উৎসব

রমজান মাসে কোন দেশে কি দিয়ে ইফতার করা হয়

রমজান মাসে বিভিন্ন দেশের ইফতার আয়োজন

রমজান মাসে বিভিন্ন দেশের ইফতার আয়োজন: ইসলাম ধর্ম পুরো মুসলিম বিশ্বকে এক সুতোয় গাথলেও এসব মুসলিম স্বজাতি ভাইরা নিজস্ব ভৌগোলিক অবস্থার কারণে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে।

আর আমরা একটি বছর পর যখন রমজান মাস পাই তখন এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগুলি আরো বৃহৎ আকারে পরিলক্ষিত হয়। কারণ এই সময়ে বিভিন্ন দেশের রোজাদার মুমিন বান্দারা ইফতারের সময় রকমারি আঞ্চলিক খাদ্যে নিজেদের ইফতার সাজিয়ে থাকে। যা খেতে ও দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও সুস্বাদু হয়।

আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের রোজাদার মুমিন বান্দারা কি দিয়ে ইফতার করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। যারা সংস্কৃতিপ্রেমী রয়েছেন তাদের জন্য আশা করি পোস্টটি অনেক অনেক ভালো লাগবে।

মিশরের ইফতার আয়োজন

মিশরীয়রা পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে বসে ইফতার করতে পছন্দ করে। তারা ইফতারের সময় রোকাক নামে ভাজা টোস্ট খেয়ে থাকেন। এই টোস্টটি মূলত মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।

যা ইফতারে খুব জনপ্রিয়। এছাড়াও তারা ফুল মেদেমাসও বাদামি রুটি খেয়ে থাকেন। আসলে মটরশুটি, টমেটো ও বাদাম দিয়ে তৈরি করা হয়  ‘ফুল মেদেমাস। যা রান্না করা হয় অলিভ অয়েল দিয়ে। এছাড়াও মিশরীয়রা হাসের মাংস খুব পছন্দ করে।

সৌদি আরবের ইফতার আয়োজন

সৌদিবাসী ইফতারের সময়  অ্যারাবিক কফি পান করেন। সেই সঙ্গে খেজুর তো থাকেই। এছাড়াও তারা সুপ, ভাজা অথবা বেক করা নানা রকম পুর ভরা পেস্ট্রি খেয়ে থাকেন। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের লোকেরা ইফতারের সময় সালুনা নামের এক ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন যা মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।

সৌদি আরবের মুসলিমরা ইফতার করার পর নামাজ পড়তে যান। এরপর নামাজ থেকে এসে তারা লেবন হালিব নামে এক ধরনের খাবার খান। যা আমাদের দেশে বিরানির মতো। এছাড়াও তারা মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন হারিসা কোনাফা খেয়ে থাকেন।

লেবাননের ইফতার আয়োজন

লেবাননে ইফতারের সময় ঘোষণা করার জন্য প্রতিদিন কামান দাগা করতে হয়। আর লেবানিজরা  ফাত্তুশ সালাদ নামের একটি জনপ্রিয় খাবার দিয়ে তাদের ইফতার করে।

যে খাবারটি গাজর, টমেটো সহ হরেক রকমের মৌসুমী ফল দিয়ে তৈরি করা হয়। এরপরে খাবারটির উপরে রুটির টুকরো ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

জর্ডানের ইফতার আয়োজন

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান। ইফতারের সময় সে দেশে  দধি, স্যুপ ও জুস দিয়ে ইফতার করা হয়। তাদের একটি জনপ্রিয় খাবার মানসাফ। ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি এই খাবারটি রুটি অথবা ভাত দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

ইরাকের ইফতার আয়োজন

ইরাকের ইফতার আয়োজনে  অ্যাপ্রিকট ও তেঁতুল দিয়ে এক ধরনের শরবত পরিবেশন করা হয়। যা পান করলে সারাদিনের পানির তৃষ্ণা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও মাংসের মাধ্যমে রুটি পরিবেশন করে।

ইরানের ইফতার আয়োজন

ইরানে ইফতারের সময় জাফরানের তৈরি ঘ্রাণযুক্ত এক ধরনের হালুয়া পরিবেশন করা হয়। এছাড়া তারা নামাজ শেষে স্যান্ডউইজ, মিষ্টি চা, তাবরেজি চিজ, আশ রাসতেহ নামে একটি ঘন সবজির স্যুপও খেয়ে থাকে।

মালয়েশিয়ার ইফতার আয়োজন

মালয়েশিয়াতে ইফতারকে বলা হয়  বারবুকা পুয়াসা। মালয়েশিয়ানরা ইফতারের সময় খেজুর পানি দিয়ে ইফতার শুরু করেন। এরপরে  বান্দুং ড্রিংক, আখের রস, সয়াবিন মিল্ক নামের পানিও দিয়ে তারা সারাদিনের শরীরের পানিশূন্যতাকে দূর করে। এছাড়াও তারা ভারী খাদ্য হিসেবে চিকেন রাইস, নাসি লেমাক, লাকসা খেয়ে থাকেন।

মালদ্বীপের ইফতার আয়োজন

মালদ্বীপে ইফতারের সময় গারুধিয়া নামে এক ধরনের জনপ্রিয় খাবার পরিবেশন করা হয়। রমজান মাসে বিভিন্ন দেশের ইফতার আয়োজন এ খাবারটি মূলত মাছের পদ, যা পরিবেশন করা হয় লেবু, ভাত মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হল কুলহি বোয়াকিবা। এটিও একটি মাছ দিয়ে তৈরি ঝাল ঝাল ফিশ কেক। এছাড়াও তারা চাল ও গরু বা খাসির মাংস দিয়ে থারিদ নামক ভারি খাবার তৈরি করে।

ভারতের ইফতার আয়োজন

ভারতের ঐতিহ্যবাহী হায়দ্রাবাদে ইফতার করা হয় সুস্বাদু হালিম দিয়ে। অন্যদিকে কেরালা ও তামিলনাড়ুর মুসলমানরা ইফতার করেন নম্বু কাঞ্জি নামক এক ধরনের খাবার দিয়ে।

যা মাংস, সবজি ও পরিস দিয়ে তৈরি করা হয়। খাবারটির সঠিক স্বাদ পেতে দীর্ঘক্ষন চুলায় জাল দিতে হয়। অন্যদিকে উত্তর ভারতে পথের খাবার দিয়ে বেশিরভাগ ইফতার করা হয়। আর ইফতারের আগের সময়ে ঐসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে যায়। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এসব রাজ্যে ইফতারে থাকে তাজা ফল, খেজুর, ফলের রস। এছাড়া আরো থাকে পাকোড়া, সামোসার মতো ভাজা আইটেম। প্রসঙ্গত ভারতের একটি বিরাট অংশ মুসলিম বেশিরভাগ সময় মসজিদে ইফতার করে থাকে।

প্রবাসীদের ইফতার আয়োজন

যারা প্রবাসে অবস্থান করছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ দেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। আর এজন্য তারা নিজ দেশের জনপ্রিয় সব খাদ্য দিয়ে ইফতার করে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা যে দেশে অবস্থান করে সে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাদ্য দিয়ে মাঝে মাঝে ইফতার করে।

বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আশা করি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আশা করি আপনি রমজান মাসে ৩০ টি রোজা রাখবেন এবং আপনার ৩০ টি রোজা আল্লাহ তাআলা কিভাবে কবুল করবে এবং ত্রিশ রোজার ১০টি করে রোজা আল্লাহ তাআলা কেন ভাগ করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি ফলো করুন।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।