তথ্য ও প্রযুক্তি

বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত হ্যাকিং এর ঘটনা জানলে অবাক হবেন

বিশ্বের বিখ্যাত হ্যাকিং কোনটি

বিশ্বের বিখ্যাত হ্যাকিং কোনটি! প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই সরকারি বেসরকারি ওয়েবসাইটে হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটছে বর্তমানে।

ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে হ্যাকিং প্রতিনিয়ত বারছে। ব্যক্তি পর্যায় ছাড়িয়ে ইন্টারন্যাশনাল বা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোন দেশের হ্যাকাররা সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হ্যাকার তালিকায় শীর্ষে কারা।

বিশ্বে ঘটে যাওয়া এরকমই কিছু ঘটনা আলোচনা করব আজকের এই পোস্টে। সেই সঙ্গে আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানো হবে হ্যাকিং প্রতিরোধ করতে ব্যক্তি পর্যায়ে কি কি করতে হবে। তাহলে চলুন শুরু করি।

হ্যাকিং কি

কম্পিউটার বা কোন ওয়েবসাইট হ্যাকিং এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অনুমোদন ছাড়াই একটি সিস্টেমে প্রবেশ করে সেটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া। অর্থাৎ সমগ্র প্রোগ্রামটি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসা। তবে সকল হ্যাক কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয় না।

এই যেমন হোয়াইট হ্যাকাররা সাইবার সিকিউরিটি বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং পরীক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তারা মূলত সিস্টেমের কোথায় দূর্বলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করেন। আবার ব্ল্যাক হ্যাকাররা অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে কাজ করে। আবার এরকমও কিছু হ্যাকার রয়েছে যারা দুই উদ্দেশ্যেই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে হ্যাকিং এর কাজ করে।

 হ্যাকিং এর কারণে বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহককে প্রতিবছর ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয় এই হ্যাকিং প্রতিরোধ করার জন্য। তথ্য সুরক্ষা নিরাপত্তা এবং সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক ম্যাগাজিন সিপিও এর মতে ২০১৯ সালের পর প্রতি বছরে সাইবার হামলা ও হ্যাকিং এর কারণে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে।

সাইবার অপরাধের বেশিরভাগ সমস্যা বা হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। যেই ইন্টারনেট ছাড়া আমরা এখন প্রায় অচল বলা যায়। আবার এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে একদম অপেশাদার হ্যাকাররাও কোনরকম খরচ ছারাই অনলাইনে তাদের প্রশিক্ষণ ও হ্যাকিংয়ের সব ধরনের সরঞ্জাম সহজেই খুঁজে পাচ্ছে।

সময়ের সবচেয়ে বড় হ্যাকিং

২০০০ সালে ১৫ বছর বয়সী মাইকেল ক্যালস ওরফে মাফিয়া বয় সাইবার স্পেসে দুষ্টুমি করতে গিয়ে আক্রমণ করে বসেন। কানাডার একটি স্কুলে পড়ার সময় সে বছর হাই প্রোফাইল বাণিজ্যিক ওয়েবসাইটে ডিডোস অ্যাটাক করে বসে মাইকেল ক্যালস।

এমাজন, সিএনএন, ইবাই এবং ইয়াহু সহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে এই সাইবার হামলায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুযায়ী সেই হামলায় ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১২০ কোটি ডলার।ক্যালসকে আটক করা হলেও যেহেতু সে কিশোর ছিল তাই উন্মুক্ত হেফাজতে আট মাসের সাজা দেওয়া হয় তাকে।

সৌদি অ্যারামকো সাইবার হামলা

২০১২ সালে ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটে সৌদি আরবে দেশটির বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সৌদির অ্যারামকোর ওয়েবসাইটে।

সামুন নামের একটি ভাইরাস দিয়ে হামলা চালানো হয়। যে কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেই হামলায় সাইবার অপরাধীরা কম্পিউটারের ৩০ হাজার ডেটা ধ্বংস করে দেয়। যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তথ্য গায়েব হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানির কার্যক্রম।

সেইসময় নগদ অর্থের উপর সীমিত প্রভাব পড়লেও এই সাইবার হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় হ্যাকিং আমাদের পৃথিবীর জন্য কতটা ভয়াবহ এবং বিপদজনক হতে পারে। ঐ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট ইরানকে দায়ী করলেও ইরান তা অস্বীকার করে।

ইয়াহু এর ৩০০ কোটি গ্রাহকে তথ্য ফাস

২০১৩ এবং ১৪ সালে পরপর দুইবার হ্যাকিং এর শিকার হয় এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় ইন্টারনেট জায়ান্ট ইয়াহু। সাইবার এটাকে হ্যাকিং এর শিকার হয় ৩০০ একাউন্ট। হ্যাক করা একাউন্টের মধ্যে yahoo, yahoo ফ্যান্টাসি, টেমলার, ফ্লিকারও রয়েছে।

২০১৩ সালের হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা প্রথম ইয়াহুর নজরে আসে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এর প্রায় এক মাস আগে ২০১৪ সালে সাইবার হামলায় ইয়াহুর ৫০ কোটি অ্যাকাউন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে খবর প্রকাশ্যে আসে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৩ সালের সাইবার হামলার প্রমাণ পায় ইয়াহুর প্যারেন্ট কোম্পানি ভেরাইজন।

যুক্তরাষ্ট্রের তেলের পাইপে সাইবার হামলা

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তেরের পাইপলাইন সিস্টেম সাইবার হ্যাকিং এর শিকার হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের তেল অবকাঠামোর সবচেয়ে বড় সাইবার হামলা বলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের পেট্রোল পরিবহনে কাজ করে, কোলনিয়াল পাইপ লাইন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেমে মেলুয়ার দিয়ে হামলা করা হয়।

যে কারণে পাইপলাইনটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য মার্কিন গোয়েন্দা    সংস্থার সঙ্গে কাজ করলেও বিটকয়েনের মাধ্যমে হ্যাকারদের প্রায় সাড়ে চারশ কোটি ডলার দেয় ক্লোরিয়াল পাইপ লাইন। এর পরও সিস্টেমটি পুনরায় চালু করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

 বিশ্বের ভয়ংকর সব হ্যাকার

এ সময়কার সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ ও ভয়ংকর হ্যাকার কেভিন মিটনিক। ১৯৮০ সালে মটোরোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরবর্তীতে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নর্থ আমেরিকান অ্যারও স্পেস সেন্স কমান্ডের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করেন এই হ্যাকার। বর্তমানে তিনি কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

মার্কিন গোপন নথি থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের গোপন তার বার্তা প্রকাশ করায় বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় আসে মি ক্লিপ এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসান। তিনি নিজেও একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার তাকেও বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক হ্যাকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়এছাড়া ব্লাদিমির লেডিন, মাইকেল ক্যালস, গ্যারি ম্যাকিননও রয়েছেন এই হ্যাকিং এর তালিকায়।

হ্যাকারদের কবল থেকে সুরক্ষার উপায়

ব্যক্তি পর্যায়ে হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষার জন্য প্রযুক্তিবিদরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন তা হল, শক্তিশালী এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, লগইনের জন্য মাল্টি ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সেট করা, অ্যান্টিভাইরাস এবং এন্টিম্যাল্যার সফটওয়্যার ইনস্টল করা, সন্দেহ জনক ইমেইল সম্পর্কে সতর্ক থাকা, প্রয়োজন ছাড়া কোন অনলাইন প্লাটফর্মে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা, পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করা, কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফেলে দেওয়ার আগে ভালোভাবে সকল ডেটা ইমুতে ফেলা।

আর এভাবেই আপনি যদি চান তাহলে খুব সহজে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আপনি সচেতন হতে পারেন এবং হ্যাকারদের থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। তবে এর পরেও সাইবার সিকিউরিটি বর্তমান বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে ।আর সে কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে ছাড়িয়ে দেশের যে অথরিটি বা সরকার প্রধান রয়েছেন তাদেরকেও এই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।