উৎসব

শীতকালে ভ্রমণের জন্য সেরা ১০টি জায়গা

শীতকালে ভ্রমনের জায়গা

শীতকালে ভ্রমনের জায়গা! হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলেই ভাল আছেন। ইতোমধ্যেই শীত তার আপন রূপ দেখাতে শুরু করেছে।

আর প্রখর গরম শেষে যখন শীতের আমেজ আমাদের দেশে বিরাজমান হয় তখন আমরা পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য ছুটে যাই। কেননা বাংলাদেশ সুজলা সফলা শস্য শ্যামলা অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি।

এদেশে শুধুমাত্র তুষারপাত এবং মরুভূমির সৌন্দর্য ছাড়া সবকিছুই বিরাজমান। আর এই অপরূপ সৌন্দর্য গুলো দেখার জন্য প্রতিবছর শীতের মৌসুমে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্নপ্রান্তে ছুটে চলে প্রকৃতিপ্রেমিক অনেক ভক্ত। আমরা এরকমই বাংলাদেশের সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো। যেখানে আপনি চাইলেই শীতে আপনার পরিবার এবং প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

দর্শনীয় স্থানের তালিকা

১/  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

২/  সেন্টমার্টিন দ্বীপ

৩/ সাজেক ভ্যালি

৪/ কুয়াকাটা

৫/ শ্রীমঙ্গল

৬/ সুন্দরবন

৭/ মনপুরা দ্বীপ

৮/ নিঝুম দ্বীপ

৯/ মালনীছড়া চা-বাগান

১০/ নীলগিরি

বন্ধুরা এবারের শীতে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য চলুন জেনে নেওয়া যাক উপরোক্ত স্থানগুলোর বিবরণী।

১/  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত যা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত। প্রতিবার শীতে এখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটন আসে এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য দেখার জন্যে। আর সমুদ্রের কারণে এখানে শীতের প্রখরতা অনেক কম থাকে। আপনি চাইলেই এবারের শীতে আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ঘুরে আসতে পারেন।

এছাড়াও আপনি এখান থেকে লাবনী এবং সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভের রাস্তা ধরে টেকনাফের দিকে একটু এগুলেই দেখতে পাবেন হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর ও হাজামপাড়ার। এছাড়াও সিএনজির মাধ্যমে আপনি কিছুদূর এগুলেই রামুতে পাবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলীদের সুন্দর কিছু প্যাগোডা। যা দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

২/  সেন্টমার্টিন দ্বীপ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। যেখানে আপনি বিভিন্ন জীবের বৈচিত্র্যময় জীবন গাথার গল্প দেখতে পাবেন। মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। যেখানে রয়েছে নীল রংয়ের জলরাশি। এছাড়াও এই দ্বীপটিতে প্রতিবছর শীতকালীন সময়ে জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে শুটকি তৈরি করে।

যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। শীতকালীন সময়ে এই দ্বীপটিতে ভ্রমণের উপযোগী পরিবেশ থাকার কারণে প্রতি বছর এই সময়টিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বাইরের দেশ থেকেও এই দ্বীপটিতে ভ্রমণ করার জন্য আসে। এই দ্বীপটিকে স্থানীয়রা নারীকেলের জিনজিরা নামে ডেকে থাকে। কেননা এখানে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল উৎপাদন করা হয় যা দেশের ৭০ ভাগের বেশি।

৩/ সাজেক ভ্যালি

বাংলাদেশ যেহেতু একটি পলিমাটির দেশ তাই এখানে বিভিন্ন ধরনের সমুদ্রের সৌন্দর্য ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ি সৌন্দর্য ।আর এই পাহাড়ি সৌন্দর্যের একটি অপরূপ নিদর্শন হচ্ছে সাজেক।

কেননা এখানে একই দিনে আপনি তিনটি আবহাওয়ার সম্মুখীন হবেন। কখনো মনে হবে এখানে প্রচন্ড গরম, আবার কখনো দেখবেন বৃষ্টি, আবার কখনো চারদিক আপনার কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে অবস্থান করে। আপনি যদি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে চান তাহলে অবশ্যই জীবনে একবার হলেও সাজেক ঘুরে আসা আবশ্যক।

৪/ কুয়াকাটা

আপনি যদি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পর সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে অবশ্যই সাগর কন্যা কুয়াকাটা ভ্রমন করা আবশ্যক। কেননা এখানকার সুন্দর্য আপনাকে মনোমুগ্ধ করবেই।

কুয়াকাটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনি একই সঙ্গে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। আর এই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানে হাজারো পর্যটনের ভিড় জমে যায়। এর বাইরেও কুয়াকাটায় রয়েছে শুটকিপল্লী, ফাতরার বন, গঙ্গামতির জঙ্গল এবং লাল কাকড়ার দ্বীপ।

যা অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এর বাইরেও আপনি যদি এখানে ভ্রমণ করেন তাহলে মোটরসাইকেল ড্রাইভিং এবং ঘোরার পিঠে চড়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন। কুয়াকাটায় সারা বছর জেলেরা মাছ সংগ্রহ করে।

৫/ শ্রীমঙ্গল

শীতকালীন সময়ে সিলেটের বিভিন্ন জায়গা পানিতে আবদ্ধ থাকায় অনেকে সিলেটে যেতে চায় না। তবে আপনি যদি সিলেটের শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে চান তাহলে অবশ্যই একবার হলেও এই জায়গাটি ঘুরে আসা দরকার।

কারণ শীতের প্রখর আবহাওয়ায় এক কাপ চায়ের সাথে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন। এছাড়াও শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বাইক্কা বিলের পাখির অভয়াশ্রম যা দেখতে দেখতে আপনার ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে।

৬/ সুন্দরবন

বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। যেখানে ৩৩০ প্রজাতির গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য বাংলাদেশ সহ দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক প্রতিবছর এসে থাকে। ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা করে নেওয়া সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য এক অনন্য ভ্রমণের স্থান।

৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই সুবিশাল বনটিতে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, গোলপাতা, গোওড়া, সেগুনবানর সহ অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি এবং গাছ গাছরা। বাংলাদেশের তিনটি জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট নিয়ে সুন্দরবন গঠিত। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে সুন্দরবনের কিছু অংশ জড়িত রয়েছে।

এখান থেকে প্রতিবছর মধু সংগ্রহকারীরা মধু সংগ্রহ করে যা বিশ্বের অন্যতম দামী মধুর খেতাব অর্জন করেছে। এছাড়াও এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সারা বছর এই স্থান থেকে মাছ সংগ্রহ ছাড়াও জীবিকার জন্য কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে থাকে।

 ৭/ মনপুরা দ্বীপ

৫০০ মিটার বিস্তৃত এই দ্বীপটি ভোলা জেলায় অবস্থিত। যেখানে দর্শনার্থীরা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ দেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়াও এখানে রয়েছে চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের। যা বাংলাদেশের মধ্যে সুপরিচিত। এছাড়াও এই দ্বীপটিতে রয়েছে অসংখ্য নারিকেল গাছ। যার সৌন্দর্য আপনাকে মনোমুগ্ধকর করতে বাধ্য। এছাড়া যারা সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে চান তাদের জন্য এই দ্বীপটি একটি আদর্শ স্থান।

৮/ নিঝুম দ্বীপ

বঙ্গোপসাগর ঘেরা নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের মধ্যে অতিথি পাখিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। প্রতিবছর এই দ্বীপে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আর এসব পাখি শীতের পুরো মৌসুম এই দ্বীপে অবস্থান করে।

এই দ্বীপের আরেকটি সৌন্দর্য হচ্ছে চিত্রা হরিণ। আপনি একসঙ্গে এত চিত্রা হরিণ আর কোথাও দেখতে পাবেন না। এছাড়াও এই দ্বীপ থেকে আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। এক কথায় অপরূপ সৌন্দর্যময় একটি দ্বীপ হলো নিঝুম দ্বীপ। এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ১৪ হাজার একর।

আপনারা যারা অতিথি পাখি দেখতে খুবই পছন্দ করেন তাদের জন্য এই দ্বীপটি একবার হলেও ঘুরে আসা দরকার। এখানে আপনি বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন প্রজাতির এবং বিভিন্ন আকৃতির অতিথি পাখি দেখতে পাবেন। যা আপনাকে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করবে।

৯/ মালনীছড়া চা-বাগান

আমরা যারা চা বাগান দেখতে অনেক ভালোবাসি তাদের জন্য মালনীছড়া চা-বাগান একটি আদর্শ স্থান। এই চা বাগানটি বৃটিশদের আমলে ১,৫০০ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে এই চা বাগানটি পরিচালনা করা হয়। আপনি চাইলেই এখানকার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দ্বিধায় চা বাগানের পুরো অংশ ঘুরে আসতে পারেন।

১০/ নীলগিরি

আপনারা যারা মেঘ ছুয়ে দেখতে চান তাদের জন্য নীলগিরি একটি আদর্শ স্থান। এটি মূলত  ভূ-স্বর্গ পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত। এখানে আপনি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করে মেঘকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। আর এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিবছর এখানে বহু পর্যটন ভিড় করে থাকে।

শীতে বেড়ানোর মতো আরও কিছু জায়গা

বন্ধুরা উপরে উল্লেখিত জায়গা গুলো ছাড়াও এবারের শীতে আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পঞ্চগড়ের জিরো পয়েন্ট থেকে। এখান থেকে আপনি চাইলেই হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্গার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

এজন্য আপনাকে খুব সকালে যেতে হবে। এছাড়াও আপনি যেতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি জায়গায়। এতেও যদি আপনার মন না ভরে তাহলে আরো যেতে পারেন মৌলভীবাজার বা গাজীপুরের মত জায়গার ইকো রিসোর্ট গুলোতে।

বন্ধুরা আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের কোন জায়গাটি ভালো লেগেছে তা আমাদের জানিয়ে দিন এবং যে জায়গাটিতে আপনি ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আমরা আপনাকে সঠিক স্থানটির বিস্তারিত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য সব সময় প্রস্তুত।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।