শিক্ষা

আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে কেন ২৪০ টুকরোয় ভাগ করা হলো

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন কত! আলবার্ট আইনস্টাইন দুনিয়ার মেধাবী মানুষের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। এতটাই প্রতিভাবান ছিলেন যে এক হাজারের বেশি বিজ্ঞানির কাজ একাই করতে পারত তার মস্তিষ্ক দিয়ে।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন কত

যে জিনিস আমরা সাধারণ মানুষ বোঝা তো দূরের কথা কখনো ভাবতেই পারিনি। সেই বিষয়গুলো নিয়েই আইনস্টাইন কাজ করতেন এবং পুরো দুনিয়ার কাছে দুর্বোধ্য জিনিসগুলোই সহজ করে উপস্থাপন করতেন। নিশ্চয়ই জানেন পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন থিওরি অফ রিলেটিভিটি E=mc2 সুত্রের আবিষ্কারক।

ফটো ইলেকট্রিক নীতি তার ঐ উদ্ভাবন। যেসব তথ্য দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এসব অবদানই এনে দিয়েছিলো নোবেল পুরস্কার। আশ্চর্য চিন্তাশক্তি আর বোধশক্তির কারণে লোকজন মনে করে আইনস্টাইনের ব্রেইন অনন্য সাধারণ ছিল। আর সাধারণ মানুষের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। ব্যাপারটা আইনস্টাইনও বুঝতে পেরেছিলেন। এজন্যই তিনি চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর তার শরীর নিয়ে যেন কোন গবেষণা না করা হয়। বরঞ্চ তিনি এরকম নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যেন মৃত্যুর পর তার সৎ দাহ করা হয়।

প্রিন্সটন হাসপাতাল

কিন্তু আইনস্টাইন যা ভয় পেয়েছিলেন তাই ঘটেছিল। ১৯৫৫ সালের ১৩ই এপ্রিল প্রিন্সটন হাসপাতালে যখন আইনস্টাইন মারা যান তখন ময়নাতদন্তের জন্য যে ডাক্তার এসেছিলেন তিনি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি করেন। আসলেই আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ভিতরে কি এমন আছে, আর সবার মতই ঐ ডাক্তারও এ নিয়ে ভীষণ কৌতুকহল ছিলেন।

সেই ডাক্তারের নাম ছিল থমাস হারভী। কয়েকদিন পর যখন প্রিন্সটন হাসপাতালে নজরে বিষয়টি আসে তখন তারা হারভীকে বরখাস্ত করে। কিন্তু ডাক্তার হারভী আইনস্টাইনের ছেলে হ্যান্ড আলবার্টের কাছে বাবার ব্রেন নিয়ে গবেষণার অনুমতি চান। ডাক্তার হারভী প্রথমে সম্পূর্ণ ব্রেনের সব অ্যাঙ্গেল থেকে কিছু ছবি তুলে নেন। এবং তারপর ব্রেন টিকে ভাগ করে ফেলেন ২৪০ টি ব্লকে। পরবর্তীতে ব্রেনের আলাদা আলাদা অংশের কথা মাথায় রেখে এই ব্লগ থেকে এক হাজারেরও বেশি স্লাইট তৈরি করেন তিনি। এরপর এই স্লাইটগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে বাক্স বন্দী করে পাঠিয়ে দেন পুরো পৃথিবীর নানা দেশের গবেষকদের কাছে।

আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণা

১৯৮৫ সালে আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে অসংখ্য গবেষণা পত্র প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আইনস্টাইনের ব্রেনের সাথে সাধারণ মানুষের ব্রেইনের ভিন্নতা প্রমাণিত।

সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা পাওয়া যায় মস্তিষ্কের করপাস নামক অংশে।মানুষের মস্তিষ্ক দুই ভাগে বিভক্ত মানুষ যে কাজ করে প্রথমে তার একটা অংশ ব্রেনের মধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করে। আর ব্রেন থেকেই শরীরের সিগনাল ছড়িয়ে পড়ে। ব্রেনের বাম অংশ আমাদের শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আর ব্রেনের ডান অংশ আমাদের শরীরের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও শরীরের বাম অংশ কথা বলা, লেখা, গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। আর ডান অংশ সৃজনশীলতা, শিল্পকলা, সংগীত এসব স্কেল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আপনি হয়তো ভাবছেন এসবের মাঝে করপাসের কাজ কি?

আইনস্টাইনের করপাসের ভিন্নতা

যখন আমাদের ব্রেনের ডান অংশ কোন ভুল করে তখন তা সংশোধনের জন্য ব্রেনের বাম অংশ থেকে সংকেত আসে। আর এই সংকেত আদান-প্রদানের কাজটাই করে থাকে করপাস। আইনস্টাইনের করপাস সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকটাই বড় ছিল। অর্থাৎ তার মস্তিষ্কের দুই অংশের মাঝের যোগাযোগ ব্যবস্থার ছিল বেশ মজবুত। যার ফলে একই সময়ে অনেকগুলো জটিল বিষয় চিন্তা করতে পারতেন তিনি।  আইনস্টাইনের ব্রেইনে সেলিব্রাল করটেস্ট মস্তিষ্কের বাকি অংশগুলোর চেয়ে অনেক পাতলা ছিল এবং এই পাতলা অংশের নিউরনের ঘনত্ব ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে তার গাণিতিক দক্ষতা ছিল অদ্ভুত। এমনকি জটিল গাণিতিক সমস্যা তিনি কাগজ আর কলম ছাড়াই সমাধান করতে পারতেন।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন কত

বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক ধরনের জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে। আবিষ্কার হয়েছে নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তি। আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রসিদ্ধ মস্তিষ্ক নিয়ে সামনে আরো গবেষণা হবে। উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষায় আরো অনেক রহস্য।

বন্ধুরা পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে আজকের এই পোস্টটি আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। এরকম বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন এবং বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আপডেট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।