেয়। ভালোবাসা দিবস ২০২৪ ভ্যালেন্টাইন্স মেয়েটিকে তার তৈরিকৃত ওষুধ খাওয়াতে থাকে। এমন এক সময় ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে কারো কারো মধ্যে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন্সকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে তার আগে ভ্যালেন্টাইন্স কারাগারে সেই অন্ধ মেয়েটির জন্য একটি চিঠি লিখে। আর কারা রক্ষীরা এই চিঠিটি সেই মেয়েটিকে  দেয়। মেয়েটি তখন স্পষ্ট দেখতে পায় চিঠিতে লাল গোলাপের সঙ্গে লেখা রয়েছে ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন্স। অর্থাৎ মেয়েটি তখন চোখ দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল। আর এই ঘটনাটি সকলের মুখে মুখে ছরিয়ে পড়ে। এরপর ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে জেলাস ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আর সেই সময় থেকেই এই দিনটিকে মানুষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে ভিন্ন মত

তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে আরেক শ্রেণীর মানুষের একদম ভিন্নমত রয়েছে। তারা মনে করে এই দিনটিতে পাখিদের বিবাহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়ে এবং তাদের সঙ্গী খুঁজতে থাকে। পাশাপাশি মানুষও এই দিনে তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে নেয়। তাই এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করা হয়।

খ্রিস্টীয় চেতনাকে বিনষ্ট করার অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্সের সরকার ভ্যালেন্টাইন্স দিবসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কেননা দেখা গেছে এই দিনটিতে প্রার্থনা স্থলে প্রবেশ করে অনেকে মদ্যপান করে ফলে সেখানকার ধর্মীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। আর এসব কর্মকাণ্ডের কারণে ফ্রান্সের সরকার দিনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়াও অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে এই দিনটিকে সরকারিভাবে এবং জনসাধারণের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

বর্তমানে এই দিনটিকে একটি মহা উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। ভালোবাসা দিবস ২০২৪ আর বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এই দিবসের কদর অনেক বেশি। এমনকি সরকারিভাবে এই দিনটিকে পালন করার জন্য প্রায় কয়েকশো কোটি মার্কিন ডলার খরচ করা হয়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।