খেলাধুলা

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সৌদি ক্লাবগুলো এত টাকা কোথায় পেল

সৌদি ক্লাবগুলোর টাকার উৎস কি

সৌদি ক্লাবগুলোর টাকার উৎস কি! বেশ কিছুদিন হলো ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে চলছে টালমাটাল অবস্থা। কখন যে কোন খেলোয়াড়ের দিকে সৌদির ক্লাবগুলোর নজর পরে সেই চিন্তায় ঘুম হারাম ইউরোপিয়ান ক্লাব কর্মকর্তাদের। সেইদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন ক্লাব ফুটবলে ইউরোপিয়ানদের একক আধিপত্যে ভাগ বসাতে যাচ্ছে মরুর দেশ সৌদি। কিংবা বিশ্ব ফুটবলে নতুন বার্তা নিয়ে আসবে মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল।

কি এমন উদ্দেশ্য বা শক্তি যা শত বছরের পুরনো ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে মাত্র কয়েক বছরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেল। সৌদি আরবের সেই গল্পের শুরুতেই আসে সৌদির প্রচুর পরিমাণে সম্পদ।

তেল বিক্রি করে  ৯০ বছরে ফুলে ফেপে ওঠা অর্থনীতির কথা। তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে যেখানে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের শুরুতে খেলাধুলায় দেশটির বিনিয়োগ ছিল ২.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আর ২০২৩ এর শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ৭.২ বিলিয়ন ডলার। হঠাৎ করে কেন এত বিনিয়োগ।

যুবরাজের মিশন টুয়েন্টি থার্টি

এই বিনিয়োগের কারণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যা বুঝতে গেলে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৪ বিশ্ব বাজারে তেল উৎপাদনের তালিকার শুরুতে ছিল সৌদি আরব।

কিন্তু সম্প্রতি নতুন খনি পাওয়ায় পুরনো খনি থেকে তেল উৎপাদন বাড়িয়েছে আমেরিকা। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই তেল বিক্রি করে আয় কমেছে সৌদি সরকারের। আর সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ যে এক সময় শেষ হয়ে যাবে সেই বাস্তবা উপলব্ধি করেছে বর্তমান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

বর্তমানে সারা বিশ্বে জ্বালানির ২৬ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে পাবলিক ও ব্যক্তিগত পরিবহনে। যেখানে ভবিষ্যতে বড় একটা অংশ দখল করে নেবে ইলেকট্রিক কার। এখানেও বন্ধ হতে পারে তেল বিক্রি। যে কারণেই সৌদি যুবরাজের মিশন টুয়েন্টি থার্টি বা ২০৩০।

সৌদি বাদশা ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ বিনিয়োগ তহবিল

আর এই মিসন বাস্তবায়নে টাকার উৎস পৃথিবীর অন্যতম বড় সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল যাকে সংক্ষেপে পিআইএফ। ৫২ বছর আগে সৌদি বাদশা ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ এই তহবিল গঠন করেন যার মালিকানায় আছেন সৌদির শাসক ও সৌদির বড় বড় পরিবার।

মূলত তেল বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের বড় একটা অংশ এই তহবিলে রয়েছে। যেই তহবিলের পরিমাণ ৭৭৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে চলতি বছরে বাংলাদেশ যে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করেছে এমন বাজেট দেওয়া যাবে আরো ৩৩০ বছর।

পিআইএফ এর নীতিমালা অনুসারে ৬০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে। যেখানে অবকাঠামো থেকে শুরু করে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে পর্যটন, সংস্কৃতি, ও খেলাধুলার বাজারে বিনিয়োগ। আর এই পি আইএফ জাদুতেই কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকেই নাড়িয়ে দিয়েছে মরুর এই দেশটি।

পিআইএফ এর বিনিয়োগ মূলত শুরু হয় ৪০৯ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের ৮০ শতাংশের মালিকানা নিজেদের করে নেওয়ার মাধ্যমে। আর তাতেই রাতারাতি ইপিএল এর অন্যতম ধনী ক্লাব হয়ে ওঠে নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেড।

তখনই সৌদি আরবের রাজ পরিবারের ক্লাব হিসেবে পরিচিত আল হিলাল, আল ইত্তিহাদ, আল নাসর এবং আল আহলির আর্থিক পরিচালনার দায়িত্বভার নেয় ক্লাবটি। মরুর ফুটবলে এখন পর্যন্ত অর্থের ঝনঝনানি দিয়ে যে বাজিমাত করেছে তা মূলত এই চার ক্লাবেরই রাজত্ব। এরপর থেকেই শুরু হয় বিশ্বের নামিদামি ফুটবলার রোনালদো, নেইমার, বেনজেমা, সাদিওমানে টাকার জড়ে মরুর বালিতে ট্রেনে আনা।

সৌদির দৃষ্টি বিশ্ব ক্রিয়াঙ্গনে

শুধু ফুটবলে নয় সৌদির দৃষ্টি বিশ্ব ক্রিয়াঙ্গনে। বিশ্বের সাবেক এবং বর্তমান গলফারদের নিয়ে গলফলিগ নামে নতুন এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে দেশটি। যেখানে দুই বছরের জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। জনপ্রিয় রেসলিং ডাব্লিউ ডাব্লিউ ই তে বছরের দুটি ইভেন্ট আগামী ১০ বছরে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়ক।

যা অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে। রেসলিং এ বিশ্বের এক নম্বর ফর্মুলা ওয়ান এর আগামী ১০ বছরে একটি করে রেস আয়োজিত হবে জেদ্দায়। যেখানে পিআইএফ এর বিনিয়োগ ৬৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার।

 শুধু রেস আয়োজন করেই থেমে থাকেনি সৌদি আরব। বর্তমানে যার মূল্য হিসেব অনুযায়ী ১৫.২ বিলিয়ন ফর্মুলা ওয়ান কে ২০ বিলিয়নে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। বর্তমানে দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল জায়ান্ট আরামকর বড় অংকের স্পন্সার শিপ বিনিয়োগ রয়েছে ফর্মুলা ওয়ানে। এমনকি নতুন করে ক্রিকেটেও নজর পড়েছে সৌদি আরবের। আইপিএলের আদলে টি২০ লীগ আয়োজন করতে চায় সৌদি আরব।

বর্তমানে তেল সমৃদ্ধ দেশটির ভীষণ টুয়েন্টি থার্টি বড় এক উদ্দেশ্য হলো নিজেদের দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করা। বছরের পর বছর ইয়েমেনে গণহত্যার মদত দেওয়ার অভিযোগ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে সংযুক্ত হওয়ার অভিযোগ।

এ ছাড়া দেশটির নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে বহু বছরের পুরনো অভিযোগ রয়েছে। এই সবকিছুকে ঢেকে দিতেই দেশটির এই পদক্ষেপ যাকে বলা হচ্ছে স্পোর্টসওয়াস। অর্থাৎ খেলাধুলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইমেজ ধোলাই করে তেল অর্থনীতি থেকে বের হয়ে নতুন অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করা। (সৌদি ক্লাবগুলোর টাকার উৎস কি)

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।