উৎসব

কোরবানির পশুর যত্ন, দোয়া ও নবীজির শরীয়তে মাংস বন্টনের নিয়ম

কোরবানির মাংস ভাগের নিয়ম! আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব ঈদুল আযহা ২০২৪ কিভাবে পশু কোরবানি করতে হয় এবং পশুর মাংস বন্টন করতে হয়।

কোরবানির মাংস ভাগের নিয়ম

আমরা ইতোমধ্যে হয়তো সকলে জেনে গেছি ঈদুল আযহার ২০২৪ এই বছরের ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রতিবছর এ ঈদকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করে থাকে। এ কোরবানির মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় শুধু বান্দার মনের নিয়োত। তাই আজকে আমরা জানবো কোরবানির মাংস বন্টনের নিয়ম, কুরবানীর পশুর যত্ন সহ অন্যান্য সকল অজানা তথ্য তাহলে কথা না বারিয়ে চলুন শুরু করি আজকের পোস্টটি,,,,,,

ঈদুল আযহা ২০২৪ কোরবানির ইতিহাস

আমরা সকলে জানি কোরবানি মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) থেকে এসেছে। এর আগেও বহু নবী ও রাসূল তারাও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করেছে। কিন্তু সর্বপ্রেক্ষাগৃহীত ও পছন্দনীয় কোরবানি হিসেবে আল্লাহতালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর কোরবানিকে গ্রহণ করেন এবং মহানবী (সাঃ) এর উম্মতের জন্য প্রতিবছর কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব করে দেন।

কোরবানি যাদের উপর ওয়াজিব

সারা বছর পরিবারের খরচ মিটিয়ে যদি কোন ব্যক্তির কাছে জিলহজ মাসের ১০-১১ এবং ১২ তারিখ নিছাপ পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তলা রুপা থাকে অথবা এরপর সমপরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা কোন ব্যক্তির কাছে জমা থাকে তাহলে তার উপর কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব।

কোরবানির পশুর বয়স

কোরবানি অর্থ হলো আপনার প্রিয় বস্তু বা পাত্রকে আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করা। যেমনটি আমরা দেখেছি মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহতালা ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে জান্নাত থেকে বিশাল বড় এক উট বা দুম্বা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর কোরবানি দেওয়ার স্থানে প্রেরণ করেন এবং ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে সেই স্থানে  উট বা দুম্বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করেন। আর তখন থেকে জানা যায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে অবশ্যই প্রিয় কোনো বস্তুকে কোরবানি করতে হবে।

এজন্যই আপনি যে কোরবানিটি করবেন সে পশু বা বস্তুটি যেন অবশ্যই উপযুক্ত এবং দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়। নিচে টেবিলের মাধ্যমে কোরবানির পশুর বয়স উল্লেখ করা হলো।

                                   প্রাণী                                  বয়স
গরু ও মহিষ ২ বছর
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ১ বছর
উট ৫ বছর

উপরে উল্লেখিত টেবিলের মধ্যে দুম্বার বয়স যদি ১ বছর না হয় কিন্তু দেখতে ১ বছর বয়সের মত লাগে তাহলেও কোরবানি দেওয়া যাবে।

কোরবানির জন্য পশু কি রকম হতে হবে

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০,১১ এবং ১২ তারিখ অর্থাৎ ৩ দিন ২ রাত সারা বিশ্বের মুসলমানরা কোরবানি দিয়ে থাকেন। আর এ কোরবানির পশু অবশ্যই খুদ বিহীন হতে হবে। নিচে কুরবানী উপযুক্ত পশুর বিবরণ দেওয়া হল।

১/ কোরবানির জন্য অবশ্যই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট এবং দুম্বা এরকম চার পা বিশিষ্ট প্রাণী হতে হবে।

২/ শরীয়তের দৃষ্টিতে পশুর বয়সের দিকটি খেয়াল রাখা জরুরী। যেমন গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছর এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক বছর ও উটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়স হতে হবে।

৩/ কোরবানি যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় এরূপ পশু নির্বাচন করতে হবে অর্থাৎ কোরবানির পশু যেন সকল প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকে। মানে কোরবানি কৃত পশু যেন অন্ধ না হয়, পা খুরিয়ে না হাটে, কানকাটা বা লেজকাটা না হয় এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

কোরবানি কৃত পশুর যত্ন

কোরবানি কৃত পশুকে অবশ্যই ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে এবং কুরবানী দেওয়ার দিন পর্যন্ত তাকে খাদ্য দিতে হবে।  কোরবানি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে পশুটি যেন কোন ভাবে ভয় না পায় এবং পশুটিকে যে স্থানে কোরবানি দেওয়া হবে সে স্থানে সুন্দরভাবে শুয়ে  দিতে হবে এবং বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে কোরবানি দিতে হবে।

কোরবানির আগে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক। অন্যথায় কোরবানিটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

কোরবানির দোয়া আরবি ও বাংলা

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ  إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ  لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ  بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر  اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নি, ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না, সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা, শারিকা লাহু ওয়া বি জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার  আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

জবাই করার নিয়ম জানা থাকলে নিজের হাতে কোরবানির পশু জবাই করা মুস্তাহাব। আর নিয়ম জানা না থাকলে অন্যের দ্বারায় তা সমাধান করতে হবে। কুরবানী পশু জবাই করার সময় অবশ্যই নিজেকে কুরবানীর পশুর সামনে অবস্থান করাতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে,

(ক) শ্বাসনালী (খ) খাদ্যনালী এবং (গ) রক্ত চলাচলের নালিদয় যেন ভালোভাবে কেটে দেওয়া হয়।

কোরবানির পশুর চামড়া

কোরবানির পশুর চামড়া থেকে বিক্রিত অর্থ অবশ্যই গরিবদের মাঝে দান করতে হবে। এছাড়া চাইলেই এই চামড়া দিয়ে নিজের নামাজ পড়ার জায়নামাজ তৈরি করা যেতে পারে।

কোরবানির মাংস বন্টনের নিয়ম

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) এর একটি আছার তিনি বলেন, কোরবানির মাংস পুরোটাই নিজে খাওয়া যাবে অথবা গরিব-দুঃখীদেরমাঝে দান করা যাবে এমনকি পুরো মাংসটাই আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিলিয়ে দেওয়া যাবে। এছারা ইবন মাসঊদ (রা) বলেন, কোরবানির মাংস তিনভাগ করে নিজের জন্য এক ভাগ, গরীবদের জন্য এক ভাগ এবং আত্মীয় স্বজনের জন্য একভাগ দেওয়া মুক্তাহাব। ইসলামের বিভিন্ন স্কোলার গনও কুরবানির মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করে সমানভাবে বন্টন করতে বলেছেন।

আমাদের এই আজকের পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন ঈদুল আযাহায় কিভাবে পশু কোরবানি দিতে হয় এবং মাংস ও চামড়া কিভাবে বন্টন করতে হয়। আশা করি এ অল্প সময়ের মধ্যে এ পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা সকল বিষয়ে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং ইসলাম সম্পর্কে আপনার অজানা সকল বিষয় জানতে আমাদের পেজটি সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।