ব্যবসায় উদ্যোগ

হীরা কিভাবে তৈরি করা হয় আর কেনইবা হীরা এত দামী

হীরা তৈরি করা হয় কিভাবে! হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমরা জানতে চলেছি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি হীরা ডায়মন্ড সম্পর্কে।

হীরা তৈরি করা হয় কিভাবে

ডায়মন্ড যা সারা পৃথিবীতে অভিজাত্যের প্রতীক ।এটা এত দামি পাথর যে রোমান লোকেরা একে ভগবানের চোখের জল বলত। কিন্তু বিজ্ঞানের দৌলতে বর্তমানে আমরা জানি যে এটা কোন সৃষ্টিকর্তার চোখের জল নয়। বরং খুব দামী একটা পাথর যা খুবই রেয়ার এবং একে কিনতে পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এই ডায়মন্ড যদি কারো হাতে চলে আসে তাহলে সেটা তার কাছে উৎসবের থেকে কিছু কম নয়।

তবে ডায়মন্ডের কথা যদি আসে আর গুজরাটের নাম না নেওয়া হয় তাহলে ব্যাপারটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সারা পৃথিবীতে যত ডায়মন্ড মাইন্ড করে বাইরে বের করা হয় তার ৯০% গুজরাটে কাটা এবং পালিশ করার কাজ করা হয়। তবে কাটা এবং পালিশ করার কাজ যদি এখানে হয় তবে এই হিরাগুলোকে বের করা হয় কোথা থেকে আর ডায়মন্ড তৈরি হয় কিভাবে। তাহলে চলুন জেনে নেই ডায়মন্ড তৈরির ইতিহাস।

হীরার অনুসন্ধান

ডায়মন্ড কোন সৃষ্টিকর্তার চোখে জল নয় একে মাটির গভীর থেকে বের করতে হয়। কিন্তু মাটির গভীরে কোন জায়গায় হীরাকে পাওয়া যায়। এর খুনিকে কিভাবে খোঁজা হয় সেটাও একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ। এর জন্য প্রথমে এর লোকেশন কে খুঁজতে হয়। ডায়মন্ডের খোঁজ করার জন্য কেমবার লাইটের পাথরকে খুঁজতে হয়।

আর যেভাবে ডায়মন্ডকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল কাজ সেভাবে কেমবার লাইট পাথর খোঁজাও খুবই কষ্টের কাজ। ধরুন কেমবার লাইট পাথরকে খুঁজে নিলেন তাহলেও সেখানে খুব কম পরিমাণে ডায়মন্ড থাকে। তবে যেখানে ডায়মন্ড থাকে সেখানে আরো অনেক ধরনের মিনারেলস থাকে। এইজন্য সবার প্রথমে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থকে খোঁজা হয়। তারপর খনিজ পদার্থ পেয়ে গেলে সেখানে কেমবার লাইটের খোঁজ শুরু হয়। কেমবার লাইটের খোঁজ করা হয়ে গেলে তারপর সেখানে ডায়মন্ড মাইন্ড করতে হয়।

মাটির গভীরে ডায়মন্ড তৈরি হয় কিভাবে

মাটির গভীরে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার নিচে প্রচন্ড উত্তপ্ত পরিবেশে এই ডায়মন্ডের নির্মাণ হয়। এই জায়গাতে কার্বনের মলিকিউল উপস্থিত থাকে। এক হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ক্রিস্টালাইজ হয়ে ডায়মন্ড তৈরি হয়। এরপর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হলে এই ডায়মন্ড ভূগর্ভ থেকে উপর দিকে উঠে আসে। তার মানে এটা নয় যে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ হলেই চারিদিকে ডায়মন্ড ছড়িয়ে পড়বে।

কারণ এই ডায়মন্ডগুলো ভূপৃষ্ঠের উপরে এসে গাজরের মত শেপের কেমবার লাইটের পাইপ তৈরি করে। যাকে ডায়মন্ড অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে বের করে। তারপর এর মধ্যে হীরার খোঁজ করা শুরু করে। তবে ডায়মন্ড খোঁজা খুব কঠিন কাজ। কারণ যে অবস্থাতে এই ডায়মন্ডকে মাটির ভিতরে পাওয়া যায় সেই অবস্থাতে একে কেউ ডায়মন্টি বলবে না। এ জন্যই হয়তো মানুষ বলে যে, হীরের আসল পরিচয় জহুরী করতে পারে।

এটা এই কারণে বলা হয় যে, সেই সময় পর্যন্ত ডায়মন্ড শুধুমাত্র একটা ট্রান্সফারম্যান্ট পাথরই মনে হয় যাকে কার্বনের সব থেকে বিশুদ্ধ ফর্ম বলা হয়। এ কারণে এই ডায়মন্ডকে যদি ৭৫০ ডিগ্রি টেম্পারেচারে গরম করা হয় তখন ডায়মন্ডটা কার্বন-ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয়ে যায়। তারপর এর দাম আর থাকে না। তবে এই ডায়মন্ডকে খনি থেকে বের করার জন্য তিনটি মেথডকে ব্যবহার করা হয়।

 প্রথম মেথডটি হল এলো ভি এল মাইনিং

এক্ষেত্রে নদী, সাগর, সমুদ্রের তলায় খুদাই করতে হয়। যাতে ঐ জায়গাতে কিংবা কেমবার লাইটের পাইপটি  খোজা যায়। যেটা বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হয়েছে। এই প্রসেসে খুদাই করে কেমবার লাইটের নদী পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। যে কাজটা করতে অনেক সময় লেগে যায়। তবে বিগত সময়ে ডায়মন্ডের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে। এ কারণে খননকারীরা খনন মেশিন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যার সাহায্যে তারা কেমবার লাইটে জমে থাকা ধুলো, মাটির পাথরকে সরিয়ে দেয়।

 আরেকটি মেথড মেরিন ডায়মন্ড মাইনিং

এক্ষেত্রে সমুদ্রের নিচে গিয়ে ডায়মন্ডকে খুঁজতে হয়। যদি পুরনো সময়ের কথা বলা যায় তবে এ কাজের জন্য প্রফেশনাল সাঁতারু ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি এই কাজটাকে একেবারেই সোজা করে ফেলেছে। কারণ এই মেথডে মানুষের জায়গায় ক্রোলারকে ব্যবহার করা হয়। যা উশন ফ্লোর থেকে পাইপের মাধ্যমে নিচের পাথরকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে আসে। পরে শ্রমিকরা ঐ পাথরকে পরিষ্কার করে সেখান থেকে ডায়মন্ড বের করে।

ডায়মন্ড তৈরিতে কোন কোন ধাপ পার করতে হয়

এই প্রসেসটাকে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করা হয়েছে। সবার প্রথম ধাপটি হল ক্রাসিং করা। এই ধাপে কেমবার লাইট ও যে সমস্ত পাথরকে খনি থেকে বের করে আনা হয়েছে সেগুলোকে ভাঙার মাধ্যমে টুকু টুকু করে ফেলা হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ঐ ছোট ছোট পাথরগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয় এবং পরবর্তী ধাপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

তৃতীয় ধাপে জেলির মতো এক ধরনের তরলের মধ্যে পাথরগুলোকে দিয়ে সাইক্লোন মেশিনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যে মেশিনের মধ্যে সব সময় ঘোরানোর ফলে যত ভারি মেটেরিয়াল আছে সেগুলো নিচের দিকে চলে আসে এবং লাইক মেটেরিয়াল গুলো উপরে উঠে আসে। এর পরের ধাপে করতে হয় সবকিছুর রিকভারি। যেখানে সলিউশন থেকে বের হওয়া যতো হ্যাবি মেটেরিয়াল গুলো আছে তার মধ্য থেকে ডায়মন্ডকে বের করে আলাদা করে ফেলতে হয়। তারপর সবশেষে ঐ ডায়মন্ডগুলোকে এসিভিক সলিউশনের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়।

তারপর ওই ডায়মন্ডকে শুকনো করে প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর কাটিং এবং পলিশনের পর ডায়মন্ডগুলোকে গয়নাতে লাগিয়ে দেওয়ার কাজ করা হয়। এভাবে ভারতবর্ষে ৪০০ বছর আগেই ডায়মন্ডের খোজা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর কিছু সময় পর্যন্ত ভারত একমাত্র দেশ ছিল যেখানে ডায়মন্ড পাওয়া যেত।

তবে তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই ডায়মন্ড পাওয়া শুরু হয়ে যায়। এবং এরপর গ্লোবাল মার্কেটে ভারতের হীরার চাহিদা অনেকটা কমে যায়। বর্তমানে ভারতের তিনটি রাজ্য রয়েছে যেখানে ডায়মন্ড পাওয়া যায়। যার মধ্যে হল মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় এবং অন্ধপ্রদেশ। তবে ভারতে শতকরা যত হীরা পাওয়া যায় তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশে ৯০% পাওয়া যায়।

পরীক্ষাগারে ডায়মন্ডক তৈরি

বর্তমানে ডায়মন্ডের চাহিদা এত বেশি এবং টেকনোলজি এত বেশি অ্যাডভান্স হয়ে গেছে যে। বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষাগারেই ডায়মন্ডকে তৈরি করতে পারে। এটি কে সিনথেটিক ডায়মন্ড বলে। এক্ষেত্রে কার্বন এলিমেন্টকে এক জায়গায় রেখে তার উপর প্রচন্ড পরিমাণে উত্তাপ এবং প্রেসার প্রয়োগ করে খুব দ্রুতগতিতেই ডায়মন্ডকে তৈরি করা সম্ভব। নরমালি ন্যাচারালি ডায়মন্ডকে তৈরি করতে যেমন হাজার হাজার বছর সময় লেগে যেত। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডায়মন্ড তৈরি হয়ে যায় ।

বন্ধুরা ডায়মন্ড নিয়ে আজকের এই পোস্টটি আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। ডায়মন্ডের মতো মূল্যবান সম্পদ সোনা যা পৃথিবীর কারেন্সি বলে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা এর মাধ্যমে পৃথিবী বিভিন্ন দেশ পণ্য আদান প্রদান করে থাকে। এমনকি মানুষের কাছেও সোনার অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই সোনা নিয়ে জানতে চাইলে আমাদের পরবর্তী পোস্টটির ফলো করুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।